আজ বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সন্ত্রাসী তারেককে দেশে ফেরত নেবই,প্রধানমন্ত্রী

সন্ত্রাসী তারেককে দেশে

 

সন্ত্রাসী তারেককে দেশে

সংবাদচর্চা রিপোট:

প্রধাসমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে  ফেলার জন্য তারেক ত দূরের কথা ও বাপ মা পারে নাই। তারেক ও পারবে না।ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে পলাতক থাকা আদালত থেকে দ-প্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছেন, যেভাবেই হোক তাকে (তারেক রহমান) আমরা দেশে ফেরত নেবই নেব। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দেশে যেমন করে এসেছে, এই লন্ডনে বসেও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে যাচ্ছে। জিয়া-খালেদা জিয়া- তারেক রহমান সবাই খুনী। এই খুনীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনে ঢুকে বঙ্গবন্ধুর ছবিকে অসম্মান করার দুঃসাহস এরা (তারেক রহমানরা) পায় কোথা থেকে?

স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ায় শনিবার লন্ডনে স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ওয়েস্ট মিনস্টারের সেন্টার হলে যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত তাকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একজন লাফাঙ্গা, সন্ত্রাসী, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি কীভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয় এমন প্রশ্ন রেখে বলেন, এতেই প্রমাণিত হয় বিএনপি একটি দেউলিয়া দল। এই দেউলিয়া দল দেশের সর্বনাশ করতে চায়। এরা দুর্নীতি করে জমানো টাকায় দেশের সর্বনাশ করছে। দেশের বিরুদ্ধে বহির্বিশ্বে বদনাম ছড়াচ্ছে। ব্রিটেন সরকারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, এই সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী কীভাবে লন্ডনে থাকে? তাই যত তাড়াতাড়ি হোক তাকে (তারেক রহমান) বাংলাদেশে ফেরত দিন। ইনশা আল্লাহ যে করেই হোক আমরা তাকে দেশে ফেরত নেব। তিনি প্রবাসী বাঙালীদের এই ষড়যন্ত্রকারী-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

লন্ডনের হাইকমিশনে বিএনপি সন্ত্রাসীদের হামলা ও বঙ্গবন্ধুর ছবিকে অপমান করার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতই যদি বুকে সাহস থাকত, মনে সততার জোর থাকত, তাহলে নিশ্চয় দেশে ফিরে সে (তারেক রহমান) মামলা মোকাবেলা করত। কিন্তু মোকাবেলার সাহস পায়নি। সে পারে মানুষকে ডিম মারতে, মানুষকে হামলা করতে, মানুষকে খুন ও আঘাত করতে। এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দেশে যেমন করে এসেছে, এখন এই লন্ডনে বসেও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই তো হাইকমিশন হয়েছে। সেই হাইকমিশনে ঢুকে জাতির পিতার ছবি নিয়ে অপমান করেছে। এত সাহস কোথায় থেকে আমি জিজ্ঞেস করি। তারেক রহমানরা ভুলে গেছে তার মা-বাবাও বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। তিনি বলেন, হামলার সময় আমি জানি না আমাদের হাইকমিশনে তখন কারা বসেছিল এবং তারা সেখানে কিছুই করতে পারল না কেন, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন? ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রবাসী বাঙালীদের আমি বলব যারা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে তারা চলাফেরা করে না? তাদের দেখেন না? যে হাত দিয়ে ঐ জাতির পিতার ছবি নিয়ে তারা ভেঙ্গেছে তাদের চেহারা চেনেন না? এদের যা করার করতে হবে। আর তারেক রহমান তো দূরের থাক তার বাপ-মাও শত চেষ্টা করেও বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে পারেনি। জাতির পিতার নাম মুছে ফেলা যাবে না।

যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই সকল প্রবাসীদের ফুল দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশের এ বিশাল অর্জনে অভিনন্দন জানানো হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন লন্ডন প্রবাসী প্রখ্যাত সাংবদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম সিদ্দিকী, স্থানীয় নেতা শাহ আজিজুর রহমান, হরমুজ আলম, আলতাফুর রহমান মুজাহিদ, নুরুল হক লালামিয়া, ব্যারিস্টার অনুকুল তালুকদার ডালটন প্রমুখ। যুক্তরাজ্যে ছাড়াও পুরো ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল সংখ্যেক নেতাকর্মী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ায় বিশাল মিলনায়তনটি কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল।

সংবর্ধনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলায় দ-িত হয়ে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া জেলে গেছেন। তাকে মুক্ত করতে চাইলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। অথবা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। অন্য কোন পথ নেই। আর মামলা তো আমরা দেইনি। খালেদা জিয়ারই পেয়ারের ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দিনরা এ মামলা দিয়েছে। দীর্ঘ ১১ বছর মামলা চলেছে। এতিমের টাকা মেরে খাওয়ায় তার সাজা হয়েছে। এখানে আমাদের কী অপরাধ? আর খালেদা জিয়ার ব্যাপারে বিএনপি নেতাদের লজ্জা পাওয়া উচিত।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করতে চাইলে তো ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালেই করতে পারতাম। ওই তিনটি বছর ধরে খালেদা জিয়া ও তারেক গংরা হুকুম দিয়ে শত শত মানুষেকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, সারাদেশে নাশকতা চালিয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপিতে কি একটি মানুষ পাওয়া গেল না যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানানো যায়? কেন একজন প্রবাসে পলাতক ও সাজাপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করতে হবে?

বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের কোন কোন নেতার মুখে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা শোনা যায়! যে দলটির জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে, তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না। আন্দোলন ও নির্বাচন বানচালের নামে যখন তারা শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তখন গণতন্ত্র বা মানবাধিকার কোথায় ছিল? আর ভোট ডাকাতির প্রক্রিয়া তো জিয়াউর রহমানই করে গেছেন। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে প্রতি রাতে কার্ফিউ দিয়ে দেশ চালিয়েছেন। জনগণতন্ত্র নয়, জিয়াউর রহমান দেশবাসীকে কার্ফিউ গণতন্ত্র দিয়ে গেছেন। তাই বিএনপি নামক দলটির নেতাদের মুখে গণতন্ত্র কিংবা মানবাধিকারের কথা শোভা পায় না।
তিনি বলেন, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী তাদের পক্ষেই যেন মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার! একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে। এতো মানুষকে যারা হত্যা করেছে সেই শহীদ পরিবারের কী বিচার চাওয়ার অধিকার নেই? একাত্তরের গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের কী শহীদ পরিবারগুলো বিচার চাইবে না? তিনি বলেন, আমরা দেশবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব। আমরা তা করেছি। তিনি বলেন, শুধুমাত্র মানবতার দিকে তাকিয়ে আমরা ১১ লাখ অসহায় রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। পৃথিবীর কোন দেশ এতো বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুকে জায়গা দেয়নি, দিতে পারেনি। এতো বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দেয়ার পরও সেটি মানবাধিকার রক্ষা না হলে কী যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা কী মানবাধিকার হবে?

প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রবাসী বাঙালীদের ভূমিকার ভূঁয়সী প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোলমডেল। বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। দেশের এই উন্নয়নে প্রবাসীদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা বিদেশীদের কাছে হাত পেতে চলব না, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব। আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। তিনি বলেন, নৌকা মার্কা আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে, বাংলায় কথা বলার অধিকার দিয়েছে। নৌকা মার্কায় ভোট দিলেই যে দেশের উন্নয়ন হয়, দেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যায়- আমরা তা প্রমাণ করেছি। বাংলাদেশের মানুষকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।

কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন শেষ হওয়ার শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাঙালীদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান ছাড়াও স্থানীয় সময় রাতে লন্ডনের রাজপ্রসাদ বাকিংহাম প্যালেসের রয়্যাল এ্যালবার্ট হলে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মদিনের পার্টিতে যোগদান করেন। ছয় দিনের সফল শেষে আজ শনিবার বিকেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগের কথা রয়েছে।