আজ শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘গলা কাটা’ আসলে একটা গুজব

সৈয়দ মোহাম্মদ রিফাত
ঘুমাও বাবু তাড়াতাড়ি ঘুমাও, নয়তো গলাকাটা আসবে। না ঘুমালে গলা কেটে নিয়ে যাবে। এক শিশু সন্তানকে ঘুম পাড়ানোর জন্য ধারাবাহিকভাবে একই কথা বলে যাচ্ছেন মা। সদর উপজেলা পূর্ব সস্তাপুর এলাকায় রাস্তার ধারে জানালার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বিষয়টি চোখে পরে এ প্রতিবেদকের।

শিশুকে ঘুম পাড়াতে কেনো এমন ভয় দেখানো হচ্ছে জানতে কথা হয় শিশুর মা ফাহমিদা রহমানের সাথে। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে অনেকেই বলছে যে পদ্মা সেতুর জন্য নাকি মানুষের মাথা লাগবে! সারাদিনধরে এসব কথা শুনতে শুনতে এখন শুধু মুখে এ কথাই আসে। তাই বাবুকে ঘুম পাড়ানোর জন্য গলাকাটার কথা বলেছি।

গুজবভিত্তিক ঘটনা থেকে অপ্রীতিকর অবস্থা; এমনকি গণপিটুনী! প্রচলিত এমন মিথ্যার প্রচারণায় এবার নতুন করে যোগ হয়েছে নির্মাণাধীন পদ্মাসেতুতে মানুষের মাথা কেটে তা ব্যবহারের গুজব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রমসই পদ্মা সেতু নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তি।

মূলত, গত বছর পদ্মা সেতুর ১৪টি পিলারের নকশা নিয়ে অনিশ্চতা তৈরি হয়েছিলো। সেসময় নদীর মাটির স্তরের ভিন্নতার কারণে সেতুর ১৪টি পিলারের নকশা চূড়ান্ত করা যায়নি। আর ঠিক তখন থেকেই শুরু হয় নানা গুজব। পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞরা মাটি পরিক্ষার পর কাদাঁমাটির শেষে শক্ত মাটি না পাওয়ায় সেতুর ১৪টি পিলারের মধ্যে পাইলের সংখ্যা একটি করে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। ইতিমধ্যেই অনিশ্চতা কাটিয়ে সেই ১৪টি পিলারের কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। অথচ, থামেনি মানুষের গুজব। বেশ কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক এ নিয়ে সরব। অনেকের ইনবক্সে সতর্ক থাকতে ম্যাসেজ পাঠাচ্ছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ নিজের একাউন্টে স্যাটাস দিয়ে ছড়াচ্ছেন বিভ্রান্তি। বিভিন্ন গ্রুপ ও অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়ানো হচ্ছে এসব গুজব।

জেলার বিভিন্ন জায়গায় যেকোন ঘটনা ঘটলেই পদ্মাসেতুতে মাথা লাগানোর জন্য এসব ঘটছে বলে বলা হচ্ছে। কোন কোন এলাকায় অপরিচিত কাউকে দেখলে সেতুর জন্য মাথা সংগ্রহকারী হিসেবে গণপিটুনি দেওয়ার ঘটনা ঘটছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ পরিচালনায় মানুষের মাথা লাগবে বলে একটি কুচক্রী মহল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এটি একটি গুজব এর কোন সত্যতা নেই। এমন অপপ্রচার আইনত দন্ডনীয় অপরাধ জানিয়ে এ ধরণের গুজবে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান জানিয়েছেন তারা।

যারা পদ্মা সেতু নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার বলে মনে করেন সচেতন মহল। তারা জানান, দেশে অস্থিতিশীলতা ছড়ানোর লক্ষ্যে এমন গুজব রটানো দন্ডনীয় অপরাধ। পদ্মাসেতুতে মানুষের মাথা ও রক্ত লাগার যে গুজব ছড়িয়ে পরছে তা ভিত্তিহীন। আর তাই এমন গুজবে কান না দেয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তারা।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ