আজ বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

করোনা থেকে আমরা কি শিখলাম !

প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মজীবী মানুষ কর্মহীন হওয়ায় খাদ্যের অভাবের জন্য সরকার ঘোষিত লকডাউন মানতে পারছে না। লকডাউন ভাঙারকারণে যশোর জেলার মনিরামপুরউপজেলার সহকারী কমিশনার সায়েমা হাসান এলাকার বয়স্ক মুরুব্বিদের কান ধরে উঠবসকরিয়েছেন। তার উদ্দেশ্য হয়তোপ্রতিশোধপরায়ণ ছিল না; কিন্তুবাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বেতনভুক আমলাদের ‘গায়ে গরম বেশি’ বিধায় তারা ক্ষমতাহীন জনগণকে ‘মানুষ’ মনে করেন না; ফলে ঔপনিবেশিক আমলে ব্রিটিশ আমলারাসাধারণ গণমানুষের সাথে যে ব্যবহারকরতেন এখনো তার ব্যতিক্রমহচ্ছে না। পাবলিক সার্ভেন্টদেরএ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটেথাকে, যেমনটি ঘটেছে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায়; সহকারী কমিশনার (ভূমি) সঞ্চিতা কর্মকারকে মাছ বিক্রেতা ‘দিদি’ সম্বোধন করায় লাথি মেরেড্রেনে ফেলে দিয়েছেন তাকে (সূত্র : জাতীয় পত্রিকা ৫ এপ্রিল ২০২০)। ব্রিটিশ আমলাদেরমতো দেশী আমলাদের ‘গায়েগরম’ বেশি হওয়ার কারণেইভাই, দিদি, বোন সম্বোধন করলেতাদের মতে অবমূল্যায়ন মনেকরে বিধায় ব্রিটিশ অনুকরণে ‘স্যার’ সম্বোধনটি তারা বেশি পছন্দকরেন। কথা প্রসঙ্গে ওইঘটনাগুলো এসে গেলেও মূলবক্তব্য করোনা, করোনা প্রতিরোধ এবং করোনা থেকেভালো কিছু আশা করাযায় কি?

করোনাপ্রতিরোধের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেসরকার লকডাউন দিয়েছে, অর্থাৎ যে যে অবস্থায়আছে সে অবস্থাতেই স্বেচ্ছায়অবরুদ্ধ থাকতে হবে, যাতে করোনাজীবাণু-বহনকারীর শরীর থেকে অন্যকারো দেহে জীবাণুটি সংক্রমিতহতে না পারে। উদ্দেশ্যটিঅত্যন্ত মহৎ।

মানুষেরজীবন রক্ষার্থে প্রদত্ত সরকারি এ নির্দেশ জনগণমানছে না কেন? প্রধানকারণ বেঁচে থাকার জন্য, ‘জীবন’কে রক্ষারনিমিত্ত ‘ক্ষুধার’ চাহিদা মানুষকে মিটাতে হয়। প্রবাদ রয়েছে, ÔNecessity does not know the lawÕ লকডাউনমেনটেইন করার জন্য সরকারআপ্রাণ চেষ্টা করেও জনগণের সমাবেশবন্ধ করতে পারছে না, কোথাও কোথাও জরিমানা করেও সন্তোষজনক ফলপাওয়া যাচ্ছে না। অন্য দিকেবেতনের দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করছে। খাদ্যের দাবিতে অবরোধ করা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণস্থানে যেখানে জনসমাগম বেশি। সঙ্গতভাবেই ত্রাণের চাল চোরদের বাড়িহলুদ পতাকা দিকে লকডাউন করারদাবি উঠেছে ক্ষুধার্ত মানুষের পক্ষ থেকে।

প্রধানবিচারপতি চেম্বার জজ ও হাইকোর্টেরএকটি বেঞ্চ চালু করার প্রজ্ঞাপনজারি করলেও আইনজীবীদের প্রতিবাদের মুখে তা স্থগিতহয়ে গেছে। জুমা ও তারাবিতেমসজিদে ১২ জনের বেশিউপস্থিত হলে ম্যাজিস্ট্রেট মুসল্লিদেরবের করে দিয়েছেন। অন্যদিকে সরকার গার্মেন্ট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তনিয়েছে, যা স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত।এক দিকে বলা হচ্ছে, ঘর থেকে বের হবেননা, মসজিদে যাবেন না, অন্য দিকেগার্মেন্ট, শপিংমল, মার্কেট খুলে দিলে পরিস্থিতিকেমন হতে পারে- তাসরকার কি উপলব্ধি করতেপারছে? গার্মেন্ট বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি বড় খাত।জাতীয় উন্নয়নে কৃষকদের মতো গার্মেন্ট শ্রমিকরাওজাতির বন্ধু। বন্ধু আরো রয়েছেন যারাবিদেশ থেকে মাথার ঘামপায়ে ফেলে দেশে রেমিট্যান্সপাঠিয়েছেন। করোনার কারণে বৈদেশিক রেমিট্যান্সের দরজাও বন্ধ হয়ে গেলবৈকি!

প্রাণঘাতীকরোনা আমাদের কী শিখিয়ে যাচ্ছে? করোনা আক্রান্ত সন্দেহে চলন্ত বাস থেকে রাস্তায়ফেলে দেয়া, কোনো বাড়িতে এতেআক্রান্ত হলে সে বাড়িরলোকজনকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্যমহল্লাবাসী একত্রিত হয়ে লাঠিসোটা নিয়েআক্রান্ত পরিবারকে আক্রমণ করা, সরকারি ত্রাণেরচাল চুরি ও আত্মসাৎ, ত্রাণের নামে চাঁদাবাজি প্রভৃতিগণবিরোধী অপকর্ম করোনা বন্ধ করতে পারেনি।মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়েও বন্ধ হয়নি খুন, ধর্ষণ, কালোবাজারি ও মজুদদারি। রোহিঙ্গাদেরদুর্দশা দেখে সাধারণ মানুষেরচোখের পানি ধরে রাখাযায় না, কিন্তু বিশ্বনেতাদের পাষাণ হৃদয় এতে একটুওকেঁপে ওঠে না। অথচপাষাণদের মনোরঞ্জনে বিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছেনিরীহ মানুষ হত্যার পরমাণুু বোমা তৈরির জন্য।আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, করোনা জীবাণুু তৈরি করা হয়েছেচীনের গবেষণাগারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রয়েছে ভিন্ন মত। তাদের মতে, প্রকৃতি থেকেই করোনার উৎপত্তি। ট্রাম্পের বক্তব্য প্রমাণ করার আহ্বান জানিয়েছেবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। হিটলার মনে করত, সবমানুষ মরে গেলেও গোটাপৃথিবী তার পদতলে থাকতেহবে। অনুরূপ চিন্তা চীনের মাথায়ও থাকতে পারে। তবে চীন, আমেরিকা, ভারত প্রভৃতি শক্তিধর রাষ্ট্রপ্রধানরা মুসলিমবিরোধী বলে প্রমাণিত। চীনবলে বেড়াচ্ছে, তারা মুসলিম রাষ্ট্রগুলোরবন্ধু, যদি তাই হয়তবে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে মুসলিম রোহিঙ্গাদের চরম দুর্দশা কেন? রোহিঙ্গারা শুধু মুসলিম হওয়ারকারণেই চীনের এ বিমাতাসুলভ আচরণনয় কি?

করোনামানেই মৃত্যু এবং গোটা বিশ্বেএ মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর বিগত ইতিহাস সাক্ষ্যদেয়, অন্যায়-অবিচার, নির্যাতন, পৈশাচিকতার পদভারে পৃথিবীর আকাশ-বাতাস যখনভুক্তভোগী মানুষের দীর্ঘ নিঃশ্বাসে ভারী হয়ে যায়, অত্যাচারী ও অযোগ্য ব্যক্তিরাযখন অপকৌশল করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতহয় তখনই প্রতি শতাব্দীতেঅন্তত একবার করে এ ধরনেরমহামারীর আবির্ভাব ঘটে, যার পূর্বাভাসবড় বড় বৈজ্ঞানিকদের চিন্তা-চেতনা বা গবেষণাতেও ধরাপড়ে না।

শত প্রতিকূল অবস্থা এবং ঘটে যাওয়াধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষ কীপ্রত্যাশা করতে পারে? করোনায়ধ্বংস হয়ে যাক শাসকশ্রেণীরদুর্বৃত্তায়ন, শাসকদের অত্যাচার-নির্যাতনের বিভীষিকা থেকে নিরীহ নিপীড়িতমানুষরা মুক্তি পাক, অধিকার আদায়েব্যর্থ গণমানুষের দীর্ঘ নিঃশ্বাসে আকাশ-বাতাস যেনআর ভারী না হয়েওঠে, বিচার বিভাগে অনেকের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ তথা সরকারেরতাঁবেদারি আর যেন দেখতেনা হয়, ব্যাংকলুটেরা, ভূমিদস্যু, পুঁজিপতিদের পদতলে রাজনীতি যেন আত্মসমর্পণ নাকরে, রাজনৈতিক দলের নমিনেশন নিলামেযেন বিক্রি না হয়, স্বামীরহাতে স্ত্রী খুন, পুত্রের হাতেপিতা-মাতা খুন, ভাইয়েরহাতে ভাই খুনের খবরযেন আর শুনতে নাহয়Ñ এ কামনায় চেয়েথাকি নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের বসবাসযোগ্য একটি শোষণহীন পরিচ্ছন্নপৃথিবীর প্রত্যাশায়। তাই প্রত্যাশা রইলসৃষ্টি হোক প্রভাবমুক্ত একটিজাতিসঙ্ঘের। দৃঢ়চিত্তে প্রত্যাশা করিÑ জেগে উঠুকএক নতুন পৃথিবী, যেপৃথিবীতে শিশুর নির্মল হাসিতে, আনন্দঘন পারিবারিক পরিবেশে, ভয়হীন সমাজে, কল্যাণমূলক একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদেরস্বস্তির নিঃশ্বাসে অধিকারবঞ্চিত মানুষরা সৃষ্টিকর্তার কর্মতৎপরতাকে উপলব্ধি করতে পারবে। সৃষ্টিকর্তাবলেন, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যাআছে সবাই তাঁর (আল্লাহ) কাছে কামনা করে, তিনি (আল্লাহ) প্রতি মুহূর্তে তাঁর কর্মে নিয়োজিত।’ (সূরা আর রহমান, আয়াত-২৯) অসহায়, নিপীড়িত, নির্যাতিত, অধিকারবঞ্চিত গণমানুষ সেটিই প্রত্যাশা করে। কারণ মহানসৃষ্টিকর্তাই একমাত্র এবং একমাত্র হেফাজতকারী।

লেখক : এড. তৈমূর আলম খন্দকার, কলামিস্ট ও রাজনীতিক

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ