আজ সোমবার, ২৫শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

অভিযোগের পাহাড়’ সিদ্ধিরগঞ্জ ওসি পারভেজের নামে

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর শাহিন শাহ্ পারভেজ। একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডে গড়েছেন অভিযোগের পাহাড়। নানা অপকর্মের কারণে বেশ কয়েকবার হয়েছেন ক্লোজড আবার বিভিন্ন থানায় বদলি। তারপরেও কমেনি তার অপকর্ম বরং পূর্বের চেয়েও আরও বেড়েছে। তার অপসারণের দাবী জানিয়ে এসপি হারুন অর রশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ।

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার তৎকালীর ওসি আসাদুজ্জামানকে বদলি করে ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই দায়িত্ব দেয়া হয় টাঙ্গাইল নাগরপুর এলাকার সন্তান পারভেজকে। দায়িত্ব নেয়ার পাচঁ মাসের মধ্যেই দায়িত্বে অবহেলা ও উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশনা পালন না করার অভিযোগে তাকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়।

২৪ ডিসেম্বর বড়দিন উপলক্ষে নগরীর বি.বি রোডের সাধু পোলের গির্জায় ডিসি ও এসপির আগমন উপলক্ষে ফুটপাত দখল মুক্ত ও নিয়মিত নজরদারী রাখতে তৎকালীন পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান ওয়্যারলেসে নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে এসে ফুটপাত দখল মুক্ত না হওয়ার কারণ জানতে চান। উত্তরে ওসি পারভেজ বলেন, ফুটপাত উচ্ছেদ আমার একার দায়িত্ব নয়। এক পর্যায়ে উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে তিনি তর্কে জড়িয়ে পরেন। এমনকি আসাদুজ্জামান তাকে ধমক দিলেও তিনি তা আমলে না নিয়ে উল্টো কথা বলেন। এ ঘটনার পর তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া পারভেজকে, সেই থেকেই শুরু। মাত্র ৮ মাসের মধ্যেই সুনামের বদলে অভিযোগের পাহাড় গড়েছেন তিনি। দেহ ব্যবসা, মাদক ছাড়াও বিভিন্ন অবৈধ জায়গা থেকে মাশেহারা নেন তিনি। এছাড়াও একজনের অন্যায় আরেকজনের ওপর চাপানো, দায়িত্বে অবহেলা ছাড়াও নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে অপরাধের সাথে জড়িত থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

শাহিন পারভেজের অপকর্মের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগের বিশ্লেষণ:
চলতি বছর গত ১৭ মার্চ পৈত্রিক সম্পক্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে নিজ সহোদরের হাতে সাদেক নামে এক ব্যবসায়ীকে রক্তাক্ত জখম করার পর উল্টো তার বিরুদ্ধেই মামলা দেয়া হয়। জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজ বাতানপাড়া এলাকায় পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দে বড় ভাই আবদুল কাদিরের হাতে রক্তাক্ত জখম হয়েছিলেন ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমান। ভাতিজা শাওনের রডের আঘাতে মাথা ফেটে গিয়েছিলো তার। গত ১৭ মার্চ এ ঘটনায় আহত হয়েও পাল্টা মামলার আসামি হতে হয় ব্যবসাীয় সাদেককে। তার স্ত্রী আরিফা বেগম, ছেলেসহ আরও বেশ কয়েকজনকে এ মামলার আসামি করা হয়।

সাইনবোর্ড এলাকায় শাপলা গেস্ট হাউজ নামে এক পতিতালয়ে সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ উঠে শাহীন পারভেজের নামে। জানা যায়, তার নাম ভাঙ্গিয়ে দিনের পর দিন সেখানে অবৈধ কার্যকলাপ পরিচালনা করা হতো। চলতি বছর ৪ মে সামাদবানু কমপ্লেক্স শাপলা গেস্ট হাউজে অভিযান চালায় র‌্যাব-১১’র একটি টিম। সেসময় ইয়াবা, নগদ টাকা, কনডম ও লুব্রিকেটিং জেল সহ ৫ জনকে আটক করা হয়। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এখনো সেখানে অবৈধ কার্যকলাপ পরিচালনা করা হয়।

গত ১৩ জুন বিচার চাইতে এসে শাহীন পারভেজের কাছে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ উঠে। জানা যায়, জমির ভাগ না পেয়ে পুলিশের সহয়তায় জায়গা দখলে নেয় সাহেবপাড়া এলাকার ইমরান হোসেন গং। এই বিচার চাইতে এসে ওসির কাছে লাঞ্চনার শিকার হন ঐ জমির অপর অংশের মালিক মফিজুর রহমান। খোর্দ্দঘোষ পাড়ার সাহেব পাড়া এলাকায় ইমরান গং ও মফিজুর রহমান একত্রে একটি জায়গা ক্রয় করেন। পরবর্তীতে পুরো জায়গার ভাগবাটোয়ারা করার সময় সেখানে জমির পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। জায়গার পরিমাপের জন্য ইমরান গং আমিন দিয়ে পুরো জায়গাটি মাপার পর আমীন ইমরান গংদের যে পরিমাণ জায়গার নেওয়ার কথা বলেন তা নিতে অস্বীকার করেন তারা। ওই জমিতে মফিজুর রহমানের সাইনবোর্ড ফেলে দিয়ে সেখানে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালায় ইমরান গং। এ ঘটনার পর বিচারের দাবীথে থানায় গেলে উপ পরিদর্শক (এসআই) শামীম সহ বেশ কয়েকজন লোকের সামনে মফিজুর রহমানের দিকে জুতা নিক্ষেপ করেন শাহীন পারভেজ। কোর্ট থেকে ওই জমিতে কাজ বন্ধ রাখার আদেশ দেয়া হলেও কাজ চালিয়ে যায় ইমরান গং। ঘটনার তদন্ত করতে এসে কাজ বন্ধ না করে উল্টো মফিজুর রহমানকে হুমকি প্রদান করেন এসআই শামীম।

সম্প্রতি সিদ্ধিরগঞ্জে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত দুই মামলায় সর্বমোট ৯৫ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ীদের নাম উদ্দেশ্যেমূলকভাবে জড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ আছে শাহীন পারভেজের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, যাদের নামে মামলা করা হয়েছে তারা কেউই এ ঘটনায় জড়িত নয়। মূলত তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্যই ওসির নির্দেশে মামলা দু’টি করা হয়েছে।

এদিকে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে শেল্টার প্রদান করার অভিযোগ উছেছে শাহীন পারভেজের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে গতকাল সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে বেশ কয়েকজন মানুষ অভিযোগ দিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের কার্যালয়ে আসেন।

তারা হলেন, শিমরাইল এলাকার মৃত মালেকের ছেলে জাকির হোসেন, মৃত শামীম আলীর ছেলে মোতালেব, আবদুল জলিলের ছেলে সিরাজুল ইসলাম, আমির উদ্দিনের ছেলে আলমগীরসহ আরও কয়েকজন। তারা এসপির বরাবর ওসির পারভেজের বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্য প্রমাণসহ ১৭ জন মাদক ব্যবসায়ীর রাম দিয়ে যান। এদের কাছ থেকে শাহীন পারভেজ প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা সুবিধা নিয়ে তাদের শেল্টার দিচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে।

গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বক্তব্যে ওসি মীর শাহীন শাহ পারভেজ বলেন, আমি আট মাস ধরে এই থানায় এসেছি। আমার আসার পর থেকে আমার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করে যাচ্ছি। আমি অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট কাউকেই ছাড় দেয়নি। মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

এলাকাবাসী জানায়, নারায়ণগঞ্জের একজন উজ্জল নক্ষত্র এসপি হারুন অর রশিদ। তার কর্মকান্ডে সকলেই খুশি। তবে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসির অপকর্মের কারণে এসপির সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই খুব শীঘ্রই ওসি পারভেজকে ক্লোজড করা প্রয়োজন। তা না হলে সাধারণ মানুষ ভুগবে অন্যদিকে এসপি হারাবে তার সুনাম।