সংবাদচর্চা রিপোর্ট :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই নারায়ণগঞ্জ ৪ ও ৫ আসনে আওয়ামীলীগের আস্থা হারাচ্ছে ওসমান পরিবার। নারায়গঞ্জ ৪ আসনের বর্তমান এমপি শামীম ওসমান। বিভিন্ন বিতর্কীত কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকায় আ.লীগের নেতা কর্মীরা ওসমান পরিবারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না।আ.লীগ সরকার যখন সুনামের সাথে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের সদস্যরা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।সম্প্রতি হকার ইস্যুতে আইভীর উপর হামলা এবং বিভিন্ন হত্যা কান্ডের সাথে ওসমান পরিবারের সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। শামীম ওসমান আ.লীগের নেতা কর্মীদের বাদ দিয়ে নিজের বলয় তৈরী করার জন্য বিএনপির আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস,মুকুল,সেন্টু,শকু সহ বেশ কিছু নেতাকে সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে,যা আ.লীগের ত্যাগী নেতা কর্মীরা মেনে নিতে পারছে না।
নারায়নগঞ্জে আওয়ামীলীগের জন্ম। আ.লীগের জন্ম লগ্নে নারায়নগঞ্জের দুটি পরিবার জড়িত ছিলেন তার একটি ওসমান পরিবার। ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধুর হত্যা কান্ডের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতির পটপরিবর্তন হয়। আ.লীগের দুঃসময়ে নীতি আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে ওসমান পরিবারের সদস্যরা সামরিক শাসক এরশাদের জাতীয় পাটির রাজনীতি শুরু করে দেয়। নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে জাতীয় পাটির হয়ে প্রথমে নাসিম ওসমান এবং পরে সেলিম ওসমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে ।আ.লীগের মূল শক্তি তৃণমূল। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে বর্তমানে শামীম ওসমানের দ্বন্ধ চরমে। যা আ.লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে পারছে এবং শামীম ওসমানের উপর বিরক্ত প্রকাশ করেছে।
এক সময়ের ওসমান পরিবারের মিত্র শামীম ওসমানের গুরু মহানগর আ.লীগের সভাপতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, জেলা আ.লীগের সভাপতি আঃ হাই, শীশ্য জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল , সাধারণ সম্পাদক খোকন শাহ, প্রকাশ্যে ওসমান পরিবারের বিরোধীতা করছে । আ.লীগ আস্থা হারিয়েছে ওসমান পরিবারের নেতৃত্বের প্রতি। তাই ত নারায়নগঞ্জ ৪ ও ৫ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের আভাস দিয়েছে।আগামী নির্বাচনে শামীম ওসমানের আসন থেকে শ্রমিক নেতা কাউসার আহমেদ পলাশকে আ.লীগের মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে বেশ গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে।
জানা গেছে জাতীয় পাটির সাথে শামীম ওসমানের আতাতের কারণে নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে সেলিম ওসমান এমপি নির্বাচিত হয়। সেখানে আ.লীগের একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে।একই পরিবারে দু ধারার রাজনীতির আদর্শ চর্চা হলে সেখানে কি তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব? নারায়গঞ্জের ওসমান পরিবারে দুই ধারার রাজনীতির আদর্শ চর্চা হচ্ছে।
বর্তমানে আ.লীগের হাইকমান্ড থেকে শুরু করে জেলা ও মহানগর আ.লীগের শীর্ষ নেতারা শামীম ওসমান এবং সেলিম ওসমানের বির্তকীত কর্মকান্ডের কারণে ওসমান পরিবারের উপর আস্থা রাখছে না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আ.লীগের তৃণমূল থেকে সিনিয়ার নেতাকর্মীরা সবাই সিটি মেয়র আইভীর বলয়ে রয়েছে।
সম্প্রতি একটি আলোচনা সভায় ওসমান পরিবারের সদস্য সেলিম ওসমানকে ইঙ্গিত করে জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল বলেছেন, গার্মেন্টসে বসে আসন ভাগাভাগি মানি না। ওসমান পরিবারের সদস্যরা স্বৈরশাসকের সাথে হাত মিলিয়েছে। তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আগামী নিবাচনে নারায়নঞ্জ ৫ আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়া হবে।
মহানগর আ.লীগের সভাপতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, আমরা মুখে বলি নৌকা কিন্তু কাজে দেখাই লাঙ্গল। তাদের দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে। কিছু কিছু লোকের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। যত দিন অন্যায় অবিচার থাকবে ততদিন তার বিরুদ্ধে লড়াই করব। দলের মধ্যে বেটে ইদুর ডুকেছে। মনে রাখতে হবে বাইটে ইদুর কিন্তু ঘরের বান কাটে। আমরা এই আসনে (না.ঞ্জ-৫) অনেক বছর ধরে নৌকায় ভোট দিতে পারি না। আমরা এই আসনে নৌকা চাই।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেছেন, লাঙ্গলের প্রার্থী হওয়ায় এসব আসনে আ.লীগের নেতা কর্মীসহ প্রার্থীরা অবহেলিত। তিনি শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, নেতা কর্মীদের দুঃখ কষ্ট দেখার কেউ নেই। আগামী নির্বাচনে নারায়নগঞ্জের সবকটি আসনে নৌকার যোগ্য প্রার্থী দিতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে ,ওসমান পরিবারের কিছু সদস্যের সন্ত্রাসী ও বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে তাদের কর্তৃত্ব হারাচ্ছে। আগামী ২০ বছরের মধ্যে তাদের রাজনীতি বিলুপ্ত ঘটবে।