আজ মঙ্গলবার, ২৮শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

অফিস নেই, সেবা নেই

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ এগিয়ে এলেও করোনা কালে নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টিকে কোন কর্মসূচী নিতে দেখা যায়নি। সাধারণ মানুষতো দূরের কথা দলীয় কর্মীদেরও খোঁজ নেয়নি নেতারা। এ নিয়ে নিদারুণ কষ্টে থাকা কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
পার্টির নেতাকর্মীরা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে সব দলের স্থানীয় নেতারা দলের নেতাকর্মী সহ সাধারণ অসহায় মানুষের খোঁজ নিচ্ছেন। জাতীয় পার্টি দলীয়ভাবে তেমন কোন উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি পার্টির নেতাকর্মীদেরও খোঁজ নেয়নি। নেতাকর্মীদের মতে, পার্টি অফিস না থাকায় দলটি মানব সেবা সহ সব ধরনের কর্মকান্ড থেকে পিছিয়ে পরেছে।

‘৯০ এ পতনের পর দেশের দু’টি স্থানে জাতীয় পার্টির শক্ত অবস্থান ছিলো। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ‘৯১ তে তার জেলা রংপুরের ৫টি আসন থেকে জিতে ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জিততে না পারলেও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসিম ওসমান অনেক ভোট পেয়েছিলেন। এছাড়া এখানে পার্টিকে সাংগঠনিকভাবেও বেশ শক্তিশালী অবস্থানে নেন তিনি। তিনি বেঁচে থাকতে শহরের পার্টি অফিস গমগম থাকতো বলে জানান দলের নেতাকর্মীরা। তিনি মারা যাওয়ার পর তার অনুগত নেতাদের অধিকাংশ এমপি সেলিম ওসমানের সঙ্গে থাকলেও দলের কর্মকান্ড নিয়ে তেমন মাথা ঘামান না বলে অভিযোগ খোদ মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের। তাদের মতে, জেলায় দুইজন এমপি থাকলেও দলীয় কর্মকান্ড বন্ধ বললেই চলে যায়। এ প্রসঙ্গে, জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতা বলেন, আগে আন্দোলন সংগ্রাম হতো তাই পার্টির কর্মকান্ড ধাবমান ছিলো। এখন কোন আন্দোলন সংগ্রাম নেই তাই হয়তো দলীয় কর্মকান্ড চোখে পড়ে না। তাদের দাবি, স্থানীয়ভাবে জাতীয় পার্টি ঠিকই কাজ করে যাচ্ছে এবং সাংগঠনিকভাবেও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
তবে কোন কোন শীর্ষ নেতা প্রকৃত চিত্রের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নাসিম ওসমান ছিলেন মাঠের রাজনীতিক। তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রতিবাদ করে ঘর ছেড়েছিলেন। তার মতো দক্ষ নেতা ছিলো বলেই নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টির অবস্থান শক্ত হয়েছে। আর বর্তমান এমপি সেলিম ওসমান ব্যবসায়ী হিসেবে সফল হলেও তিনি অতীতে রাজনীতি করতেন না। মাঠের রাজনীতির সমন্ধে তার কোন অভিজ্ঞতাও নেই। এছাড়া ব্যবসায়ী নেতা হওয়ার কারনে তিনি সব দলের নেতাদের সাথে সখ্য রাখেন। তাই জাতীয় পার্টি স্থানীয় রাজনীতিতে দুর্বল হয়েছে। আর অপর এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা নিজের আসন নিয়ে ও কেন্দ্রীয় রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। এছাড়া ওসমান পরিবারের সঙ্গে বিরোধ হয় এমন কোন কাজে যাবেন না বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, দীর্ঘ দিন ধরে শহরে অফিস না থাকলেও এ নিয়ে নেতারা তেমন অগ্রগামী হতে পারেননি। এমনকি আহ্বায়ক কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতেও ব্যর্থ হয়েছেন তারা।
এদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নাসিম ওসমান পতিœ পারভীন ওসমান মাঠে নামার পর অনেকে আশা করেছিলো এবার এখানে পার্টি আগের মতো গতিশীল হবে। তবে শেষ পর্যন্ত তাও হয়নি। পারভীন ওসমান ব্যক্তিগত বলয় নিয়ে এখনও মাঠে থাকলেও দলের তেমন লাভ হয়নি। সূত্র মতে, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দলের নেতৃত্ব নিয়ে তাকে কোন গ্রীণ সিগন্যাল দেননি। এছাড়া দেবর সেলিম ওসমান চান না পারভীন ওসমান রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হউক। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন বক্তৃতায় তিনি এ নিয়ে ইঙ্গিতও দিয়েছেন। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, দেবর ভাবীর মধ্যে একটা বিরোধ রয়েছে। আর সেই বিরোধের সুযোগ নিতে চাইছেন আরেক ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন। যিনি আল জয়নাল নামে পরিচিত। এক সময়ে জামায়াতের ডোনার হিসেবে পরিচিত থাকলেও সম্প্রতি তিনি জাতীয় পার্টিতে ভিড়েন। চেষ্টা চালিয়েছিলেন মনোনয়ন নিতেও। টাকার কুমির এ ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিক এতে সফল হননি। তবে দেবর-ভাবীর বিরোধের সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।