নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের সাবেক এমপি প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের দুই সহযোগীর চাঁদাবাজি ও মারধর মামলায় ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। ৮ সেপ্টেম্বর রোববার সকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফতাবুজ্জামানের আদালতে ৭ দিনের রিমাণ্ড আবেদন করলে আদালত ১ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন। কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল হাই এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত,গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় শহরের আমলাপাড়া নিবাসী একজন ঠিকাদারের মোবাইল ফোনে কল করে নিজেকে আজমেরী ওসমান পরিচয় দিয়ে ৬৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেয়ায় কালীরবাজার মাংসপট্টি এলাকায় ৭/৮ জন মিলে তাকে মারধর করে ও নারায়ণগঞ্জে বাস করতে দিবে না বলে হুমকি দেয়। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওইদিন দিবাগত রাত সোয়া ১২টায় আল্লামা ইকবাল রোড ব্লক করে অভিযান চালায় পুলিশের একাধিক টিম। ওই সড়কে থাকা আজমেরী ওসমানের বাসা ও অফিসে তল্লাশি করে ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার সকালে সদর মডেল থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেছেন ঠিকাদার মো. বাচ্চু মিয়া।
আমলাপাড়া নিবাসী মরহুম হাজী আহসান উল্লাহর ছেলে ঠিকাদার বাচ্চু মিয়া মামলায় উল্লেখ করেন, ৫ সেপ্টেম্বর রাত ৮ টার দিকে ০১৭৩৯০৮৯৪৯২ নম্বর থেকে তার কাছে একটি কল আসে। অপর প্রান্ত থেকে বলে ‘চাচা আমাকে চিনতে পারছেন। আমি আজমেরী ওসমান বলছি। আমার একটা লোক আপনার কাছে যাবে তাকে আপনি ৬৫ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে দিবেন ও আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে মিষ্টি খাওয়াবেন।’ বাচ্চু আরও জানান, এর কিছুক্ষন পর মোকলেছ নামে একজন লোক আমার সঙ্গে শহরের কালীর বাজারের কালী মন্দিরের সামনে দেখা করে। আমি তাকে মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য আদর্শ মিষ্টির দোকানে নিয়ে যেতে চাইলে সে মিষ্টি খাবে না বলে জানায়। পরে গ্রামীন হোটেলে নিয়ে হালিম খেতে বললে তাও খাবে না বলে দোকান থেকে বের হয়ে যায়। আমি দোকান থেকে বের হলে মোকলেছ আমাকে বলে, ‘আপনাকে হাজী সাহেব ডাকছে। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মোকলেছ সহ আরো অজ্ঞাত ৭ থেকে ৮ জন আমার প্যান্টের বেল্ট ধরে টানতে টানতে কালীর বাজার মাংসপট্টিতে নিয়ে প্রচন্ড মারধর করে। ওদের মারধরে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয়েছে। এরপর তাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ৬৫ হাজার টাকা চাঁদা না দিলে তাকে নারায়ণগঞ্জে বাস করতে দেয়া হবে না। এ সময় প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়।
এ ঘটনা জানালে রাতেই অভিযানে নামে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে সরকারী তোলারাম কলেজের সামনের আল্লামা ইকবাল সড়ক দুই দিক থেকেই বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এ সময় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা, ফতুল্লা মডেল থানা ও জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের একাধিক টিম হাইয়েস গাড়িতে করে অভিযান চালায়। এ সময়ে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে পুলিশ দেওয়ান মঞ্জিলের নিচতলায় আজমেরী ওসমানের অফিসে তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সোনারগাঁয়ের নাজিরপুরের গোলজার হোসেনের ছেলে মোখলেছুর রহমান (৩৫), ও ফতুল্লার ইসদাইরের মো. ফকির চানের ছেলে জেলা ছাত্র সমাজের আহ্বায়ক শাহাদাৎ হোসেন রুপু (৩২) কে। এ সময় পুলিশ উপরে উঠলে অন্যন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারের সাথে বাদানুবাদ হয়। এরপর সড়কের উল্টো পাশে অবস্থিত কাদের ভবনেও অভিযান চালায় পুলিশ। এই ভবনে একটি ফ্ল্যাট দখল করে রাখার অভিযোগ ছিলো তার বিরুদ্ধে। কিছু দিন আগে সেই ফ্ল্যাট কিনে নেন পারভীন ওসমান। পরে আজমেরী ওসমানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে অভিযান শেষ করে পুলিশ। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে ভুক্তভোগী বাচ্চু মিয়া নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় সাবেক সাংসদ নাসিম ওসমান পুত্র আজমেরী ওসমানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ওই মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামীদের মধ্যে মোকলেছুর রহমান ও শাহাদৎ হোসেন রুপু গ্রেপ্তার হয়েছে।