আজ বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গুরুর মতো শিষ্যের পরিণতি!

সংবাদচর্চা রিপোর্ট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ -১ ( রূপগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান। তিনি ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকেটে দুইবার অংশ নিয়ে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের কাছে পরাজিত হয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে কাজী মনিরুজ্জামানের পক্ষে কাজ করে তাকে বিজয়ী করতে পারেনি। সেই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানের শিষ্য তারাব পৌর বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন। তিনি কাজী মনিরুজ্জামানের সমর্থনে ২০১৫ সালে তারাব পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ৫ হাজার ৯শ ৪৪ ভোট। তাকে ৩৩ হাজার ৮শ ৭৭ ভোটের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে তারাব পৌরসভার প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন রূপগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাছিনা গাজী । হাছিনা গাজী তারাব পৌরসভার দায়িত্ব নিয়ে গত বছরে তারাব পৌরসভাকে ডিজিটাল এবং ঋণমুক্ত করেছে। পৌর এলাকার রাস্তা ঘাট পাকা করেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেছেন। গন্ধর্বপুরে পানি শোধনাগার স্থাপন হয়েছে। পৌরবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরবান হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে। ৫০০ শত আসন বিশিষ্ট হাছিনা গাজী পৌর অডিটোরিয়াম নির্মাণ কাজ চলছে। সাধারণ জনগণের উপর তিনি কর আরোপ করেন নাই। এসকল উন্নয়নে গতবারের চেয়ে এবার হাছিনা গাজীর জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ ও এর সকল সহযোগী সংগঠন হাছিনা গাজীর পক্ষে একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছেন। অপর দিকে রূপগঞ্জ উপজেলা এবং তারাব পৌর বিএনপি ও এর সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সক্রিয় নেই। তাদের মধ্যে চরম কোন্দল রয়েছে। সেই অবস্থায় দ্বিতীয়বার মতো মেয়র প্রার্থী হয়েছেন আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন। দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। কিছু দিন আগে কাজী মনিরুজ্জামানের সাথে নাসির উদ্দিনের দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিলো। তখন গুরুকে অভারটেক করে নাসির উদ্দিন পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করেছিলেন। তারপর কাজী মনিরুজ্জামানের সমর্থকরা নাসির উদ্দিনের বহিস্কার দাবি করেছিলেন। এবার কাজী মনিরুজ্জামান তাকে সমর্থন করবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। সাংগঠনিক দিক দিয়ে হাছিনা গাজীর চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে নাসির উদ্দিন। করোনাকালে বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী ও তার গুরু কাজী মনিরুজ্জামানকে তারাব পৌরবাসীর পাশে এসে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। সে দিক দিয়েও তিনি পিছিয়ে রয়েছেন। হাছিনা গাজীর বিশাল নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। বিশেষ করে মহিলা আওয়ামী লীগ ,যুব মহিলা লীগ নেতাকর্মীরা হাছিনা গাজীকে নৌকায় ভোট দিতে নারী ভোটারদের উৎসাহিত করছে। যেটা বিএনপির প্রার্থী নাসির উদ্দিনের পক্ষে কেউ করতে পারছে না। আর তারাব পৌর মহিলা দল সু সংগঠিত নয়। তাদের কমিটির মেয়াদ শেষ । বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেখা গেছে ভোটে জয়ী হবার মতো কর্মী বাহিনী বা ভোটার নাসির উদ্দিনের নেই। তার গুরুর মতো গাজী পরিবারের কাছে দ্বিতীয়বারের মতো তার পরাজয় অপেক্ষা করছে। গত নির্বাচনে নাসির উদ্দিন যত ভোট পেয়েছিলেন এবার তা পাবেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এবার ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগ করার সুযোগ নেই। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হবে।

প্রসঙ্গত, তারাব পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ৮৫ হাজার ২ শ ৬৯ টি । তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৪ হাজার ১ শ ৫১ জন, মহিলা ভোটার ৪১ হাজার ১শ ১৮ জন। বাছাই ২২ ডিসেম্বর, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৯ ডিসেম্বর। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ ১৬ জানুয়ারি।