আজ বৃহস্পতিবার, ২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভাড়াটিয়ারা খাদ্য পাচ্ছে না,গভীর রাতে মায়ের আর্তনাদ

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত নারায়ণগঞ্জ । থেমে গেছে অর্থনীতির চাকা। সরকারী বেসরকার সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লকডাউন করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে নারায়ণগঞ্জে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। খাদ্য সংকট দূর করতে সরকার , সমাজের বিত্তবান এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকেও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু খাদ্য সামগ্রী বিতরণে নারায়ণগঞ্জে বৈষম্য দেখা দিয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত ভাড়াটিদের ঠিকমত খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে না। অনেকে খাদ্যের অভাবে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালাচ্ছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২ টায়  সিদ্ধিরগঞ্জের ডিএনডি বাধের উপর নুসরাত নামের এক মহিলা খালি ব্যাগ হাতে ঘুরছিলেন। তখন র‌্যাব-১১’র টহলরত একটি টিমের নজরে পড়েন তিনি।

নুসরাত র‌্যাব সদস্যদের জানান , আমার দুইটা বাচ্চা। বাচ্চা দুইটা আজকে না  খাইয়া থাইকা কাঁনতে কাঁনতে ঘুমিয়ে পড়ছে । ঘুমানোর পর আমি গেছি চেয়ারম্যানের কাছে। খাওনের কথা কইছি। তারা বলছে, ভোটার আইডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধন এগুলো নিয়ে আয়। আমি বললাম মামা  আমি তো আপনেগো এলাগায় থাকি। নয় তো, যেই এলাকায় থাকোস ওই এলাকার একটা সিগন্যাচারটা নিয়ে আয়। আমি কই মামা দেহেন যাগো বাড়ি ঘর আছে তাদেরই দেন। আমরা তো ভারা । আপনারা তো আমাগো দিয়েই একটা ইয়া করেন। আপনে যদি এ রকম করেন তাহলে আমরা কই যামু। যখন এই কথা কইছি হেয় কি করল আমার হাতে একটা বাড়িমারলো। ওখানকার কয়েকটা পিচ্চি পোলাপানে । আমারে কইতাছে  আপনে যান যান  এনতে সরেন, আপনের লাগতোনা। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা ওই মহিলাকে প্রশ্ন করে আপনে কি করেন? মহিলাটা উত্তর দেয় আমি শাক বেচি ( বিক্রি) চিটাগাংরোড এলাকায়। আমার হাজবেন্ডটা বাজান এমনি নিশাপানি করে তো ছাইড়া দিছি।

রাত দুইটার সময় কেনো ঘুরতেছেন প্রশ্নের  জবাবে মহিলা বলেন, বাজান দুইটা বাচ্চা না খাইয়া ঘুমাইয়া গেছে। আমি মা আমি তো কিছু করতেও পারি না। নাই একটা চাকরি ,নাই একটা কিছু। আমার তো আমার বাচ্চাগুলার লাইগা কষ্ট লাগে।  আমি কারে কমু এই কতা ডা! না পারি কারো কাছে একটা টাকা চাইতে! চাইতে গেলে দুনিয়ার কতা হুনি! আমার বাড়ি বরিশাল । এখানে ভাড়া থাকি।

পরে র‌্যাব সদস্যরা ওই মহিলাকে খাদ্য সামগ্রী এবং নগদ টাকা দিয়ে তার বাসায় পৌছে দিয়েছেন।

অসহায় ওই নারীর দুর্দশার কথাটি তুলে ধরে র‌্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন। তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেন, দেখুন চেয়ারম্যান সাহেব,কাউন্সিল সাহেব আরো যত সাহেব আছেন ,রাত দুইটায় একজন মধ্যবয়সী নারী কখন বাজারের খালি ব্যাগ হাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে বলেন তো?? তার সন্তান দুটি পানি পান করে ঘুমিয়েছে, হয়ত ঘুম থেকে উঠে ক্ষুদার জ্বালায় কাঁদবে,অবুঝ শিশু জানেও না মায়ের সাধ্য। হঠাৎ রাস্তায় তাকে দেখে গাড়িটা না থামালে হয়ত……।