আজ মঙ্গলবার, ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কাচঁপুরে ১৫ শত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে সওজ

সোনারগাঁ প্রতিনিধি: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাচঁপুর বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় সড়ক ও জনপথ সওজের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা প্রায় ১৫ শত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। গতকাল বুধবার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) এ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে নেতৃত্বে দেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান ফারুকী।

জানা যায়, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কাঁচপুর এলাকায় দোকানপাট নিমার্ণ করে মাসে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। প্রতি দোকান থেকে মাসিক ও দৈনিক হিসেবে এ চাঁদার টাকা আদায় করা হচ্ছে। আর এ সব দোকান থেকে অগ্রিম বাবদ ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোশারফ ওমর দেড় শতাধিক দোকান বসিয়ে প্রতি দিন কয়েক হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করছেন। সোনারগাঁ ফিলিং স্টেশনের সরকারী জায়গা দখল কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শ্রমিকলীগের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান মিয়া প্রায় ৪ শতাধিক দোকান নিমার্ণ করে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা, আবুল খায়ের নামে এক ব্যক্তি দুইশতাধিক দোকান বসিয়ে প্রতিদিন ৮-১০ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করছেন। কাঁচপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহিন মিয়া ও তার ভাই আক্তার হোসেন, আওয়ামীলীগ নেতা আমান খাঁন চোরাই মোবাইল মার্কেট, আওয়ামলীগ নেতা আকমল হোসেন শর্তাধিক দোকান, কয়েকশত মার্কেট নির্মান করে কয়েকশত দোকান ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

কাঁচপুর এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন, শামীম মিয়া জানান, সরকারী জায়গা থেকে সড়ক ও জনপদের লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে দোকান পাট উচ্ছেদের পরপরই আবারও অবৈধ দখলদারেরা দোকানপাট নিমার্ণ করে ফেলেন। তারা আরও জানান, যত বার দোকান ভাঙ্গা হয় ততবার আমাদের অগ্রিম দিতে হয়।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, যতবার দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে তত বারই সওজের কর্মকর্তা ও পুলিশকে দেওয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে অগ্রীম বাবদ টাকা নেওয়া হয়েছে। আমারা না খেয়ে থাকলেও তাদের (চাঁদাবাজদের) কোন আসে যায় না। বার বার অগ্রীম টাকা দিয়ে আমরা নিঃশ্ব হয়ে পড়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামীলীগ কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ ওমর ও শ্রমিকলীগ নেতা আব্দুল মান্নান মেম্বার সহ সকল দখলদাররা জানান, দলীয় কর্মীরা দৈনিক হারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করে থাকেন। বিএনপির আমলেও ফুটপাত থেকে চাঁদা উত্তোলন করা হয়েছে।

ফুটপাতের ব্যবসায়ী আলী হোসেন, কামাল মিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান  ভেঙ্গে  দেওয়ায় আমাদের ছেলে মেয়ে নিয়ে আমরা এখন অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটাতে হবে। তারা আরো জানান, উচ্ছেদের পর আবারো দোকান বসাতে হলে স্থানীয় চাদাঁবাজদের মোটা অংকের চাদাঁ দিতে হবে।

কাচঁপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম আলী সরদার জানান, সড়ক ও জনপদের জায়গা অবৈধ দখল করে স্থানীয় চাদাঁবাজরা দোকানপাট নির্মান করায় কাচঁপুর বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন দুর পাল্লার যাত্রীরা। এ সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। যাতে চাদাঁবাজরা ফুটপাত দখল করতে না পারে সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইমরান ফারহান সোমেন জানান, মহাসড়কের কাচঁপুর এলাকায় সড়ক ও জনপদের ফুটপাতের জায়গা অবৈধভাবে জোর পূর্বক দখল করে দোকান ঘর নির্মান করে ব্যবসা করে আসছে একটি প্রভাবশারী মহল। ফলে প্রতিনিয়ত এ এলাকায় মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কে যানজটমুক্ত করার লক্ষ্যেই এ অভিযান চালানো হয়েছে। এ উচ্ছেদ অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করা হবে।

উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) বিভাগীয় উপ-সচিব মাহাবুবুর রহমান ফারুকী,  নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইমরান ফারহান সোমেন, উপ-প্রকৌশলী সোহেল মাহামুদ, কাচঁপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম আলী সরদার, সার্ভেয়ার হুমায়ুন আহাম্মেদ, সোহেল মাহামুদ, কাচঁপুর হাইওয়ে থানার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর তৈয়বুর রহমান প্রমূখ।

 

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ