নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলা রেজিষ্টার কার্যালয়ে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও সেবা প্রদানের নামে সাধারন সেবা প্রার্থী দুর্ভোগ এখন নিয়মিত বিষয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা যেন সর্বদাই সংবাদ শিরোনামের মধ্য মনিতে থাকতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে এমনটাই মনে করছেন সূধীজনরা। নানা অনিয়মের নতুন ভান্ডার এখন জেলা রেজিষ্টার অফিস। শেষ রক্ষা হচ্ছে না সরকারি দলিল লেখক ও সার্ভেয়ারদের। তাদেরও গুনতে হচ্ছে মাসিক চাঁদা, এক কালিন জোরপূর্বক সালামি তাছাড়াও নানা নামে নানা অজুহাতে আদায় করা হচ্ছে টাকা। দলিল লেখকগন তাদের টেবিলে বসার আগেই এত টাকা ব্যয়। শেড তৈরী করা হয়েছে অবৈধভাবে সড়ক ও জনপথের জায়গার উপরে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী। সাংসদ সেলিম ওসমানের নাম ব্যবহার করে শেড তৈরী করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, অনেক আন্দোলন ও সংগ্রাম এর পর নির্মিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ দলিল লেখকদের অফিস। এখানে নারায়ণগঞ্জ সদর ও ফতুল্লা এলাকার ৩৮০ থেকে ৪০০ জন দলিল লেখক একযোগে অফিস করতে পারবেন। তবে বসা নিয়ে যত বিপত্তি। এই অফিসে বসতে হলে প্রতি দলিল লেখককে কথিত সমিতি ও এর সাথে সম্পৃক্ত নেতৃবৃন্দদের দিতে হবে মাসিক চাঁদা।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিষ্টার অফিসের সামনে সড়ক ও জনপথে জায়গা অবৈধভাবে দখল করে গড়ে উঠেছে টিন শেডের অফিস। যার ভেতরে সরকারী লাইসেন্সপ্রাপ্ত দলিল লেখক ও সার্ভেয়ারদের জন্য টেবিল আকারে বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বর্তমানে অফিসটির নির্মান কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে আছে বলে জানা গেছে।
দলিল লেখক তাইফুর হাসান গালীব বলেন, এই অফিসটি আমাদের জন্য বানানো হয়েছে সদরের দুইশতাধিকের অধিক দলিল লেখক ও সার্ভেয়ার একপাশে এবং ফতুল্লার দলিল লেখক ও সার্ভেয়াররা আরেক পাশে বসবে। তবে সদর ও ফতুল্লার সকল দলিল লেখক ও সার্ভেয়ারগন এক যোগে বসে অফিস করতে পারবে কিনা সেটা চিন্তার বিষয়।
দলিল লেখক সার্ভেয়ার মিজানুর রহমান (জীবন) জানান, সদর ও ফতুল্লাকে সমপরিমাণ অংশে অফিসের ভিতরের জায়গা বন্টন করে দেওয়া হবে। আর এজন্য প্রত্যেক দলিল লেখককে সমিতিকে টাকা প্রদান করতে হবে। এছাড়া রেজিষ্টার অফিসের ভিতরের বিভিন্ন জনকে টাকা প্রদান করতে হতে পারে বলে তিনি জানান।
সদরের দলিল লেখক ও সার্ভেয়ার আব্দুল জলিল বলেন, আমাদের নবনির্মিত অফিসে বসতে হলে প্রত্যেক দলিল লেখককে যার যার খরচ তাকেই দিতে হচ্ছে। এমপি আমাদের বসার ব্যবস্থা করে দিবেন বলে পূর্বে কথা দিয়েছেন এবং আমাদের বসার জন্য একটি স্থানের জন্য বিগত সময় আমরা ব্যাপক অন্দোলন সংগ্রাম করেছি। তবে নবনির্মিত অফিসে বসার জন্য প্রত্যেক লেখককে টাকা দিতে হবে কি না বা সেই টাকার পরিমাণ কত সেটা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সদর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সালাউদ্দিন সংবাদচর্চাকে জানায়, নারায়ণগঞ্জ সদরের ২৩০ জন দলিল লেখক ও সার্ভেয়ার এবং ফতুল্লা এলাকার ১৫০ এর অধিক টেবিল আকারে নবনির্মিত অফিসে বসার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রতি দলিল লেখককে আমাদের দলিল লেখক সমিতিকে মাসিক ২০০ টাকা করে চাঁদা প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া উত্তর পাশের খালি জায়গায় কিছু দিন পরে এমপির উদ্যোগ ও আর্থিক সহায়তায় অরেকটি অফিস গড়ে তোলা হবে। সেই সময় ফতুল্লার দলিল লেখকগন সেই অফিসে চলে যাবে। বর্তমানে শুধু কিছু প্রবীন লেখক এই অফিসে বসতে পারবেন বলে তিনি এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।
জেলা রেজিষ্টার অফিসার সাবিকুন নাহারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, নারায়ণগঞ্জ সদর ও ফতুল্লার সরকারি দলিল লেখক ও সার্ভেয়ারদের বসার জন্য নবনির্মিত অফিসের মূল জায়গাটি মূলত সড়ক ও জনপদ বিভাগের অন্তর্গত। নারায়ণগঞ্জের দলিল লেখকরা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে বর্তমান অফিসটি তৈরী করেছে যার আনুমানিক ব্যয় হয়েছে ২ লক্ষ টাকা। এই অফিস নির্মান ও অন্য কোন বিষয়ে কাউকে কি কোন টাকা কিংবা চাঁদা প্রদান করতে হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, যেহেতু সম্পূর্ণ অফিসটি নির্মান করতে আনুমানিক ২ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে এবং তারা সংখ্যায় অনেক সেহেতু দলিল লেখকরা তাদের মধ্যে সমন্বয় করে এই টাকা পরিশোধ কিংবা ব্যয় করতে পারেন। তবে এই পরিমান টাকার জন্য কারো কাছ থেকে মাসিক কিংবা এককালিন কোন টাকা নেওয়াটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কারো বিরুদ্ধে কোন টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দলিল লেখক ও সার্ভেয়োরদের জন্য নব-নির্মিত অফিসের জায়গার বৈধ অনুমতির বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্সএন) আলিউল হোসেন বলেন, আমাদের জায়গায় কোন কিছু নির্মাণের জন্য কেউ অনুমতি নেয়নি। ওই নির্মাণাধীন শেড সম্পূর্ণ অবৈধ। জেলা রেজিস্ট্রার একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি কিভাবে অন্য ডিপার্টমেন্টের অনুমতি ছাড়া শেড নির্মাণ করেছেন। তার কি সরকারি আইন কানুন জানা নেই?