আজ সোমবার, ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ক্ষমতায় যেতে মরিয়া বাবু -আজাদ,আতংকে সাধারণ ভোটার

ক্ষমতায় যেতে মরিয়া

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ১২ দিন। গত ১০ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীক পাওয়ার পর থেকে প্রার্থীরা ও তাদের নিকট আত্নীয়স্বজনসহ সমর্থক-কর্মীরা নেমে পড়েছেন প্রচার-প্রচারণায়। নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫ টা সংসদীয় আসনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে আওয়ামী লীগ ও ঐক্যফ্রন্টের জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রার্থীদ্বয় উভয়ে এলাকায় বেশ প্রভাবশালী।

তারা কেউ কাউ ছাড়া দিতে নারাজ। নজরুল ইসলাম বাবু এবং নজরুল ইসলাম আজাদ দুজন ক্ষমতায় যেতে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছেন। প্রত্যেক দিন তাদের মধ্যে সংঘষের ঘটনা ঘটছে। আজাদ-বাবুর সংঘষে আতংকে রয়েছে আড়াইহাজারের সাধারণ ভোটার। নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী সাবেক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুই বারের সংসদ নজরুল ইসলাম বাবু। এ আসনে ঐক্যফ্রন্টের জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রার্থী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। এ আসনে দলীয় প্রতীকে নজরুল ইসলাম আজাদ প্রথমবার হলেও নজরুল ইসলাম বাবু তৃতীয়বার লড়ছেন ভোটের লড়াইয়ে।

বাবু ও আজাদ বর্তমানে ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতির সাথে সক্রিয় রয়েছেন। দু’জনের বেশ পরিচিতি ও রাজনৈতিক প্রভাব এলাকায় রয়েছে। বাবু ক্ষমতায় থেকে এলাকার উন্নয়ন করেছেন ও আজাদ ক্ষমতার বাহিরে থেকে এলাকায় উন্নয়নের কাজে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন বলে জানা গেছে। বাবু ও আজাদ তাদের ভাগ্য ও আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সম্পর্কে অনেকেরই মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আড়াইহাজার উপজেলার বার্ন্টি, সতমান্দি, ব্রাক্ষমন্দ্রীসহ একাদিক এলাকার লোকজন জানান, নজরুল ইসলাম বাবু এমপি হওয়ার পরে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। নজরুল ইসলাম আজাদ বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখবাল করতেন। তিনি ঢাকাতে থাকতেন। প্রায় ১২ বছর ব্যবধানে আজাদও অঢেল টাকার মালিক এখন। বাবু ও আজাদের একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ এলাকায় অনেক জায়গা জমি রয়েছে। বাবু ও আজাদ ঢাকায় থাকেন। তবে নিজেদের বাড়িতে না ভাড়া বাড়িতে সে কথা বলতে পারব না। রাজনীতির মাঠে দু’জনই জনপ্রিয়। বাবু ও আজাদ দু’জনের যে কোন একজন এলাকার কোন খেলার অনুষ্ঠানে গেলেও মাঠ জনসভায় রূপ নেয়।

বাবু চাচ্ছেন আসনটিতে বিগত দিনে কি কি উন্নয়ন করেছেন তা ভোটারদের কাছে তুলে ধরে জয়ের জয়ের পাল্লা ভারি করে নিশ্চিত হতে। তার লোকজন ভোটের মাঠে অন্যকোন প্রার্থীকে নামতে দিচ্ছেন না। অপরদিকে আজাদ চাচ্ছেন আসনটিতে ক্ষমতায় যেতে। ক্ষমতায় যেতে পারলে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের কাজ করবেন। এজন্য আজাদ তার লোকজনসহ জোড়ে শোরে প্রচার প্রচারণা চালাতে চেষ্টা করলেও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আড়াইহাজার উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬৭ জন। এখানে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৫ জন ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৪ হাজার ১২২ জন। ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১শ’ ১৩ টা ও ভোট কক্ষের সংখ্যা ৫৮৭ টা। এ তথ্য জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কমিশন অফিস।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে বাবু ও আজাদ সমর্থকদের মধ্যে গত ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে একাধিক স্থানে হামলা, ভাংচুর, ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের লোকজন আহত হয়েছেন। এসকল ঘটনায় মামলা না হলেও ঘটনাগুলো কেন্দ্র করে পুলিশ এক পক্ষকে পাকড়াও করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া আমরা কাউকে পাকড়াও করি না।

আড়াইহাজার উপজেলা জুড়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ও তাদের সমর্থকরা গণসংযোগ পথসভা, উঠান বৈঠক, প্রচারণার মাইকিং করছেন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। অপরদিকে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীরা ও তাদের সমর্থকরা গণসংযোগ পথসভা, উঠান বৈঠক, প্রচারণার মাইকিং করতে পারছেন না নির্বাচন কমিশনের দেয়া নিয়ম মেনে। আচরণবিধি না মানার প্রবণতা আওয়ামী লীগের থাকলেও প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন তদন্ত করছেন না বলে অভিযোগ তুলেন বিএনপির প্রার্থীসহ অন্যান্যদল গুলোর প্রার্থী সমর্থকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুপ্তরা, কালাপাহাড়িয়া, সাতগ্রাম এলাকার একাদিক লোক জানান, মাকিং করতে আসা রিকসা, অটো রিকসা আটকানোর ঘটনা ঘটে। যারা মাইকিং করেন তাদেরকে অনেক সময় চর থাপ্পর মারার ঘটনাও ঘটে। ধানের শীষ প্রতীকের লিফলেট ও পোষ্টার টাঙ্গানোর কাজে আসা অনেকেই পদে পদে বাঁধার মুখে পড়েন। বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও হামলা চালানোর ঘটনা ঘটছে কয়েকদিন ধরে এসব এলাকায়।
সরেজমিন ঘুরে আড়াইহাজার উপজেলার একাধিক ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাবু এলাকায় প্রভাবশালী নেতা। আজাদও প্রভাবশালী নেতা। তাদেরকে ভোটের মাঠে নামতে দেখলে লাইন দীর্ঘ হয়। দেখলে মনে হয় লং মার্চ কর্মসূচি পালন করতে রওনা হয়েছেন।

বাবুর নেতা-কর্মীরা ও তার সমর্থকরা এলাকায় বিরোধী দলের লোকজনের প্রচার-প্রচারণায় বাধা হামলা চালায় অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর সাথে কথা বলার জন্য তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায় নি।

বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদ জানান, আমার প্রচারণার কাজে ৩ বার হামলা ও ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কমিশনে ও সহকারী রির্টানিং অফিসারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি। তিনি আরও বলেন, জুয়েল, শ্যামল, আনোয়ার এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদের হামলার শিকার হয়ে। এখনো বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আমার দলের সমর্থকদের হুমকি ধামকি অব্যাহত রয়েছে। প্রচারণার মাইক ছিনিয়ে নেয়াসহ তাদেরকে মারধর করছে।

আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাচন কমিশন ও সহকারী রির্টানিং অফিসার বলেন, হামলা ভাংচুরের ঘটনা কয়েকদিন আগে ঘটলেও এখন তেমন কোন সমস্যা নেই। সকল দলের লোকজন ও প্রার্থীরা যেন প্রচার-প্রচারণা সমান তালে চালাতে পারে সে ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। এখন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন কোন এলাকায় কোন ধরনের সমস্যা নেই। এমন অবস্থায় নির্বাচনের ভোট গ্রহনের দিন থেকে নির্বাচনী পরের সময় পর্যন্ত রাখবেন বলেও দাবি করেন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ