বিশেষ প্রতিনিধি
সারাদেশের মত নারায়ণগঞ্জের আদালতের রাজনীতিতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দুর্দিন চলছে। দলটির বিপুল পরিমান ভোট ব্যাংক থাকার কথা স্বীকার করলেও ঐক্য না থাকায় ক্রমশ আদালতে তারা দুর্বল হয়ে পরছে। নিজেদের সাংগঠনিক ত্রুটি থেকে সরে আসতে না পারায় ভাঙতে ভাঙতে ৩ খন্ডে বিভক্ত হয়েছে তারা। একাধিকবার বিবাদমান দুইটি গ্রুপকে একত্রিত করার সুযোগ আসলেও ঘুরে ফিরে আবারও ভেঙ্গে যাচ্ছে ঐক্য। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন ইস্যু কিংবা ছোট খাটো কর্মসূচীকে ঘিরে তৈরী হয় ফাটল। আর অতি উৎসাহী হাইব্রিড নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্যে বিচ্ছেদ ঘটে তাদের পারস্পরিক সম্পর্কে।
আসন্ন নির্বাচন ইস্যুকে সামনে রেখে প্রকাশ্যেই বিভক্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী পন্থী আইনজীবীরা। আলাদা প্যানেলে নির্বাচন করারও কথা শোনা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এনিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেনি কোন পক্ষই। আর সে কারনে ধীরে ধীরে এর সম্ভাবনা শক্ত হচ্ছে। বারের নির্বাচনে আওয়ামী পন্থী আইনজীবীদের ভেতর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বিরাজ করলেও তা এতদিন প্রকাশ্য ঘোষণায় রূপ নেয় নি। এবার সেটি প্রকাশিত হওয়ায় আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে টানাপোড়নের শঙ্কা তৈরী হচ্ছে।
এদিকে আদালতে মৌখিক ভাবে বিএনপির শক্তিশালী ভোট ব্যাংক থাকলেও সমন্বয় ও যোগ্য প্রার্থীর অভাবে বারংবার পিছিয়ে যাচ্ছে তারা। সিনিয়র জুনিয়র সম্মিলিত প্যানেল দিয়েও আওয়ামী লীগের প্যানেলের সামনে টিকতে পারেনি কোনভাবেই। এবারের নির্বাচনে সত্যিকার অর্থে যদি ক্ষমতাসীনদের দুইটি প্যানেল গঠিত হয় তবে এই সাংগঠনিক বেহাল দশা নিয়েই জয়লাভ করতে পারে বিএনপি পন্থী আইনজীবীরা। তবে তাদের অভ্যন্তরীণ অবিশ্বাস এতটাই প্রখর যে এই অবস্থা জেনেও নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না হেভিওয়েটরা।
বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিজেদের ভেতর অনৈক্যের প্রভাব তারা নিজেরাই স্বীকার করেন। তবে পরাজয়ের পেছনে ক্ষমতাসীনদের প্রভাব নিজেদের দুর্বলতার চাইতেও বেশী দায়ী। তাদের মতে নির্বাচন যদি সুষ্ঠ হতো তবে এত সহজে সংখ্যাগরিষ্ঠ পদে জয়লাভ করতো না আওয়ামী প্যানেল। তাছাড়া নির্বাচনের দিন বহিরাগতদের উপস্থিতি সাধারণ ভোটারদের ভেতর ভয়ের জন্ম দিয়েছে। এছাড়া নির্বাচনের দিন বারের সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খানের ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়া ও বিএনপি নেতা আনোয়ার প্রধানকে বার থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ শক্ত ভাবে নির্বাচনী ব্যবস্থার দিকে প্রশ্ন তুলতে সক্ষম।
এ ব্যাপারে এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমাদের স্থান আইনজীবীদের কাছে পরিষ্কার। আমরা কি চাই এবং কি করতে পারি তা সকলেই জানে। নির্বাচনের প্রার্থীর চাইতে পর্যাপ্ত পরিবেশ সবার আগে আমরা দেখতে চাই। পরিবেশ নিরপক্ষ হলে এত সহজে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করার কথা স্বপ্নেও ভাববে না। সুতরাং আমরা প্যানেলের চাইতে নির্বাচনী সহ অবস্থানকে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছি।
তবে আওয়ামী পন্থী আইনজীবীরা বলছে, সম্প্রতি বার ভবন নির্মানকে সামনে রেখে নির্বাচনী ইস্যুতে শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে বার ভবনকে এজেন্ডা করে বড় একটি সমর্থন আদায় করতে সক্ষম তারা। এক্ষেত্রে অনেকটাই এজেন্ডা বিহীন অবস্থায় রয়েছে বিএনপি। গতানুগতিক কিছু বক্তব্য ছাড়া তারা কখনই কিছু বলতে পারছেন না। এসকল বিষয় সাধারণ জনগনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও আইনজীবিদের কাছে তো ধোপে টিকবে না। সেকারনেই বিভক্ত থাকার পরেও আওয়ামী লীগ বিএনপির চাইতে এগিয়ে থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হলে শক্তিশালী প্রার্থীর পাশাপাশি এজেন্ডা গুরুত্বপূর্ন। নির্বাচনী এজেন্ডা ও শ্লোগান ভোটারদের অনেকাংশে প্রভাবিত করতে সক্ষম। আর সে কারনে বিএনপিকে এই বিষয়ে দৃষ্টি রাখা অত্যান্ত জরুরী। এছাড়া দলের ভেতর বিদ্যমান বিভাজন কাটিয়ে উঠে ভোটের মাঠে লড়াই করতে কতটা সক্ষম সেটিও তাদের সামনে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।