আজ শনিবার, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মাদ্রাসায় শিশু ছাত্রকে নির্মম নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সিদ্ধিরগঞ্জের একটি আবাসিক মাদ্রাসায় মুখস্ত পড়া বলতে না পাড়ায় ১১ বছর বয়সী এক শিশু ছাত্রকে মেঝেতে উপুড় করে শুইয়ে নির্মমভাবে পিটিয়েছেন মাদরাসা শিক্ষক হাফেজ মাওলানা সাইফুল ইসলাম। তিনি বেত্রাঘাতের ঘটনা পরিবারকে জানাতে শিশুটিকে নিষেধও করেন। কিন্তু সাপ্তাহিক ভিসিটে শিশুটির মা তার সাথে দেখা করতে আসলে কাঁদতে কাঁদতে সে ঘটনাটি তার মাকে জানায়।
গত রোববার ভোরে সিদ্ধিরগঞ্জের আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানীনগর মাদরাসায় এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার তিনদিন পর বিষয়টি জানাজানি হলে বুধবার দুপুরে ওই শিক্ষককে বরখাস্তের কথা জানায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
নির্যাতনের শিকার শিশুটির নাম মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তালহা। সে মাদানীনগর মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র। গত ১৩ মাস যাবৎ মাদরাসাটির আবাসিক বোর্ডিং এ থেকে পড়াশোনা করছে শিশুটি। তাদের বাড়ি সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর এলাকায়।

শিশুটির পিতা আব্দুল হালিম অপু বলেন, গত রোববার ফজর নামাজের পর পড়া ভুলে যাওয়ায় হেফজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ মাওলানা সাইফুল ইসলাম তার ছেলেকে বেত দিয়ে বেধরক পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। বেত্রাঘাত করায় তার শিশু ছেলের পশ্চাদ্দেশে রক্ত জমাট বেঁধে কালোসিরা পড়ে গেছে বলে জানান।
তিনি বলেন, নির্মমভাবে এই নির্যাতনের পরও মাদরাসা থেকে আমাদের কাউকে জানানো হয়নি। নির্যাতনের ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য ছেলেকেও শাসান ওই শিক্ষক। ভয়ে ছেলেও আমাদের কিছু বলেনি। সপ্তাহে একবার ছেলের সাথে দেখা করার সুযোগ থাকে। গত মঙ্গলবার বিকেলে ছেলের মা মাদরাসায় ছেলেকে দেখতে গেলে এ ঘটনা আমরা জানতে পারি। পরে আমরা মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কাছে এই ঘটনার কারণ জানতে চাই। তখন তারা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
আব্দুল হালিম বলেন, বড় ছেলে হাইস্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ে। ছোটছেলেকে মাদরাসায় পড়তে দিয়েছিলাম। শিক্ষকরা শাসন করতে পারেন কিন্তু যেভাবে আমার শিশু ছেলেটাকে মারা হয়েছে সেইটা কেউ করে না। এর আগেও মারধরের কথা ছেলে আমাদের জানিয়েছে। শিক্ষকরা একটু-আধটু শাসন করবেই ভেবে কিছু বলিনি। কিন্তু এইবার তো সবকিছুর সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এমনটা হবে জানলে তো এই মাদরাসায় দিতাম না।

নির্যাতনের শিকার শিশু তালহা বলেন, ফজরের নামাজের পর হুজুর পড়া ধরেন। ওইদিন শরীরটা একটু অসুস্থ ছিল। পড়া পারি নাই দেখে আমাকে উপুড় করে শুইয়ে মোটা বেত দিয়ে পাছায় অনেকগুলো বাড়ি মারে। অনেক ব্যথা করছে। আমার কাছে নাপা ট্যাবলেট ছিল, ওইটা খাওয়ার পরে ব্যথা একটু কমছে। এখনও ব্যথায় ঠিকমতো বসতে পারি না।
শিশুটি আরও জানায়, এর আগেও পড়া না পারায় উনি মারছেন। মারধরের কথা কাউকে বলতে নিষেধ করে দেন।

এই বিষয়ে কথা বলতে মাদরাসায় গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনের নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

পাওয়া যায়নি মাদরাসার মুহতামিম (অধ্যক্ষ) হাফেজ মাওলানা ফয়জুল্লাহকেও। মাদরাসার পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আবুল ফাতাহ। তিনি দাবি করেন, ঘটনা রোববার ঘটলেও বিষয়টি মাদরাসার কেউ জানতেন না। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিশুটির অভিভাবক মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায়। বুধবার দুপুরে এক জরুরি সভার সিদ্ধান্তে অভিযুক্ত শিক্ষককে বরখাস্ত করেছেন মাদরাসার অধ্যক্ষ। একইসাথে এই ধরনের নির্যাতনের ঘটনা যাতে আগামীতে কেউ না করেন সেই ব্যাপারে মাদরাসার সকল বিভাগীয় প্রধানকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

আবুল ফাতাহ বলেন, এই ধরনের কাজের প্রতি মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কোন সমর্থন নেই। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই ঘটনায় যদি অভিভাবকরা আইনগত ব্যবস্থা নেন তাহলে আমরা সহযোগিতা করবো।

এদিকে খবর পেয়ে ঘটনার তদন্তে মাদরাসায় গিয়েছিল সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল পুলিশ। এই বিষয়ে ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলেছি। তারা অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।