সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জ জেলায় যোগদানের পর থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার) পিপিএম (বার)। ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য মাদক বিক্রেতাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনেছেন তিনি। বরাবরই মাদকের বিরুদ্ধে আপোষহীন এই পুলিশ কর্মকর্তা মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের সুস্থ জীবনে ফিরে আসার আহবান জানিয়ে তাদের আইনী সহায়তা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন বারংবার। তাই নিজের বিবেকের তাড়নায় পুলিশ সুপারের আহবানে সাড়া দিয়ে ওই অন্ধকার পথ থেকে আলোর পথে ফিরে এসেছেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন সেহাচর এলাকার বাসীন্দা মোঃ মহাসীন (৩০)।
তিনি ওই এলাকার মুছা বেপারীর ছেলে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে লিখিত ভাবে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন মহাসীন। একই সাথে আগামীতে এই অন্ধকার পথে পা না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার তা আমলে নিয়ে আনুসাঙ্গিক কার্যক্রমের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘ক’ সার্কেল মেহেদী ইমরান সিদ্দিকীকে নির্দেশ দেন। এক সাক্ষাৎকারে মহাসীন জানান, মাদকের অন্ধকার জগতে পা বাড়ানোর আগে একজন খেটে খাওয়া পরিশ্রমি মানুষ ছিলেন তিনি। হালাল ভাবে মাছ ব্যবসা করতেন। ফতুল্লা রেল স্টেশন বাজারে মাছের দোকান ছিল তার। তবে, সমাজে ভয়াবহ বিস্তার ঘটা মাদকের আগ্রাসন আচমকাই কেড়ে নেয় তার সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবন। রেল স্টেশন এলাকার কিছু মাদক সেবী ও ব্যবসায়ীরা প্রলুব্ধ করে মহাসীনকে।
সময়ক্রমে নিজের সুস্থ বিবেক বলী হয় মাদকের আগ্রাসনে। একটি চক্রের সাথে মাদক বিক্রিতে জড়িয়ে পরে মহাসীন। বিপরীতে শুধু সমাজই নয়, নিজ স্ত্রীসহ ফুটফুটে দুটি কন্যা সন্তান থেকে দুরে সরে যান ক্রমশই। তার ভাষ্য মতে, টানা ৮ থেকে ৯ মাস মাদক বিক্রয়ের সাথে জড়িত থাকাবস্থায় ২০১৬ সালের শেষের দিকে মাদক সহ ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। সেই মামলায় দীর্ঘ ৭ মাস কারাভোগ করেন মহাসীন। স্ত্রী-সন্তান থেকে এতটা সময় দুরে ছিলেন। তবে, জামিনে বেড়িয়েও পরিবারের সাথে শান্তিতে বসবাস করতে পারছিলেন না তিনি। সমাজের মানুষের কাছে আড় চোখের পাত্র হয়ে উঠে ছিলেন। জীবনের এই কঠিন সময়ের মধ্যে আলো-আঁধারের পার্থক্য বুঝতে পারেন মহাসীন। তাই নিজ স্ত্রী ও নিষ্পাপ দুই সন্তানের মুখপানে চেয়ে তাদের সুন্দর ভবিষ্যত উপহার দিতে নিজেকে সুধরে নেয়ার প্রত্যয় বুকে ধারণ করেন। সেই প্রত্যয়ে বিগত দু’বছর যাবৎ স্বাভাবিক ও সুস্থ্য জীবন যাপন করছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘ক’ সার্কেল মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের সুযোগ্য পুলিশ সুপার মহোদয় শুরু থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। তিনি মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের সুস্থ্য জীবনে ফিরে আসার জন্য সব সময়ই আহবান জানিয়ে আসছেন। যারা নিজেকে মাদক থেকে দুরে রেখে সুস্থ জীবনে ফিরে আসবে, আমরা তাদেরকে স্বাগতম জানাবো। তাদের কোন ভাবেই হয়রানী করার অবকাশ নেই। মহাসীন নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাদক ছেড়ে সুস্থ্য জীবনে ফিরে এসেছে। এতেকরে প্রত্যেকের মতো আমরাও আনন্দিত। আমরা চাই, প্রত্যেকেই যেন মহাসীনের মত নিজের বিবেককে জাগ্রত করে সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘তবে কেউ যদি নিজেকে সুধানোর নামে চালাকি করে আবারো মাদকের অন্ধকার পথেই হাটে, তাহলে তাদের পরিনাম হবে ভয়াবহ।’ মহাসীন বলেন, ‘মাদকের সাথে জড়ানো সময়টা ছিলো আমার জীবনের একটি দূর্ঘটনা। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি লজ্জিত। গোটা জাতির কাছে ক্ষমা চাইছি। কেননা আমি বুঝতে পেরেছি যে, একজন মাদক ব্যবসায়ী গোটা জাতির জন্য অভিশাপ।
এখন আমি নিজেকে সুধরে ভালো পথে ফিরে এসেছি। তিনি আরো বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যদি আমার বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে এসবের সাথে জড়িত থাকার সত্যতা পায়, তাহালে আমাকে যেই শাস্তি দেয়া হবে, আমি তা মাথা পেতে নেব। তবে আমি দৃঢ়তার সাথে বলছি, আমি কখনই এসবে লিপ্ত হবো না। সকলের দোয়া চাই, মহান আল্লাহ তায়ালা যেন আমাকে জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত এসব থেকে হেফাজত করেন।