আজ সোমবার, ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জেফারসনের চলে যাওয়া

ক’দিন ধরে জেফারসনের আচরণ খুব বেশি সুবিধার ঠেকছে না। কী হয়েছে তার? সে পশ্চিমা উন্নত দেশের মানুষ। বন্ধুত্বের মূল্য দিতে অজপাড়াগাঁয়ে এসে আমাদের এ কুঁড়েঘরে উঠেছে। তার রাজকীয় চেহারা ভূষণ অথচ ন্যূনতম অরুচি দেখায়নি। হাসি খুশিতে মেতে থেকেছে বিগত প্রায় একটা মাস। আরো সপ্তাহ দুই তার এখানে থাকার কথা। ধীরে ধীরে আমাদের পরিবেশের ওপর কোনো কারণে বিরূপতা জন্মাচ্ছে কি? সেদিন সন্ধ্যায় বললাম- কী বন্ধু, ক’দিন ধরে দেখছি তুমি খুব বিষণ্ন। খাওয়া-দাওয়া, গোসল কোনো কিছুই ঠিকঠাক মতো করছ না। কী হয়েছে তোমার?

জেফারসনের কপালে মৃদু ভাঁজ খেলে যায়। তার নীল চোখে বিষণ্নতা আরো বেশি ঘনীভূত হয়। তবু সে ঠোঁটের কোনায় বাঁকা হাসি টেনে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টায় বলল- ও কিসু না বনঢু, সব ঠিক হইয়া যাইবে গা।

ও কে। সব ঠিক হলেই ভালো। তোমাকে নিয়া বেশ চিন্তায় পড়েছি। দূর দেশের মানুষ তুমি। ভাবছি এখানে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছ কি-না।

ক্ষটি? সে একডম মিট্ঠা কঠা। আমার কোন ক্ষটি হইটেছে না। এমনিটে একটু ব্যাকুল আসি। টবু আমি বালো আসি। আমাকে নিয়া একডম চিনটা করিবে না।

ওকে, তুমি ভালো থাকলেই ভালো।

জেফারসন হঠাৎ দাঁড়িয়ে হন্ হন্ করে হাঁটা ধরে। বললামÑ জেফারসন, কোথায় যাচ্ছ এই ভর সন্ধ্যায়?

ওই যে ওই ডিকটায় একটুু ঘুরে আসিব। ওডিকে মাত্র সূর্য অসট গেসে। ওই ডিকেই টো আমার ডেশ।

ও…, দেশের কথা মনে পড়েছে তাহলে? আমি কি আসব তোমার সাথে?

ডরকার হইবে না। একা একা যাইটে চাই। সেই উট্টম।

ওকে, সাবধানে যেও। অন্ধকারে হাঁটার অভ্যাস নাই। বিড় বিড় করলাম আমি।

দেখলাম, জেফরসন দ্রুত গতিতে হাঁটছে। ওদিকে খোলা প্রান্তর। বাড়িঘর মোটে নেই। প্রান্তর শেষে বিস্তৃত বালুচর। তারপর প্রমত্তা নদী যমুনা। ভাবলাম, যাক। কিছুদূর গিয়ে আপনা থেকে ফিরে আসবে। যে অন্ধকার আজ পড়েছে! কতক্ষণ আর হাঁটতে পারবে? কিছু দূর হাঁটার পর সে সম্ভবত কারো মুখোমুখি হলো। কিছু কথাও যেন হলো দুয়ের মধ্যে। শীঘ্রই বিচ্ছিন্ন হলো তারা। সে চলতে লাগল ওদিকে।

এদিকে আসছিল অন্যজন। তার অবয়ব মোটামুটি কাছাকাছি এলে বললাম, কে? সে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল- ভাইজান, আমি জালাল মিঞা। বললাম- কী জালাল মিঞা, ওদিকে জেফারসনের সাথে কী কথা হলো? কী বলল সে তোমাকে? জালাল মিঞা অস্বাভাবিক ধরনের চেঁচিয়ে বলল- হ্যায় কি আর কইব, ভাইজান। কইল, হ্যার মন নাকি খুব উতলা আছে। কয়দিন ধইরা কিছুই নাকি ভালো লাগে না। তাই খোলায় হাঁটতে যাইতাছে। কী জানি ভাইজান, বিদ্যাশি লোক; তার মতিগতি কেঠায় বুঝে?

আচ্ছা জালাল মিঞা, জেফারসন লোকটাকে তোমার কেমন লাগে? গত এক মাস ধরে তো দেখছ তাকে।
ভাইজান, লাগেত ভালোই। তয় মানুষ সে বিদ্যাশি। বিদ্যাশি গো কায়কারবারই তো আলাদা। কত আর ভালো লাগব। ভিন সমোসকিতির মানুষ তারা। চয়চরিত্রও ভিনতর।

আইচ্ছা ভাইজান, আমি যাই গিয়া। আসসালামু আলাই কুম।

ওয়ালাইকুম আস্সালাম।

জালাল মিঞা পা তোলে। অতি দ্রুত ঘন অন্ধকারে মিশে যেতে থাকে। আমি ভাবনায় ডুব দিই। জেফারসন সম্পর্কে কী বলতে চাইল জালাল মিঞা? সে ডুবে ডুবে পানি খাচ্ছেÑ কী এসব কথার অর্থ? কোন রহস্য দানা বেঁধেছে তাকে ঘিরে? জেফারসনদের দেশে আমি তাদের নিজস্ব কোম্পানির একজন সাধারণ শ্রমিক। স্বল্প শিক্ষিত হলেও আমার চেহারা ছবি মোটামুটি ভালো। উঁচু-তীক্ষè নাক; ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙ। এর বদৌলতে বিদেশের মাটিতে একটু এক্্রট্রা মূল্যায়ন পাই। জেফারসনের সাথে আমার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এটা একটা ফ্যাক্টর।

বন্ধুত্বের সূত্রে ছুটিতে ওকে দেশে নিয়ে এসেছি। বাড়িতে রেখেছি ঠিকই। কিন্তু গত এক মাসে ওকে তেমন একটা সময় দেয়া হয়ে ওঠেনি। বলতে গেলে ও প্রায় একাই দিন কাটায়। কিছু গানের ক্যাসেট কিনে দিয়েছি। টেপ রেকর্ডারে তাই শোনার কথা।

আমি দিন রাত হন্যে হয়ে ঘুরছি জায়গায় জায়গায়। ব্যাংকে ব্যাংকে টাকা জমা উত্তোলন করছি। কখনোবা ব্যবসায়িক পার্টনার খুঁজছি। ছোট ভাইদের দিয়ে দেশে একটা ছোটখাটো শিল্পকারখানা দাঁড় করিয়ে যাবো- এই পরিকল্পনা। বিয়ের কাজটাও এবারেই সেরে যাওয়ার কথা আছে। কিন্তু সে আলাপ এখন পর্যন্ত উত্থাপন করার সুযোগ হয়নি।

যাকে মনে মনে পছন্দ করে রেখেছি তাকে কিংবা তার পরিবারকেও কিছু জানানো হয়নি। দূর থেকে খোঁজখবর রেখে আসছি দীর্ঘ দিন। সে মুক্ত বিহঙ্গ। কারো সাথে কোনো বন্ধনে জড়ায়নি। আমি প্রস্তাবনা করলে সে কিংবা তার পরিবার তা সানন্দে মেনে নেবে; খুবই স্বাভাবিক। আগে কারখানার গোড়াপত্তনটা করে নেয়া যাক তারপর শেষের দিন পনেরতে তা সেরে নেয়া যাবে। সেই ভাবনায় রয়ে গেছি।

আমার এসব ব্যস্ততার ফাঁকে আসলে কী করছে জেফারসন? কিভাবে সময় কাটাচ্ছে? তার ডুবে ডুবে পানি খাওয়া বলতে কী বুঝিয়ে গেল জালাল মিঞা? সে উন্নত দেশের ধনাঢ্য ঘরের সন্তান। এ অনুন্নত এলাকায় এসে নেতিবাচক কী এমন করবে সে? মাথায় আসছে না আমার কিছু।

দুশ্চিন্তা আর ঔৎসুক্য নিয়ে সেদিকে যাই, জেফারসন যেদিকে গেছে। সম্ভবত অমাবস্যার তিথি আজ। এরই মধ্যে ভীষণ অন্ধকার জমেছে। এই বিদঘুটে অন্ধকারে জেফারসন ঘণ্টা দুই খোলায় হাঁটবে তার হেতু কী? আর খোলা বলতে এখন সে নিবিড় খোলা আর নেই। খোলাজুড়েই নলখাগড়া, ঢোল কলমি, আঁকড়া জাতীয় ছোট বড় গাছগাছড়া উঠেছে। এর ফাঁক দিয়ে সে জমাটপুঞ্জ অন্ধকারে হেঁটে বেড়াবে তার অনভ্যস্ত রক্তাভ-সাদা কোমল পায়ে? কী ব্যাপার আসলে?

খোলায় এসে দুরু দুরু বুকে দাঁড়িয়ে রইলাম। দৃষ্টি ঘুরাচ্ছি চারদিকে। অন্ধকারে এমন কোনো অবয়ব চোখে পড়ছে না যাকে জেফারসন বলে ধরে নিতে পারি। যতদূর পারি হেঁটে হেঁটে অনুসন্ধানী দৃষ্টি রাখলাম। নাহ! এখানে জেফারসন কেন; কোনো গ্রাম্য রাখালেরও আসার কথা নয়। হতাশ মনে ফিরতি পথ ধরি। ভাবছিলাম ভাগ্যক্রমে এখানেই যদি জেফারসনকে পেয়ে যেতাম, তবে জিজ্ঞাসাবাদে কৌতূহলটাকে তাৎক্ষণিক মিটিয়ে ফেলতে পারতাম। কিন্তু তা আর হলো কোথায়? বিষণœ মনে হাঁটতে থাকি। এখানে সরু পথের বাঁক। ডানে মোড় নেব এরই মধ্যে বাঁদিকে বেশ একটু দূরে শেয়াল ডেকে উঠলে চমকে সেদিকে ঘাড় ঘুরে যায়। একটা আলো জ্বলে ওঠার সাথে মেয়েলি মিষ্টি কণ্ঠও কানে ভেসে এলো : এই সব খারাপ জিনিস না খেলে হয় না? ওদিক থেকে সিগারেটের গন্ধ ভেসে আসে।

এইটা একদম মামুলি। জেফারসনের কণ্ঠ। আমি হতবাক দাঁড়িয়েছি। গা শিউরে উঠছে। বুকেও কাঁপন।

দেশে বুঝি আরো খারাপ কিছু খাও? খারাপ কিছু খেলে কিন্তু আমি যাব না। গেলেও চলে আসব দেশে।

কঠা ডিচ্ছি ডেশে গিয়া আর এক ডিনও খারাপ কিসু খাইবে না। একডম ছাড়িয়া দিবে। এই যে এখন কিসু খাই না।

সেইটাই ভালো। অনেক ভালো।

টোমার বালোবাসা আরো বালো। আমি টোমায় কোন ডিন ভুলিবে না। চির ডিন মনে রাখিবে। তার মানে? আমাকে কোনো দিন ভুলবে না মানে আমাকে রেখে চলে গিয়ে আমার কথা শুধু মনে মনে স্মরণ করবে? আমাকে তোমার দেশে নিয়ে যাবে না। এই তোমার ভালোবাসা?

আহা এটো উটলা হোসছো কেনো? টোমাকে টো বলেসি আমি টোমাকে অনেক বালোবাসি। টোমাকে ছাড়া আমি বাঁচিবে না। নিশ্চয় টোমাকে বিবাহ করিয়া ডেশে লইয়া যাইবে। টবে একটু সময় ডরকার হইবে। আমাকে বিশ্বাস না করিলে আমি খুব ব্যাঠা পাইবে। আ’ লাভ উ্য টু মাচ। উ্য মাস্ট বি মাই ওয়াইফ। আ’ রিয়েলি লাভ উ্য, নাডিরা। টুমি ব্যাঠা ডিলে চিরটরে ডুরে চলিয়া যাইবে। টুমি টখন শুঢু টোমাডের ওই কবির গান শুনিবে; আমি চিরটরে ডুরে চলিয়া যাইবে, টবু আমারে ডিবে না ভুলিটে…।

আই লাভ ইউ ঠু। নেভার ফরগেট। নাদিরার কণ্ঠ

অন্ধকারে দাঁড়িয়ে প্রায় মিনিট বিশেক পার হয়ে গেল। কিছুই যে মেলে না। আমি গত ক’বছর ধরে নাদিরাকে নিয়ে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখছি। স্বপ্ন একান্তই আপন মনোজগতের। নাদিরাকে কিছু জানানো হয়নি। প্রয়োজন মনে করিনি। ব্যাপারটা তাই একতরফা। ওকে আশৈশব দেখে আসছি। বরাবর ভালো লেগেছে। চিরতরে নিজের করে নিতে স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু সত্যিকারে প্রেম-ভালোবাসা বলতে যা বোঝায় তা কি বেসেছি? যদি না বেসে থাকি তবে আজ এক্ষুণে এতটা খারাপ কেন লাগছে? এভাবে বুক ধরে আসছে কেন? পরাজয় বোধ কেন নিমিষে শূন্যতায় বুঁদ্ করে দিতে চাইছে? দীর্ঘ দিনের অশ্রুহীন চোখে অশ্রুর ধারাইবা ছুটছে কেন? নাদিরা আমার কবে কে ছিল, এখনইবা কে? তবে এমন লাগছে কেন?

আমি জেফারসনদের কোম্পানির একজন সাধারণ শ্রমিক। তদুপরি ও আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বটে। হয়তো নাদিরাকে বিয়ে করে কিংবা কোনো কায়দায় ওকে নিয়েও চলে যাবে। ও জানবে না কোনো দিন আমার মনের কথা। আমি জানব : শুধু একা। তারপরও কি বিদেশে গিয়ে আমি ওদের কোম্পানিতে চাকরি করব? অন্য কাউকে নিয়ে ঘর বাঁধব? ওদের কোম্পানি ছেড়ে দেব? দূর দেশে একটা ভালো কাজ জোটানো কত যে কঠিন! কিছুই ভাবতে পারছি না আমি। ভাবতে ভালোও লাগছে না। শ্রান্ত অবসন্ন ঘরের উদ্দেশে পা ফেলি। ও দিকে চাপা কণ্ঠে শুনি : উনি যদি সব বলে দেন?

সে ভালো বনঢু আছে। বলিবে না কিসু। তুমি নিশ্চিট থাকো।

ঘরে ফিরে অন্ধকার খাটে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকি। অব্যক্ত যন্ত্রণায় ছটফট করি। এরই মধ্যে যেন অন্য কোনো মানুষ অজান্তে ঢুকে পড়েছে আমার ভেতরে; যার দ্বারা পৃথিবীর কোনো কাজই আর সম্ভব নয়। কারখানা স্থাপনের স্বপ্ন, বিদেশ ফিরে কাজে যোগদানের স্বপ্ন, নতুন জীবনের স্বপ্ন, মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সবই কেমন ফিকে হয়ে গেছে। চোখ বুজে বিছানায় মুখ গুঁজি। তখনই বার আঙ্গিনায় জোরালো পায়ের শব্দ শুনতে পাই। ঘরের দিকে দৌড়ে আসছে কেউ; হাঁপানোর শব্দ কানে উঠছে। নিমেষে ঘরের ভেজানো দরজায় ধাক্কা পড়ে সশব্দে ফাঁক হয়ে গেল তা। বললাম কে? সাড়া শব্দ এলো না। ধড়মড় করে উঠে বসে লাইটার জ্বালি। এ কী? জেফারসনের এ অবস্থা কেন? কারা করল তার এ অবস্থা? কপাল কেটে রক্ত ঝরছে। হাতের কবজিতে রক্ত। চোখ মুখ ফোলা। টেবিলের মোমে আগুন জ্বেলে খাট থেকে লাফিয়ে নামি। এগিয়ে যাই। বলি- এ কী, জেফারসন? কী হয়েছে তোমার? কি করে এমন হলো?

জেফারসন হাতের জোরালো ধাক্কায় সরিয়ে দেয় আমাকে। বলে ডোন্ট টাচ্ মি ফারদার। লিভ মি এ্যালোন, মেহমুড, প্লিজ।

বাট হোয়াট হ্যাপেনস টু ইউ?

ও ডোন্ট ডিস্টার্ব মি, প্লিজ। ইউ কান্ট বি অ্যা ফ্রেন্ড টু মি। উ্য সেলফিস ট্রেচারার। আ’ হেইট উ্য।

আমি এগিয়ে গেলে আবারো জোরালো ধাক্কায় সরিয়ে দেয় জেফারসন। চেয়ার থেকে উঠে ওপাশের খাটে গিয়ে শোয়।

আমি বারবার অসংখ্যবার নানা কথায় বোঝাতে চাই আমি কোনো ট্রেচারার নই। সে শুধু চুপ করে থাকে। আমার একটি কথারও জবাব দেয় না। এরই মধ্যে পেছনের বাড়িতে হাঙ্গামা শুরু হয়েছে। মুহুর্মুহু ভেসে আসছে নাদিরার বাবা ভাইদের অকথ্য গালাগাল। মেয়েকে কেটে গাঙ দিয়ে ভাসাবে তারা; তবু কোনো চরিত্রহীন বিদেশীর কাছে নয়। আমাকেও ছাড়ছে না তারা। বিদেশে গিয়ে বদ হয়ে আমিই নাকি ওইসব বদ নাটকের কুশিলব হয়েছি। সবই নাকি আমার কারসাজি; তাদের মান মারার সুকৌশল ফাঁদ। কাঁচা টাকা কামিয়ে আগা ঠ্যাংয়ে তেল হয়েছে আমার; পাল্লায় তাদের ওপরে উঠতে চাই বলেই সম্মান ধরে টান দিয়েছি তাদের প্রভৃতি।

জেফারসন ঘুমিয়ে গেলে তুলা স্যাভলনে তার ক্ষত মুছে একসময় নিজেও বিছানায় গা এলিয়ে দেই। সহজে ঘুম নামে না চোখে। রাজ্যের যত দুশ্চিন্তা ভর করেছে মাথায়। ভাবতে ভাবতে সম্ভবত ভোররাতের দিকে তন্দ্রাচ্ছন্ন হই।

ভোরে চোখ মেলে প্রথমেই জেফারসনের শূন্য খাট দৃষ্টি কাড়ে। তারপর খোলা দরজা। দেয়াল হ্যাঙ্গারে ওর কোনো কাপড় চোপড় চোখে পড়ে না। খাটের কোনায় নেই ওর লাগেজটাও। তবে কি জেফারসন আমাকে না জানিয়ে চলে গেছে? ধড়মড় করে উঠে পড়ি। চারদিকের আবহ আমাকে স্পষ্টত জানিয়ে দেয় জেফারসন আমাকে না জানিয়ে বিদায় নিয়েছে। হয়তো ঢাকায় গিয়ে কোনো হোটেলে উঠবে। তারপর চলে যাবে।

আজ ১৪ মার্চ, ২০১৪। বিকাল ৩টা ৪০ মিনিট। মাথার ওপর দিয়ে একটি উড়োজাহাজ উড়ে গেল। ঢাকা থেকে এসেছে ওটি। সম্ভবত ওটিতে করেই ফিরতি টিকিটে জেফারসনের সাথে আমার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। জেফারসন চলে যাওয়ার পর থেকেই আমি গুরুতর অসুস্থ। শরীর মন কোনোটাই আর বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে টানেনি। আমার যাওয়া হয়নি। জেফারসন একা যাচ্ছে। মূক হয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছি।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ