আজ শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আপীল শুনানীর অপেক্ষায় সাত খুন মামলা

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
৫ বছর আগে নারায়ণগঞ্জে সংঘঠিত সাত খুনের ঘটনায় গোটা দেশকে নাড়া দিয়েছিলো। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা ও নাসিক কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে সরিয়ে দিতেই এ চাঞ্চল্যকর ঘটনার জন্ম। এ হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড আরেক কাউন্সিলর ও শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত নূর হোসেন। এ মামলাটি বর্তমানে সূপ্রীম কোর্টে আপীল শুনানীর অপেক্ষায় আছে।

সিদ্ধিরগঞ্জে নজরুল ও নূর হোসেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব আধিপত্য নিয়ে। যুবলীগ নেতা নজরুল আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে পুরনো হলেও হঠাৎ করে বিএনপি থেকে এসে নূর হোসেন হয়ে যান ওই এলাকার সব অপরাধের মূল হোতা। তবে দু’জনই ছিলেন শামীম ওসমানের অনুগত। এক সময়কার ট্রাকের হেলপার নূর হোসেন মাদক ব্যবসা, যাত্রা-জুয়া, পরিবহন সন্ত্রাস করে অঢেল সম্পদের মালিক হন। অশিক্ষিত এই নেতা নামধারী সন্ত্রাসীকে সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় একটি পত্রিকার মালিকের বিরুদ্ধে। মিছিল মিটিংয়ে অনেক লোক দিতেন বলে শামীম ওসমানও পছন্দ করতো নূর হোসেনকে। অভিযোগ রয়েছে, প্রথমদিকে এই পরিচয়েই দাবড়ে বেড়াতো নূর হোসেন। পরবর্তীতে ওই পত্রিকার মালিকের সাথে সখ্য হলে প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ হয় নূর হোসেনের। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের পুরনো শত্রু নজরুলকে সরিয়ে দিতে পরিকল্পনা করে সে।

সূত্র মতে, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকায় র‌্যাবের সদস্যরা চেকপোস্ট বসিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডে তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলামের গাড়ি থামান। গাড়ি থেকে তাকেসহ তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমকে তুলে নেয় র‌্যাব। বিষয়টি দেখে ফেলে পেছনের গাড়িতে থাকা আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার। র‌্যাব তার গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ ওই আইনজীবিকেও তুলে নেয়। পরদিন ২৮ এপ্রিল ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নজরুল ইসলামের স্ত্রী। ওই মামলায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের তৎকালিন সহ সভাপতি কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান করে ৬জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ের জামাই বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে একই থানায় আরও একটি মামলা করেন। ৩০ এপ্রিল বিকেলে শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দর এলাকা থেকে ৬ জন এবং ১ মে সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে স্বজনরা লাশগুলো শনাক্ত করেন।

আলোচিত ৭ খুন মামলায় ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জজকোর্ট নূর হোসেনসহ র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানা ও মেজর আরিফ হোসেনসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদন্ড ও নয়জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করে। আসামিদের মৃত্যুদন্ড অনুমোদনের জন্য আদেশ হাইকোর্টে আসে। এ ছাড়া এ রায়ের বিরুদ্ধে ২৮ আসামি হাইকোর্টে আপিল করেন। আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট হাইকোর্ট এর রায়ে ১৫ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা হয়। রায়ে হাইকোর্ট বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ডাদেশ পাওয়া ১১ আসামির দন্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়। আলোচিত কয়েকটি মামলার সাথে ৭ খুন মামলার বিচারকে অগ্রাধিকার দেয়ায় দ্রুত হাইকোর্টে দ্রুত রায় হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পর আসামিরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল শাখায় আপিল করেন। সূত্র মতে, বর্তমানে আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ