সংবাদচর্চা রিপোর্ট
‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’। সাহসিকতার সাথে কাজে নামাই বড় কথা। কাজ শেষ করতে পারবো কি পারবো না, সেটা বড় কথা নয়। ঘোষণা দেয়া কাজের বাস্তবায়ন করতে পারলে হিরো তো বটেই। না পারলে কোন পরাজয় নয়। সময় পেলে শেষ করবো, না পেলে মাঝপথে ছেড়ে যাব। আমি জনগনের সমস্যাকে নিয়ে ভাবি এটাই হলো মূল কথা। আমার সাধ্যমত যতটুকু সম্ভব ততটুকু করে যাব। যে যাই বলুক ভাই, আমি তো আমার কাজ যথারীতি করে যাই এমনটাই মন্তব্য করেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভির পর এবার আলোচিত পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ শহরের যানজট ও ফুটপাত নিয়ে জনসাধারনের সমস্যাকে মাথায় রেখে নিরসনের পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ঘোষণা দিয়েছেন। আর এতেই শহরজুড়ে তাদের নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। অনেকে ভাল কাজ করতে না পারলেও যারা ভাল কাজ করে থাকেন তাদের গতিরোধ করতে আর সমালোচনা করতে ওস্তাদ। তেমনই কিছু সমালোচকদের ভয়ে পথচলা বন্ধ হবে না মেয়র ও পুলিশ সুপারের এমনটাই আশা করেন নারায়ণগঞ্জে সাধারন জনগন।
উপমহাদেশের সব শহর-বন্দরে হকার রয়েছে। তবে তারা সুশৃঙ্খলভাবে রয়েছেন লন্ডন, নিউইয়র্কের মতো অনেক সমৃদ্ধ নগরীতেও। তবে আমাদের নারায়ণগঞ্জসহ সমগ্র দেশে যেমন বিশৃঙ্খল অবস্থায় হকাররা আছেন বা রয়েছেন তেমন আমাদের প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও নেই। নেই এই উপমহাদেশের কোন প্রান্তে। অন্যান্য রাষ্ট্রের হকারগণ একটি সীমারেখায় ব্যবসা করেন। এতে যানবাহন চলাচল কিংবা পথচারীদের তেমন একটা কষ্ট হয় না। আর আমাদের অবস্থা ভুক্তভোগীরা বুঝতেই পারছেন। ক্ষেত্রবিশেষে উচ্ছেদকৃত হকারদের পুনর্বাসনের জন্য মার্কেট করা হয়েছে। কতজন হকার এতে দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন আর তাদের কতজন টিকে আছেন, এটা দেখার বিষয়।
হকার প্রসঙ্গে সাধারন মানুষ বলছেন, জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে তারা নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন না। নিজেদের স্বচ্ছল ও সুন্দর জীবনের জন্য নগরীর শৃঙ্খলা কিংবা সুন্দর্য বিনিষ্ট করতে পারেন না। যানবাহন ও জনগণের চলাচলের পথ যতটা সম্ভব সুগম রাখতে হবে। এর পাশাপাশি হকাররা যাতে নগরের কোনো কোনো স্থানে তাঁদের ব্যবসা চালাতে পারেন, এর সুযোগও প্রয়োজন। তবে নজর রাখতে হবে হকারদের বসার স্থান নিয়ে যাতে কেউ বাণিজ্যিক ভাবে লাভবান হতে না পারে। বেকারত্ব নিরসন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে হকারদর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক হকার্স মার্কেট করার মতো স্থান ও অর্থ আমাদের নেই। তাই সব দিক বিবেচনায় নিয়েই এমনটা করা সংগত।
নারায়ণগঞ্জে এই হকার বসানো ও উচ্ছেদ নিয়ে চলছে ব্যাপক রাজনীতি। অবশ্য রাজনীতি হতে পারে যেকোনো সামাজিক অবস্থা নিয়ে। পাশাপাশি এর একটি আর্থিক দিক সম্পর্কেও গণমাধ্যমে কিছু তথ্য প্রায়ই আসছে। হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নেওয়া হয়। এই চাঁদার ভাগ যায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা-কর্মীর কাছে। আর এর পরিমাণও কম নয়। তাই মাঝেমধ্যে পরিস্থিতির ফেরে তাঁরা হকার উচ্ছেদের কাজে অংশ নিলেও বস্তুত আবার তাঁদের পুনর্বাসনে সহায়ক শক্তি হিসেবেই থাকেন।
গত ১৬ই জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় ফুটপাতের হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র আইভী সমর্থিত লোকজনদের সঙ্গে হকার ও তাদের সমর্থিত লোকজনদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সাংবাদিক, পুলিশসহ অর্ধ শতাধিক লোক আহত হয়।
সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী তৎকালীন ওই ঘটনার জন্য সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে দায়ী করে ঘটনা সামলাতে ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়ায় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ওই ঘটনাকে নারায়ণগঞ্জবাসীর উপর হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
অপরদিকে ১০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দুপুরে শহরে চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংবাদিক সম্মেলন করেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ। তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে জানুয়ারির মধ্যেই শহরের যানজট, হকার, মাদক ও ভ‚মিদস্যু মুক্ত নারায়ণগঞ্জ গড়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন। এরই মধ্যে হারুন অর রশিদ বেশ সরবভাবেই বলেছেন তিনি এসব সমস্যা মোকাবেলা করবেন।
হকার ও শহরের যানজটের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের বোদ্ধা মহল মনে করেন, কিছুদিন পরপর হকার উচ্ছেদ, যানজট নিরসন, মাদক মুক্ত সমাজ, সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধের বিষয়ে যেসকল বাণী প্রচার করা হয় বা যারা করেন তারা আসলে রাজনীতির মাঠে তাদের সরব উপস্থিতির কথা জানান দেওয়ার জন্যই বলে থাকেন। বাস্তবিক অর্থে তাদের তেমন কিছুই করার নেই। নারায়ণগঞ্জের এহেন এই সকল বিষয়গুলো চেইন সিস্টেম হয়ে গেছে। যারাই এর প্রতিকার কিংবা সমাধান করতে আসেন তদন্ত তদারকী করে দেখতে পান কেচো খুড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে যাওয়ার পালা। নারায়ণগঞ্জের সিস্টেম, রাজনীতি সরাসরি সম্পৃক্ত এই সকল ঘটনাগুলোর সাথে। হুট করেই এর সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে দীর্ঘ পরিকল্পনা মাফিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে হয়তো নগরবাসী এই সমস্যাগুলো থেকে প্রতিকার পেতে পারে। যা হয়তো পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ এর মাধ্যমে ঘটবে।