আজ রবিবার, ১৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বক্তব্যে গোমর ফাঁস

স্টাফ রিপোর্টার :
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি ঘিরে দুই ভাগে বিভক্ত নেতারা পরস্পরের প্রতি অভিযোগের তীর ছুড়ছেন প্রতিনিয়ত। একে-অপরকে নিয়ে করছেন আক্রমনাত্মক মন্তব্য। এমন মন্তব্যের মাধ্যমে অনেকের গোমর ফাঁস হতে শুরু করেছে। সম্প্রতি আনোয়ার হোসেন-খোকন সাহা এবং জিএম আরাফাতকে ছাপিয়ে যেন আলোচনার তুঙ্গে উঠেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদা মালা এবং বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক শহীদুল হাসান মৃধা। তারা উভয়েই নিজ বলয়ে আয়োজিত দলীয় সভাগুলোতে একে অপরকে নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করছেন। এতে দুজনই দুজনের গোপন ফাঁস করায় মত্ত হয়ে উঠেছেন।
জানা গেছে, মহানগরের ওয়ার্ড কমিটি ঘিরে সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহার বলয়ে আছেন মাহমুদা মালা। অন্যদিকে, শহীদুল হাসান মৃধা আছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাতের পাশে। সম্প্রতি মাহমুদা মালা সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী এবং জিএম আরাফাতকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে যাচ্ছেন। দিচ্ছেন হুংকারও।
প্রতি উত্তরে শহীদুল হাসান মৃধা মাহমুদা মালাকে একজন টিকটকার এবং মানসিক রোগী হিসেবে আখ্যায়িত করার পাশাপাশি একটি সভায় বলেছিলেন, ‘এমপি শামীম ভাইয়ের সাথে খোকন সাহার দ্বিমত পোষন হলে এই মাহমুদা মালা শামীম ভাইয়ের শ্রদ্ধেয় মাতা বেগম নাগিনা জোহাকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছিলেন। কিছুদিন আগে দেখলাম সে আনোয়ার ভাইকে গম চোর বলেছিল। এগুলো পত্রিকায় আসছে, প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। মেয়র আইভীকে সে ব্যাকফুটে ফেলতে চায়। মাহমুদা মালাকে মেয়র আইভী যুব মহিলা লীগের সভাপতি বানাইছে। আর অ্যাডভোকেট জিয়াসমিনকে সাধারণ সম্পাদক বানাইছে মফিজ সাহেবকে ধরে। এই মালা তখন মেয়র আইভীর পায়ে ধরেছিল। বলছে আমি আপনার পাশে আছি। এই মহিলাকে আমার মানসিক রোগী মনে হয়। সে মেয়রের পরিবার নিয়ে দুঃসাহস দেখাচ্ছে। আপনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়ে কয়দিন পর পর টিকটক করতে যান, আমাদের লজ্জা করে। আমরা লজ্জা পাই।’
এদিকে, শহীদুল হাসান মৃধার এমন মন্তব্যের পর গত ১২ জুলাই তাকে নিয়ে বন্দরের একটি সভায় মাহমুদা মালা বলেছেন, ‘তার এক আত্মীয় আমাদের চেম্বারে গিয়ে বলে এসেছেন যে, আইভী আপার এক কাজ করেই তিনি ২০নং ওয়ার্ডে ডুপ্লেক্স বাড়ি করেছেন। তাই তিনি আইভী আপার জন্য শহীদ হয়ে যাচ্ছেন। ভাই আওয়ামী লীগে আপনাদের মত ঠিকাদারদের জায়গা নেই। তাই দয়া করে একটি ঠিকাদারী ফোরাম বানিয়ে সেখানে গিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলুন।’
এদিকে, ডুপ্লেক্স বাড়ি নিয়ে মাহমুদা মালার এমন মন্তব্যের পর শহীদুল হাসান মৃধা পাল্টা মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, আমি বা আমার প্রতিষ্ঠানের নামে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কোনো ঠিকাদারির লাইসেন্স নেই। আমি মাননীয় মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর কাছ থেকে কোনো সুবিধা গ্রহণ করিনি। যদি মাহমুদা মালা প্রমাণ করতে পারে যে, আমি মেয়র আইভীর কাছ থেকে কোনো সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছি, তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দিব। আমি নিয়মিত ঢাকা ওয়াসার একজন ঠিকাদার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত আছি এবং নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের সামনে এমন ভুল তথ্য দেয়ার জন্য আমি আপনার বক্তব্যের নিন্দা জানাই।’
মালাকে সতর্ক করে শহীদুল হাসান মৃধা বলেছিলেন, ‘আমি বলবো আপনি চুপ হয়ে যান। আর না হয় সামনে আপনার জন্য অনেক খারাপ জিনিস অপেক্ষা করছে। হয়তো বা আপনি চিন্তাই করতে পারবেন না কী ঘটতে যাচ্ছে।’
রাজনৈতিক বোদ্ধা বহল বলছেন, বিভেদে জড়িয়ে উভয় পক্ষ থেকে পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে লিপ্ত হওয়ায় উভয় পক্ষেরই গোপন ফাঁস হতে শুরু করেছে। দুই বলয়ের পরস্পর বিরোধী এমন আগ্রাসী বক্তব্যের ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে নতুন কোনো গোমর বা গোপন ফাঁস হয় কিনা- সেই সম্ভাবনা থেকেই যায়।