আজ মঙ্গলবার, ১২ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সড়কে হকার মুক্তিতে বাধা কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভির পর জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ মূল সড়কে হকার রাখবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তবুও কোথায় যেন একটা বাধার গন্ধ পাচ্ছেন নগরবাসী। মেয়র ও পুলিশ সুপার চাইলেও এখনও পর্যন্ত জেলা প্রশাসক ও শহরের কিং হিসেবে পরিচিত সংসদ সদস্যগন জনগনের সমস্যার ফুটপাত নিয়ে কোন মন্তব্য করছেন না। কিন্তু সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন কোথায় যেন একটা বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। রাঘববোয়ালদের কোটি কোটি টাকার অবৈধ ব্যবসায়ে ঘুন ধরতে যাচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলে দুচারটা রাঘববোয়ালের জন্য কয়েক লাখ নগরবাসী প্রতিদিন জঞ্জাল পোহাবে এটাই কি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের বাংলাদেশ?

এমন কতগুলো প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য। তবে সেই তথ্যের কিছু অংশ প্রকাশ করা হলো। বাকি অংশগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে। বঙ্গবন্ধু সড়কের দিনের বেলার চিরচেনা চিত্র বদলে গেছে। শুধু বদলে যায়নি, এই কাঙ্খিত পরিবর্তন টিকে আছে গত কয়েকদিন ধরে। তবে সম্পূর্ণ হকার মুক্ত হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। কেননা হকাররা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ক্ষনিকের জন্য ফুটপাত থেকে দূরে থাকলেও সময় বুঝে ঠিকই তারা তাদের পূর্বের পজিশন দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করছে।

গত সোমবার সকাল ১০টা। চাষাড়াস্থ সোনালী ব্যাংক, সমবায় মার্কেটসহ বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই পাশের ফুটপাত এলাকার ফুটপাত ফাঁকা। স্বচ্ছন্দে চলাচল করছেন পথচারীরা। সড়কেও তেমন যানজট নেই। তবে চাষাড়া গোলচত্বর যানজটের চিত্রের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। ১০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দুপুরে শহরে চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংবাদিক সম্মেলন করেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ। তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে জানুয়ারির মধ্যেই শহরের যানজট, হকার, মাদক ও ভ‚মিদস্যু মুক্ত নারায়ণগঞ্জ গড়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন। এরই মধ্যে হারুন অর রশিদ বেশ সরবভাবেই বলেছেন তিনি এসব সমস্যা মোকাবেলা করবেন।

জানুয়ারির মধ্যেই শহরের যানজট, হকার, মাদক ও ভ‚মিদস্যু মুক্ত নারায়ণগঞ্জ গড়ার যেই প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তা একটু একটু করে আলোর মুখ দেখছে বলে মনে করেন নগরবাসী। স্থানীয়দের মতে পুলিশ সুপার যে ভাল কিছু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নারায়নগঞ্জের জন্য তা বাস্তবায়ন হউক কিংবা না হউক তার এই উদ্দেশ্যের জন্য তাকে সাধুবাদ জানানো প্রয়োজন।

অপর দিকে পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের সাংবাদিক সম্মেলনের পর থেকেই একটু একটু করে রং বদলাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ শহরের। গত দু’দিন ধরে দিনের একটি সময় বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই ধারের ফুটপাত হকার মুক্ত দেখা গেছে।

পথচারী বিল্লাল আহম্মেদ ও দ্বিনইসলাম বলেন, আগে বঙ্গবন্ধু সড়কের ৮০ শতাংশ ফুটপাত হকারদের দখলে ছিল। এতে পথচারীরা চলাচল করতে পারতেন না। সড়কেও তীব্র যানজট লেগে থাকত। এবার টানা উচ্ছেদে বঙ্গবন্ধু সড়ক ও আশপাশের ফুটপাত ফাঁকা। শুরুর দিকে তো এই এলাকাগুলো অচেনা মনে হতো।

নারায়ণগঞ্জের রাকিবুল ইসলাম রকি সংবাদচর্চাকে বলেন, ফুটপাতের সঙ্গে হকারদের কোনো সম্পর্ক নেই। ফুটপাতের শতভাগ অধিকার পথচারীর। তবে ঐতিহাসিকভাবে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পথচারীর সঙ্গে হকারের সম্পর্ক আছে। তাঁরা স্বল্পমূল্যে ফুটপাত থেকে বিভিন্ন পণ্য কেনেন। এর মাধ্যমে হকাররা জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিটি কর্পোরেশন এবং সরকারকে অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পিত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা হলেই বঙ্গবন্ধু সড়কসহ শহরের ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা যাবে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন সচেতন নাগরিক জানান, নারায়ণগঞ্জে স্থানীয় কতজন ছেলে এই শহরের ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে? বঙ্গবন্ধু সড়কসহ নারায়ণগঞ্জের আশপাশ সড়কের যে সকল হকাররা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করছে তাদের শতকরা আশি ভাগই নারায়ণগঞ্জের বাহির থেকে আগত। তারা বিভিন্ন জেলা থেকে এসে আমাদের এই শহর দখল করে নিচ্ছে। কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অর্থ লোভের কারনে আজ হকাররা নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত দখল করে আছে। এই ভিনদেশী হকারদের রক্ষা করতেই কিছু ভিনদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা উঠে পড়ে লেগেছে। যারা প্রকৃত নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা তারা কখনই এই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। তাই হকারদের উচ্ছেদের পূর্বে সিস্টেমের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যারা জড়িত আগে তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।