আজ মঙ্গলবার, ২৬শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

হাসপাতালেই জন্ম হচ্ছে ডেঙ্গু!

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জের হাসপাতাল গুলোতে প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শহরের খানপুর এলাকায় অবস্থিত ৩শ’ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে গত কয়েক দিনে ১৬১ জন রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত এ দু’টি হাসপাতালে ২৪ জন ও ১২ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্লিনিকে আরও ২০ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে যে হাসপাতালে এ রোগ প্রশমিত হওয়ার কথা উল্টো সেখানে রোগের জন্ম হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল খানপুর হাসপাতালের টয়লেটের পাশে একটি কক্ষে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া হাসপাতালগুলোতে সাধারণ রোগীদের সাথেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রাখা হচ্ছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের অভিযোগ, চিকিৎসা হলেও পরীক্ষা করাতে হচ্ছে বাইরে গিয়ে।

গতকাল সরেজমিনে খানপুর ৩ শয্যা হাসপাতালে দেখা গেছে, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হয়েছে। তাদের সাথে অন্য রোগীরাও আছেন। এখানে একটি কক্ষে ময়লা জমে আছে সাথে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা পানি। ডেঙ্গু রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালের প্যাথলজিতে ডেঙ্গু শনাক্ত করণ পরীক্ষা করা হয় না। বাধ্য হয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে যেতে হচ্ছে রোগীদের। কিনতে হচ্ছে হাসপাতালের বাইরে থেকে স্যালাইনও। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত দেওভোগ এলাকার আলমগীর বলেন, ২ দিন ধরে হাসপাতালে। পরিক্ষা এখানে নেই তাই ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে ১৩শ’ টাকা ব্যয় করে করতে হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ১ দিন ওষুধ ও সেলাইন দিলেও ২ দিন কিনতে হয়েছে দোকান থেকে।
৮ দিন ধরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হাসপাতালে থাকা শায়েকের মা বলেন, ডেঙ্গু তো হাসপাতালেই জন্ম নিচ্ছে। টয়লেটের ভিতরের স্টোর রুমে ময়লা পানি জমে সেখানেই ডেঙ্গুর আড়ৎ হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দ্রত এগুলো পরিস্কার করা দরকার। তিনি আরও জানান, হাসপাতালে সিভিসি পরীক্ষা করেছি তবে ডেঙ্গু পরীক্ষা পাইনি।
তবে খানপুর ৩ শ’শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্বাবধায়ক আবু জাহেরের দাবি, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ওয়ার্ডের ভিতরে কর্ণার করা হয়েছে। তবে জায়গা সংকীর্ণ থাকায় অন্য রোগীদেরও সেখানে রাখতে হয়েছে। তার দাবি, সবাইকে পরীক্ষা করা সম্ভব নয় তবে যাদের প্রয়োজন তাদের আমরা পরীক্ষা করেছি।
অপরদিকে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ডেঙ্গু রোগীদের বিভিন্ন স্থানে রাখা হয়েছে। পাশের সিটেই আছেন অন্য রোগীরা। টানানো হয়নি মশারিও। ডেঙ্গু রোগীরা বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন সেবার মান নিয়ে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নতুন রোগীরাও আসছে হাসপাতালে।
৩২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বলেন, হাসপাতালে কোন পরীক্ষা করেনি। তাই বাইরে থেকে ৯ শ টাকায় পরীক্ষা করেছি।
৩০৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরেকজন রোগী বলেন, কয়েকদিন চিকিৎসার পর এক রোগীকে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। রোগীরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে ছড়িয়ে রয়েছে। হাসপাতালে সিভিসি পরীক্ষা করেছি। বাকি গুলো বেশী টাকা ব্যয়ে বাইরে করতে হয়েছে।
হাসপাতালে থাকা আবাসিক চিকিৎসক আসাদুজ্জামান ডেঙ্গু প্রসঙ্গে বলেন, ৯৬ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ওধুধের কোন ঘাটতি নেই। সিভিসির অংশ প্রাটিলেট ও হোয়াইট বেটক্রাইন টেষ্ট করা হয় তবে পিসিবি টেস্ট করতে পারছি না রিএজেন্টের জন্য। তিনি জানান, হাসপাতালের ভিতরে পরিস্কারের বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোশেনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন হিরণ জানায়, ডেঙ্গু মশা নিধনের জন্য ও নতুন করে জন্ম নেয়া বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুর প্রভাব বিস্তার রোধ করা হচ্ছে। সকলে সচেতন হলে ডেঙ্গু শেষ হয়ে যাবে।
সূত্র মতে জানা গেছে, ডেঙ্গু শনাক্ত করণ পরিক্ষার জন্য ৪৬০ টাকায় পিএস ১ ক্রয় করতে হচ্ছে। রোগীদের কাছ থেকে নিতে হচ্ছে ৫শ টাকা। তাই ৪০ টাকা লাভের জন্য অনেক ডায়াগনোস্টিক সেন্টার এ পরীক্ষা করছে না। তবে সাথে অন্যান্য পরিক্ষা থাকলে তারা ওই টেস্ট করে।
ডেঙ্গু রোগের বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গু আক্রান্ত নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১৮ জন রোগী পাওয়া গেছে। জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে মোট রোগীর সংখ্যা ১২৪ জন। হাসপাতালে ভর্তি ৩৪ জন। তিনি জানান, যারা চিকিৎসা নিতে এসছে তারা ঢাকা থেকেই আক্রান্ত বেশী। জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে গুলোতে সরকারি অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। সেবার মান আরও উন্নত করা হবে।