নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ট্রাফিক সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে আমি নিজেও অনেকবার মাঠে নেমেছি। আমি মাঠে নামলে কিন্তু যানজট থাকেনা। পুলিশ ও ট্রাফিকদের তাদের দায়িত্ব পালন করতে দাও। সমাজকে একটা ধাক্কা দেয়ার দরকার ছিল তোমরা ধাক্কা দিয়েছো। বাকীটা প্রশাসন করবে। তোমরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছো কিভাবে ট্রাফিকগিরি করতে হয়।
আজ শুক্রবার ও কাল শনিবার তোমরা দেখো। রবিবারের মধ্যে যদি তোমরা যেভাবে চাও সেভাবে ট্রাফিক সিস্টেম ঠিক না হয় তাহলে আমি নিজে রবিবার থেকে মাঠে থাকবো।
টানা দুইদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চাষাড়ায় অবস্থান করে নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া আন্দোলনকারীরা শুক্রবার ৩ আগস্ট ফের জমায়েত হলে হাজির হন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান। সেখানে তিনি উপস্থিত আন্দোলনকারীদের এসব কথা বলেন।
শামীম ওসমান বলেন, আমি তোমাদের গত দুদিনের আন্দোলনের ছবিগুলো দেখেছি। সেখানে তোমাদের মাঝে ঢুকে গেছে এমন কিছু মামলার আসামী আছে যারা শিবির ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত। তোমাদের মধ্যে এরা কোন অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে। এসব বিষয় উদ্বেগের। তোমাদের মধ্যে অনেকেই ছিল যারা ছাত্র নয় তোমরা নিজেরাও খেয়াল করলে দেখতে পাবা।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার টানা দুইদিন নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়ায় সকাল ১০টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করেছিল শত শত শিক্ষার্থী। এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল ও সাইনবোর্ড এলাকাতেও ছিল অবস্থান। এতে করে নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে রাজধানী সহ আশেপাশের জেলার সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুইদিনে শিক্ষার্থীরা গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষা করেন যেখানে বাদ পড়েনি সরকার দলীয় এমপি, রাজনীতিক, পুলিশ, সাংবাদিকও।
শামীম ওসমান বলেন, লাইসেন্স নাই, চাবি আটকিয়েছো, এটা ভালো করেছো। চাবিগুলো আমার কাছে দাও। তখন অর্ক নামে এক ছাত্র একটি চাবির ছড়া শামীম ওসমানের হাতে তুলে দেয়। তখন শামীম ওসমান বলেন, এই চাবি নারায়ণগঞ্জ মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলামের কাছে থাকবে। সেখান থেকে গাড়ি মালিকরা তাদের চাবি সংগ্রহ করবে।
উপস্থিত থাকা ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ও নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার কামরুল ইসলামকে শামীম ওসমান বলেন, আপনারা (পুলিশ) আপনাদের কাজ করুন ট্রাফিক সিস্টেম ঠিক করুন। যদি তা না পারেন তাহলে নারায়ণগঞ্জ থেকে অন্য জায়গায় চলে যান। আমার কাউকে দরকার নেই। আমার এই ছাত্ররা থাকলেই আমার চলবে। আমি তো কাউকে বলিনি আমি বললে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে আসবে। যদি রবিবার মধ্যে সব ঠিক না হয় তাহলে আমি তোমাদের নিয়ে মাঠে থাকবো, সবাইকে নিয়ে কাজ করবো।
তিনি বলেন, তোমাদের দাবিগুলো একসাথে নিয়ে সকল ছাত্রছাত্রীরা আমার কাছে রবিবার আসবে। ছাত্রলীগের রিয়াদ তোমাদের সহযোগিতা করবে। তারপর দাবিগুলো নিয়ে আমি কাজ করবো। তোমরা আমাদের দেশের যেমন সম্পদ, তোমাদের পরিবারেরও সম্পদ। বাসায় ফিরে যাও মা বাবার দোয়া নাও। এই দুইদিন তোমরাও থাকো দেখো পুলিশ সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে কিনা।
এসময় শিক্ষার্থীরা ফুটওভার ব্রিজের দাবি করলে শামীম ওসমান বলেন, আমি ছাত্রছাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতে সিটি করপোরেশনকে এখানে একটি ফুটওভার ব্রিজ করে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। আর সিটি করপোরেশনের ময়লা যেখানে সেখানে ফেলে না রাখতে আমাকে বলে লাভ নেই সেটি আমার ছোট বোন আইভীকে বলতে হবে তোমাদের।
শামীম ওসমান আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা গত ৫দিন যেভাবে আন্দোলন করে রাস্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করেছে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে প্রশাসনকে। আমি নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনকে নির্দেশ দিচ্ছি আপনারা আজ থেকে সার্বিক ব্যবস্থা নিবেন। যেখানে সেখানে গাড়ি থেমে থাকবে না। কাগজপত্র ছাড়া এবং লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। রোববারের মধ্যে যদি আপনারা তা না করনে তাহলে আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাঠে নামবো। আমিও তাদের সঙ্গে রাস্তায় উপস্থিত থাকবো।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, তোমরা সকলে মিলে একটা সিদ্ধান্ত নেও শহরের কোন কোন স্থানে ফুটওভার ব্রিজ, স্পিড ব্রেকার প্রয়োজন। আর কি কি প্রয়োজন সেসব তোমরা তোলারাম কলেজ, মহিলা কলেজ ও অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা মিলে তালিকা করো তারপর সোমবার তা জমা দেও। আপাতত আন্দোলন স্থগিত রাখো। তোমরা বাড়ি যাও। মা-বাবার কাছ থেকে দোয়া নাও। পরিশেষে তিনি ঢাকার কুর্মিটোলায় বাস চাপায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম, ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মঞ্জুর কাদের, সিদ্ধিরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাত্তার মিয়া, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হক নিপু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদসহ ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষার্থী।