নিজস্ব প্রতিবেদক:
এশিয়ার বৃহত্তম জুট মিল আদমজী জুট মিল বন্ধের ১৬ বছর আজ। ক্রমাগত লোকসানের কারণে প্রতিষ্ঠার ৫২ বছরের পর ২০০২ সালের ৩০ জুন তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার চিরতরে এশিয়ার বৃহত্তম এই পাটকল আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দেয়। তারপর সেখানে গড়ে তোলা হয় আদমজী রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল বা আদমজী ইপিজেড। ২০০৬ সালের ৬ মার্চ এর আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
সেই থেকে এই ইপিজেডে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে একে একে গড়ে উঠছে রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান। ক্রমশঃ বাড়ছে বিনিয়োগ। সেই সঙ্গে বাড়ছে রফতানিও। হচ্ছে নতুন-নতুন কর্মসংস্থান।
আদমজী ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত এ ইপিজেডে বিনিয়োগ হয়েছে ৪১১ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঠিক একই সময়ে বিদেশে রফতানি হয়েছে ২ হাজার ৭১৬ দশমিক ৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। এ পর্যন্ত এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫৩ হাজার ১১৮ জনের।
এ ইপিজেডে সাংবাদিকদের প্রবেশে অনেক কড়াকড়ি, বিধি-নিষেধ থাকলেও সন্ত্রাসী, বিভিন্ন মামলার আসামীরা প্রবেশ করে অনায়েসে। অভিযোগ রয়েছে, ইপিজেডে সন্ত্রাসীরা প্রবেশ করে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের হুমকিও দিয়ে থাকে ব্যবসার জন্য। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে এক ব্যবসায়ী সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি জিডিও করেছেন।
আদমজী ইপিজেড সূত্রমতে, বন্ধ হয়ে যাওয়া আদমজী পাটকলের ২৪৫ দশমিক ১২ একর জমির ওপর আদমজী ইপিজেড স্থাপিত হয়েছে। এ ইপিজেডের মোট প্লটের সংখ্যা ২২৯টি।
বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ জোন (বেপজার) ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত এ ইপিজেডে ৫৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে রয়েছে। যার মধ্যে ২৯টি বিদেশী, ১৪টি যৌথ মালিকানাধীন ও ১৪ টি বাংলাদেশী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, মরিশাস, সিঙ্গাপুর, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, হংকং, চীন, ভারত, পাকিস্তান, রোমানিয়া, কুয়েত, ইউক্রেন, মালয়েশিয়া, ভার্জিনআইল্যান্ড, কানাডার মালিক।
তৎকালীন পাকিস্তানের ২২ ধনাঢ্য পরিবারের অন্যতম আদমজী পরিবারের তিন ভাই ওয়াহেদ আদমজী ওরফে দাউদ আদমজী, জাকারিয়া আদমজী ও গুল মোহাম্মদ যৌথভাবে ১৯৫০ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ২৯৪ দশমিক ৮৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন আদমজী জুট মিলস। ১৯৫১ সালের ১২ ডিসেম্বর ১৭০০ হেসিয়ান ও ১০০০ সেকিং লুম দিয়ে এই মিলের উৎপাদন শুরু হয়।
একের পর এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষের জীবন যায়। এসব কারণে মিলটি লোকসান গুনতে গুনতে বন্ধের উপক্রম হয়। এক পর্যায়ে বিগত ৪ দলীয় জোট সরকার চরম ঝুঁকি থাকা সত্বেও ২০০২ সালে মিলটি বন্ধ ঘোষণা করে শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধ করে দেন। পরবর্তীতে সেখানে ইপিজেড প্রতিষ্ঠা করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ জুট মিল বন্ধ করার পরও ইপিজেড নির্মাণের সময় পর্যন্ত স্থানীয় একাধিক সিন্ডিকেট মিলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ, লোহা, তামা ও বৈদ্যুতিক তারসহ কয়েক শ’ কোটি টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। কিন্তু এর হোতাদের কোনো বিচার হয়নি। সন্ত্রাস ও লোকসানের অজুহাতে মিল বন্ধ হলেও সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেয়া হয়নি অদ্যবধি।