আজ শুক্রবার, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অচল লঞ্চ সচল করে মানুষ মারে!

না’গঞ্জ-চাঁদপুর-মতলব-মুন্সিগঞ্জ নদীপথ

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
বাঁচাও, বাচাঁও শব্দে শান্ত নদী অশান্ত হয়ে যায় লঞ্চ দুর্ঘটনায় । মা-বাবা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ কাটাতে উপচে পড়া ভিড়ে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট করে টিকেট সংগ্রহের পর লঞ্চে করে নৌ পথে চলাচল করেন যাত্রীরা। চলন্ত লঞ্চে স্বস্তির নিঃশ্বাস ক্ষনিকের মধ্যে বন্ধ হয়ে আসে। নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে চাঁদপুর মতলব কুমিল্লার রামচন্দ্রপুর ও মুন্সিগঞ্জে যাত্রীরা লঞ্চে করে চলাচল করে ঈদ উৎসবে।

গতকাল বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘ দিনের পুরাতন লঞ্চ গুলোকে মেরামত করে রং তুলিতে সাজিয়ে লঞ্চ ঘাটে বেধে রাখা হয়েছে। উদ্দেশ্য ঈদে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করা।
অনুসন্ধান সুত্রে জানা যায়, ফিটনেস বিহীন ও প্রশিক্ষিত চালক বিহীন লঞ্চ চলাচল করছে নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর-মতলব-মুন্সিগঞ্জ নদীপথে। তবে কোন উৎসব এলে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ পুরাতন লঞ্চকে নতুন করার জন্য রং তুলিতে সাজিয়ে রাখেন। এছাড়া লঞ্চ ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি ও অবহেলায় অদক্ষ চালক দ্বারা নদী পথে ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ চলাচল পরিচালনা করছে। লঞ্চ ডুবি দুর্ঘটনা ও প্রাণ হানির ঘটনা ঘটলে প্রশাসন অনুদান দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন সার্বিক পরিস্থিতি। কিন্তু অদক্ষ চালক ও অসাধু লঞ্চ ব্যবসায়ীদের জন্য দুর্ঘটনা ও প্রাণ হানির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তেমন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ এমনটাই জানিয়েছেন নদী-বাচাঁও আন্দোলনের সভাপতি এ বি সিদ্দিক।

মুন্সিগঞ্জের যাত্রী বলেন, লক্কর-ঝক্কর লঞ্চে চলাচল করে যাতায়াত করতে হয় প্রতিনিয়ত। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা চলাচল করছি এটা সত্য। পুরাতন লঞ্চকে রং করে নতুন করে এটা মানুষকে বুঝাতে চায় যে নতুন লঞ্চ। এছাড়া লঞ্চ মালিকরাও জানেন না কি ভাবে লঞ্চ চালাতে হয়।
চাঁদপুরের যাত্রী আব্দুর রহমান জানায়, নদীতে বিভিন্ন সময় ঝুঁিকতে থাকতে হয় লঞ্চ চলাচল কালে। দূর্ঘটনা ঘটলে অনেক মানুষ মারা যায়। লঞ্চ মালিকরা এ জন্য দায়ী। তারা পুরাতন ও অচল লঞ্চ সচল করে মানুষ মারে। সরকারের উচিত নৌ পথের তদারকি বৃদ্ধি করা।
মুন্সিগঞ্জ গামী লঞ্চ রিয়ার চালক মো. ইউনুস বলেন, হেলপার থেকে লস্কর হয়ে ৩ বছর পার করেছি তবে কোন প্রশিক্ষণ নেইনি, ওস্তাদের কাছ থেকে শিখেছি। ১৪ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ নৌ-পথের লঞ্চ চালক হিসেবে কর্মরত আছি। ১ বছর পর পর সার্ভে করেন কর্মকর্তারা কিন্তু এক বছর কি লঞ্চ ডক ইয়ার্ডে মেরামত করা যায়। আর ঈদের সময় লঞ্চ রং করা হয় যাত্রী বেশী পাওয়া যায় বলে।
চাঁদপুর গামী লঞ্চ ময়নামতির কেরানী বলেন, ঈদে অধিক যাত্রীর জন্য লঞ্চ মেরামত করা হয়। যাত্রীরা নতুন লঞ্চে উঠতে পছন্দ করেন। তাই লঞ্চ গুলোকে রং করা হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতিবছর জরিপ করা হয় লঞ্চের ফিটনেসের বিষয়ে। তবে অনেক পুরাতন লঞ্চ আছে বিভিন্ন নৌ পথে।
নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি বদিউজামানের ৪ টি মুঠোফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা হলেও সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক বন্দর ও পরিবহন বিভাগের গুলজার হোসেনের অফিস ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেনি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ্ দৈনিক সংবাদর্চচাকে জানান, ঈদকে সামনে রেখে যাতে করে কোর ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের আমরা বলেছি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এছাড়া মোবাইল কোর্ট আরো বাড়ানো হচ্ছে। অচল কোন যানবাহন চলাচল করবে না বলে আমরা প্রত্যাশা করি এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তদারকি করা হবে। আশা করি মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারবেন।
বাংলাদেশ নোঙ্গর সভাপতি ও জোটের মুখপাত্র সুমন শামস দৈনিক সংবাদচর্চাকে জানান, প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে ফিটনেস বিহীন যাত্রী বহন কারী নৌযান গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। সদরঘাটে এ সকল কার্যক্রম বেশী হয়ে থাকে। তবে নারায়ণগঞ্জ থেকে মেঘনা হয়ে যে সকল যাত্রী বহনকারী নৌ-যান রয়েছে তারা লুকচুরি করে রং করে লঞ্চ গুলোকে চলাচল উপযোগী করেন। এতে করে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি এ সকল লঞ্চ বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকেন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ