আজ রবিবার, ১০ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
Important Notice: Dear Munna Khan, kindly settle Invoice #CIT-246357 ASAP. For any inquiries, feel free to contact us. Thank you! www.contriverit.com

ঋতুর পরিবর্তনে পিঠা চায়ের জমজমাট আড্ডা

সৈয়দ মো: রিফাত
শীত বাংলা সনের পঞ্চম ঋতু। সবে প্রকৃতিতে হেমন্ত শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনই শীতের বেশ আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এবার একটু আগেই শীতের দেখা মিলছে দেশের অন্যতম ব্যস্ত নগরী নারায়ণগঞ্জ জেলায়। দিনে মেঘলুপ্ত সূর্যের খরতাপ আর রাতে কুয়াশার সাথে সাথে বইছে হিমেল হাওয়া। অলি-গলি, পাড়া-মহল্লায় জমছে চায়ের আড্ডা বসছে শীতের বাহারী পিঠার পসরা। ঋতু বৈচিত্র্যর এই খেলা উপভোগ করছে জেলার সাধারণ মানুষ।
কুয়াশা, শিশিরের সৌন্দর্য্যর ঋতু শীত। এ ঋতুর মূল বৈশিষ্ট্য তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের আলিঙ্গন। এই আলিঙ্গন কারও জন্য উপভোগের, কারও জন্য দুর্ভোগের। এবার বর্ষার অস্বাভাবিকতার পর গুটি গুটি পায়ে প্রকৃতি ও জনজীবনে স্থান করে নিচ্ছে শীত। এর মধ্যেই অনেকের জিজ্ঞাসা- কেমন হবে এবারের শীত!
পৌষ-মাঘ এই দুই মাস মিলে শীতকাল। শীতকাল প্রধানত শুষ্ক এবং দিনের তুলনায় রাত হয় দীর্ঘ। বাংলাদেশে শীতের সময় খেজুরের রস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা পায়েস খাওয়া হয়। শীত কালে অনেক ফুল ফোটে যেমন অশোক, বাগানবিলাস, গোলাপ এবং সরিষা। এ সময় ঘন কুয়াশা হয়, পাতা ও ঘাসে শিশির বিন্দু দেখা যায়।
সরজমিনে শহরের বিভিন্ন এলাকা, ইউনিয়ন, উপজেলা ঘুরে দেখা যায় শীতের আগমন মানুষ কিছুটা হলেও টের পাচ্ছে। কেননা, রাস্তায় পাশে শীতের প্রধান ভাপা পিঠা বিক্রী হচ্ছে পাশাপাশি ভারী জামা কাপড়। রাত বাড়ার সাথে সাথে শহরের রাস্তা ঘাটে পথচারীদের চলাচলও কমে আসে। টিনের চালায় টুপ টুপ করে অবিরাম পড়ছে কুয়াশার ফোটা। ঠান্ডায় কাঁথা কম্বল গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমাতে হয় রাতে। সকালে হালকা কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় পথঘাট। গাছে গাছে লতা পাতা আর ঘাসের ওপর ঝরছে শিশির বিন্দু।
ঋতু পরিক্রমায় পৌষ-মাঘে শীতের দেখা মিললেও এবার শীতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে একটু আগেই। শহরের চেয়ে জেলার গ্রাম এলাকায় শীত একটু বেশি অনুভূত হচ্ছে। বেলা ডোবার সাথে সাথে ঠান্ডা নেমে আসে। মাঝে মাঝে মেঘালয় থেকে ঠান্ডা বাতাস ভেসে আসে। সেই সঙ্গে হালকা কুয়াশায় ঝাপসা হয়ে আসছে চারপাশ।
শীতের আগমনী বার্তায় প্রস্তুতিও শুরু করেছে জেলার মানুষ। বস্তাবন্দি রাখা গরম কাপড় বের করতে শুরু করেছে অনেকেই। দিনব্যাপি শহরের অলিতে গলিতে ফুটে উঠছে কিশোর-তরুনদের দোকানে দোকানে চায়ের আড্ডা। শীতের পিঠার পসরাও বসতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। শীতের এই সময়টি উপভোগের দারুন সময় বলে মনে করেন অনেকে। তবে দিনের বেলায় শীতের ঠিক উল্টোটাই ঘটছে জেলায়। সকালে সূর্যের তাপ কিছুটা কম থাকলেও দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত তাপ কিছুটা বেড়ে যায় ।
শহরে শীতের আগমনের বিষয়ে জানতে চাইলে পথচারী আজহার হোসেন বলেন, হালকা শীত পরেছে মনে হচ্ছে। কারন, রাস্তা-ঘাটে মানুষের চলাচল আগের থেকে অনেকটা কম। তাছাড়া দোকানে শীতের জামা কাপড়, রাস্তার ধারে শীতের পিঠা বিক্রী হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে আমারও অনেকটা শীত শীত অনুভব হচ্ছে। সেদিক থেকে বলতে গেলে শহরে শীতের আভাস এবার অনেক আগেই মিলে যাচ্ছে।
মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী খোয়াশা মৃধা বলেন, সকালে তো ঘুম থেকে উঠতেই ইচ্ছা করে না। বিশেষ করে সকাল আর রাতে সবচেয়ে বেশী ঠান্ডা পড়ছে। কিন্তু দুপুরে অনেকটা স্বাভাবিকই থাকে আবহাওয়া। ইতিমধ্যেই আমার বাড়ীতে শীতের আগমনে এই ঋতুর বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরী হয়ে গেছে। শহরে শীতের আগমনী বার্তায় দৈনিক সংবাদচর্চা পরিবারকে পিঠা খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন তিনি।
চাষাড়া হকার্স মার্কেটের দোকানদার আশরাফুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শীতের প্রভাব জেলায় বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই পরেছে। কারন, নগরীর সাধারন মানুষ ইতিমধ্যেই ভারী জামা-কাপড় ক্রয় করা শুরু করেছে। প্রায় প্রতিদিনই বিক্রী করছি শীতের কাপড়। সেদিক থেকে বলতে গেলে আমার কাছে মনে হয় শীত ইতিমধ্যে এসে পড়েছে কিন্তু পুরোপুরিই নয়, তবে আশা করি আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ শীতের প্রভাব টের পাওয়া যাবে।
কুয়াশা মাখিয়ে ফিরে আসছে শৈশবের শীতের এক আলাদা অনুভূতি। মনে পড়ছে, কুয়াশায় আচ্ছন্ন শীতের সকাল! মুখ খুললেই ধোঁয়া বের হওয়া দেখে অবাক হয়ে যাওয়া। ভাপা, চিতুই, পাটিসাপটা, পুলি, কুলি নানা ধরনের পিঠা। ঘুম ভাঙ্গলেও বিছানা ছেড়ে উঠতে মন না চাওয়া। তুলে রাখা তোরঙ্গের লেপ কাঁথা কম্বলের সে এক দারুণ মজা, রোদে দেওয়া ওম। তুলোর ফাঁকে ঢুকে থাকা রোদের গন্ধ। সন্ধ্যাকাশে দিগন্ত জুড়ে সারি বেঁধে উড়ে চলা অতিথি পাখির দল, কিচির-মিচির শব্দ। শীতের অনন্য প্রকৃতিতে যেন মুগ্ধ নারায়ণগঞ্জবাসী।