আজ রবিবার, ২৪শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আড়াইহাজারে পৌরসভায় জলাবদ্ধতা

স্টাফ রিপোর্টার:
কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতেই আড়াইহাজার পৌরসভায় বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতায় জিম্মি হয়ে পড়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার। পৌরসভাটি ‘গ’ থেকে ‘খ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু বাড়েনি জনগণের সেবা। নানা সমস্যায় জনদুর্ভোগ যেন চরম আকার ধারন করেছে। কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকছে কয়েক দিন। পৌরসভাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে প্রায় ৬২ কোটি টাকার একটি মেগাপ্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে বলে জানা গেছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের লাসরদী, আড়াইহাজার প্রাণি সম্পদ এলাকা সংলগ্ন এলাকায় মানুষ জলাবদ্ধার কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছে না।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন প্রায় ১০ বছর ধরে এখানে মানুষের দুর্ভোগ হলেও দেখা যেন কেউ নেই। ময়লা দুর্গ্ধযুক্ত পানিতে শিশু থেকে বৃদ্ধা সবাই পায়ে চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। উপজেলার সর্বত্রই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও লাগেনি খোদ আড়াইহাজার পৌরসভায়। এসআই নাসির জানান, তার পরিবারসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা সামান্য বৃষ্টির পানিতেই তলিয়ে যাচ্ছে। এতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। একাধিকবার পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এদিকে পৌরসভার কিছু অদূরে লাসাদি গোয়ালপাড়ার অবস্থা আরো নাজুক। সাবেক ভিপি ও ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী নাঈম মোল্লার এলাকায় এইক অবস্থা দেখা গেছে। এই এলাকা দিয়ে স্থানীয় আড়াইহাজার সরকারি সফর আলী কলেজ, আড়াইহাজার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, আড়াইহাজার ৬২ নং সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়, আড়াইহাজার রোকনউদ্দিন গার্স এন্ড কলেজ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী নারী ও পুরুষ প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়েই যাতায়ত করে থাকেন। পানি জমে থাকায় এখন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

একই চিত্র আড়াইহাজার পৌরসভা বাজারের নিউ মার্কেটের পেছনে। এ এলাকায় শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধতার কারনে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানি জমে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। র্দীঘদিন ধরে মানুষের দুর্ভোগ হলেও পৌরসভার নাকের ডগায় জলাবদ্ধতার কেন সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। এমন প্রশ্ন সবার। নাঈম মোল্লা বলেন, র্দীঘদিন ধরে বৃষ্টির পানি জমে আমাদের এলাকায় বসবাসরত মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একাধিকবার পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুর্ভোগের ছবি ভাইরাল করা হলেও পৌরকর্তৃপক্ষের যেন টনকই নড়েনি। এখন কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকে কয়েক দিন। সমাধানে কোনোই উদ্যোগ নেই। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ এ রাস্তায় দিয়ে চলাচল করে। বর্তমানে পানি জমে থাকায় তাদের চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। অতিদ্রুত পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা না হলে দুর্ভোগ আরো বাড়বে। এদিকে নিউ মার্কেট এলাকার এক ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে দিনের পর দিন। প্রধান সড়ক থেকে মসজিদ পর্যন্ত এ সড়ক দিয়ে গাড়ী ও মানুষের চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে আমাদের ব্যবসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। বেশ কয়েকবার পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ছাড়াও পৌরসভা বাজারের ড্রেনেজ ব্যবস্থা এতোটাই নাজুক যে পচা পানির দুর্গ্ধে মানুষের দুর্ভোগ যেন নিত্যসঙ্গি হয়ে পড়েছে। রয়েছে দিনভর যানজটের সমস্যা। যেখানে সেখানে ব্যাটারি চাালিত অটো এবং রিকশা পার্কিং করা হচ্ছে। সড়কের ওপরই বসানো হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ দোকান। এতে পুরো বাজারেই দিনভর যানজট লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এদিকে বাজারের সবজি বাজারে যেতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। বৃষ্টির পানি জমে এমন অবস্থা হয়েছে। সবজি, মাছ মাংস কেনতে গিয়ে যেন ময়লার বার্গারে গিয়ে নামতে হচ্ছে। প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রোচারি ভবন নির্মাণ করা হলেও উদ্বোধন না করায় এটি জনগণের কোনো কাজেই আসছে না। দ্রুত ভবনটি উদ্বোধনের দাবী জানিয়েছে পৌরসভাবাসী। এদিকে থানার পূর্বপাশে সিএনজি স্ট্যান্ড। বৃষ্টির সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে শত শত যাত্রী ও চালকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানি নিস্কাশনের ড্রেনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি জমে তা পচে র্দুগ্ধ ছড়াচ্ছে।

নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি বলেন, দশ বছর ধরেই পৌরসভায় সড়ক বাতির সমস্যা, জলাবদ্ধতা, মশার যন্ত্রণা ও গ্যাসের সমস্যা নিয়ে আমাদের দৈনিক কাজ কর্ম শুরু হচ্ছে। এগুলো সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেই। বাজারের যানজট যেন ‘গা’ সহ্য হয়ে গেছে। নতুন করে বিভিন্ন এলাকায় আদায় করা হচ্ছে টোল। এনিয়ে প্রতিদিনই গাড়ীর চালকদের সঙ্গে টোল আদায়কারীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে। অথচ এ সড়কগুলো এলজিইডি অথবা সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে। প্যানেল মেয়র-১ হাতেম আলী বলেন, জনদুর্ভোগ লাঘবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর করা হবে। মেগা প্রকল্পের অধীনে এরই মধ্যে ড্রেনের কাজ শুরু হয়েছে। এটি সম্পন্ন হলেই পানির জলাবদ্ধতা দূর হয়ে যাবে।