আজ বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কোন ঠাসায় নৌকার প্রার্থী

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

নারায়ণগঞ্জের তিন উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন নির্বাচনে প্রত্যেকটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকার প্রার্থী রয়েছে। পাঁচ ইউপিতে ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নৌকার ৫ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, বাকি ইউপির কয়েকটিতে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করছেন খোদ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। কেউ সরাসরি নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থন দিচ্ছেন। কেউ আবার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে না নেমে বিরোধী প্রার্থীর পথ সুগম করছেন। এমনকি পরপর দু’টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ক্যাম্পে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। আরও একটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর গণসংযোগে হামলা ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এক চেয়ারম্যান প্রার্থী শঙ্কিত বোধ করছেন বলেও জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রমতে, ১১ ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে সবচেয়ে হাইভোল্টেজ নির্বাচন হবে বন্দরের কলাগাছিয়ায় নৌকার বিপরীতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন। কলাগাছিয়ায় বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধান নৌকা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে। তার বিপরীতে নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সেলিম ওসমানও দেলোয়ার হোসেনকে সমর্থন দিচ্ছেন। সাংসদ সরাসরি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেলোয়ারের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর বন্দরের নবীগঞ্জে একটি স্কুলভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি দেলোয়ারের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নৌকাকে ‘গাঞ্জার (গাঁজা) নৌকা’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তারা বলছেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন সেলিম ওসমান। অথচ তিনি নিজেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপরীতে গিয়ে নৌকা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করছেন।
এদিকে স্থানীয় সূত্র বলছে, কলাগাছিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজিম উদ্দিন এক প্রকার কোনঠাসা অবস্থানে রয়েছেন। প্রথমত সাংসদ তার বিরোধীতা করছেন, তার উপর জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা-কর্মীদেরও তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে দেখা যাচ্ছে না। তার উপর গত শুক্রবার রাতে কলাগাছিয়ার সাবদী এলাকায় নৌকার প্রার্থীর ক্যাম্পে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কাজিম উদ্দিন এই ঘটনার জন্য দেলোয়ার প্রধানকে দোষী করেছেন। তিনি নির্বাচনী পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিতবোধও করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনী মাঠ এখন পর্যন্ত ঠিকঠাক আছে। তবে আমি আতঙ্কে আছি। আমার লোকজনকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়ার চেষ্টা করতেছে। তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। আমি চাই সুষ্ঠ নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণই তার প্রতিনিধিকে নির্বাচন করবেন।’
রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নেও নৌকার প্রার্থী জাহেদ আলীর বিপরীতে নির্বাচনী মাঠে রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান। নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ভাই মিজানুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তিনি নৌকার প্রার্থীর বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন। তার পক্ষে আবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কাজ করছেন। গত ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় নৌকার প্রার্থী জাহেদ আলীর গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। এই ঘটনার পেছনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজনুর রহমানের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ ছিল জাহেদ আলীর। সদর উপজেলার আলীরটেক ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন জসিম উদ্দিন। তবে জেলা ও সদর থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা পক্ষ নিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী ফজর আলীর। অভিযোগ রয়েছে, ব্যবসায়ী ফজর আলী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে কখনই সম্পৃক্ত ছিলেন না। তার ভাই প্রয়াত চেয়ারম্যান নওশেদ আলী স্বতন্ত্র থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ভাইয়ের মৃত্যুর পর ওই ইউপিতে নৌকার মনোনয়ন পেতে দৌড় শুরু করেন তিনি। শুরু থেকেই জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা ও সদর থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ কয়েকজন নেতা ফজর আলীর পক্ষ নেয়। যদিও তাতে লাভ হয়নি। নৌকা পান জসিম উদ্দিন। তবে নৌকা পেয়েও কোনঠাসা জসিম উদ্দিন। ব্যবসায়ী ফজর আলী টাকা উড়িয়ে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে নিজের পক্ষে রেখেছেন। তারা কেউ সরাসরি কেউ গোপনে ফজর আলীর পক্ষে নৌকা ডুবানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন। ফলশ্রুতিতে গোগনগরে গত ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় ও ২৮ অক্টোবর দুপুরে নৌকার ক্যাম্পে ভাঙচুর ও পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।
বন্দর উপজেলার আরও দু’টি ইউনিয়ন তথা বন্দর ও মুছাপুরেও নৌকা ডুবাতে তৎপর ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। বন্দর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মোক্তার হোসেন এবং মুছাপুরে আওয়ামী লীগের মজিবুর রহমান। তবে এই দুই প্রার্থীর পক্ষে নেই খোদ আওয়ামী লীগেরই শীর্ষস্থানীয় নেতারা। প্রতীক ঘোষণার চার দিন পেরোলেও তাদের পক্ষে প্রচারণায় জেলা কিংবা উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। সূত্র বলছে, এই দুই ইউপিতে সাংসদ সেলিম ওসমানের পছন্দের দুই প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী এহসান উদ্দিন (বন্দর) ও মাকসুদ হোসেন (মুছাপুর)। এই দুই প্রার্থীর পক্ষেও ভোট চেয়েছেন সাংসদ সেলিম ওসমান। সেলিম ওসমানের প্রভাবের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও নৌকা ডুবিয়ে লাঙ্গলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। সরাসরি প্রচারণায় না নামলেও নেপথ্যে জাপার প্রার্থীর পথই সুগম করছেন তারা।
জানতে চাইলে ‘তারা প্রার্থীদের সাথেই আছেন’ বলে দাবি করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই। তিনি বলেন, তারা শীঘ্রই সরাসরি প্রচারণাতেও নামবেন। দলীয় সকল প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবেন তারা। এ নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে দু-একদিনের মধ্যে বৈঠকে বসবেন। বৈঠকে নির্বাচনী পরিকল্পনাও নির্ধারণ করা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ