আজ মঙ্গলবার, ১২ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের কোটি টাকার যন্ত্রপাতি বিকল!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জের সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য কোটি টাকার মেশিনারী থাকা সত্বেও চরম ভোগান্তীতে রোগীরা।

শহরের অলি-গলিতে ব্যাঙের ছত্রাকের মতো গজিয়ে উঠেছে নামি বেনামী একাধিক ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। আধুনিক, অত্যাধুনিক, দেশি-বিদেশী বাহারী মেশিনারীজ দিয়ে সাজানো এই সকল ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলো। এসকল ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের রয়েছে নিজস্ব বিস্তৃর্ন নেটওয়ার্ক। যার অধিকাংশেরই অবস্থান নারায়ণগঞ্জের সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোর জরুরী বিভাগ, ডাক্তারের চেম্বারসহ হাসপাতালের ভিতর ও বাহিরে। এদেরও রয়েছে একটি পরিচয় কিংবা ডাক নাম। নগরবাসী এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে তারা এক নামে পরিচিত সেটা হল ‘দালাল’। ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোতে কর্মরত এ সকল ব্যক্তি কিংবা দালাল চক্রগুলো আঠার মতো লেগে থাকে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে।

গতকাল সকালে সরেজমিনে নারায়নগঞ্জ ১০০ শয্যা ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে সকাল থেকে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। সকাল ৯ টা ১০ মিনিটে শুরু হয় রোগীদের পেসক্রিপসন নিয়ে সিরিয়াল দেয়া। প্যাথলজি বিভাগের ১১৫ রুমে নিয়োজিত কর্মচারীরা। ৯ টা ২০ শুরু হয় রোগীদের স্যামপল নেয়া এবং আলট্রাসনোগ্রাম। রোগীদের উপচে পড়া ভিড় ও অতিরিক্ত রোগী থাকা সত্বেও সকাল ১১ মধ্যেয় শেষ করে দেয় প্যাথলজি বিভাগের ডাক্তার এবং কর্মকতা কর্মচারীরা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এ বিভাগে কর্মরত শ্রমিক প্রদিপের মাধ্যামে জানা যায়, সকালে রোগীদের স্যামপল গ্রহন করা হয় আর পরের দিন পরীক্ষার রির্পোট প্রদান করা হয়। আর এতে করে সাধারণ রোগীদের যেতে হয় নগরীর যে কোন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে।

আরো জানা যায়, এ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে সকল ধরনের পরীক্ষার যন্ত্রপাতি থাকা সত্বেও সাধারণ রোগীরা সকাল ১১ টার পর থেকে আর পরীক্ষা করার সুয়োগ পাচ্ছেন না। ফলে তাদের যেতে হচ্ছে বিভিন্ন ডায়াগনেটিক সেন্টারে। হাসপাতালের আশেপাশে দেখা যায় বিভিন্ন নামে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এজেন্টরা রোগীদের কাছ থেকে ডাক্তারের প্রসক্রেপশন দেখছে কারন তাদের ডায়াগনেটিক সেন্টারে পরীক্ষা করতে দিয়েছে কিনা। এছাড়া বর্হি বিভাগ ও জরুরি বিভাগের রোগীদের হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগে থাকা সত্বেও পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন ডায়াগনেটিক সেন্টারে।

রোগী আনোয়ারা হোসেন বলেন, সকাল থেকে ¯িøপ জমা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এখন বলছে আলটাসনোগ্রাম করবে না। আগামী কাল সকালে আসতে বলছে। আলী আকবর সাহেব তিনি এখানে সিপ্ল এবং পরীক্ষা টাকা গ্রহন করছেন। এবং তারা আমাদের সাথে খারাপ আচরন করছেন যাতে করে আমরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাই।

প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষা করতে আশা রোগী আলেয়া বেগম বলেন, আমি একজন ক্যানসারের রোগী গত তিন যাবৎ হাসপাতালে আসতেছি কিন্তু ডাক্তারদের কাছে অনুরোধ করছি আমাকে পরীক্ষা করার সুযোগ দেওয়া জন্য। কিন্তু আজকেও ৩ ঘন্টা যাবৎ অপেক্ষা করছি কিন্তু এখন পর্যন্ত ডাক্তারের ¯িøপ জমা নেয় নি। সরকার সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যখাতের জন্য ভাল ব্যবস্থা করেছেন। নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষা করার জন্য সকল মেশিন থাকার পারও আমরা চিকিৎসা পাচ্ছি না।

নারায়ণগঞ্জের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আসাদুজ্জামান দৈনিক সংবাদচর্চাকে জানান, রোগীদের কাছ থেকে সকালে স্যাম্পল নেওয়া হয় কারন পরীক্ষা করতে অনেক সময় লাগে। এ সময়ের মধ্যে যে সকল রোগীরা পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল দিতে পারেন শুধু মাত্র তারাই সুযোগ পান। এছাড়া কর্তৃপক্ষ যদি বিরতহীনভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করেন তাহলে অর কোন রোগীদের বাহিরের কোন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোতে যেতে হবে না।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন এহসানুল হক জানান, ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের নিয়োজিত জনবল দিয়ে প্যাথলজি বিভাগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে প্যাথলজি বিভাগ পরিচালনার সময় সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত।

এছাড়া তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আগত রোগীরা যাতে যথা সময়ের মধ্যে প্যাথলজি বিভাগের সকল সুযোগ সুবিধা পায় সে বিষয়ে আমি নজর রাখবো।