আজ বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফতুল্লা ইউপি নির্বাচন: আ.লীগে জটিল সমিকরণ

বিষাদসিন্দু:

মামলার জটিলতা কেটেছে। প্রায় তিশ্র বছর পর নির্বাচনী ডামাঢোল বেজেছে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদে। অনেকেই প্রার্থী হবেন। এমনটাই শোনা যাচ্ছে। তবে, জটিলতা তৈরি হচ্ছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরকে কেন্দ্র করে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকাও বেশ লম্বা হচ্ছে।

সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা তৈরি করতে সোমবার (১৫ নভেম্বর) ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বর্ধিত সভা করে ফতুল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। সভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আটজনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

তারা হলেন, ফতুল্লা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লূৎফর রহমান স্বপন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিছিল আলী, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ফরিদ আহম্মেদ লিটন, থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম, মজিবুর রহমান, যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব এবং রেহান শরিফ।

এদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সকলেই সাংসদ শামীম ওসমান অনুসারি। ফলে প্রার্থীতা প্রশ্নে ছাড় দেওয়া-নেওয়া নিয়ে জটিলতাও তৈরি হতে পারে। এমনকী মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হলে নিজ বলয়ের মধ্যেই গ্রুপিং সৃষ্টি হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

একটি সূত্র জানায়, আসন্ন ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকার মজিবুর রহমান। তিনি শামীম ওসমানের কর্মী তা বুঝাতে বেশ বড় বড় বিলবোর্ডও সাঁটিয়েছেন। ইতোপূর্বে ভাতিজা ছাত্রলীগ নেতা হিমেল ও তাকে ঘিরে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিলো।

অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সক্রিয় রাজনীতিতে রয়েছেন মীর সোহেল আলী, ফরিদ আহম্মেদ লিটন, ফাইজুল ইসলাম ও জানে আলম বিপ্লব। তাদের মধ্যে সোহেল ও লিটনের গ্রহণযোগ্যতাই বেশি।

এদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশী লূৎফর রহমান স্বপন দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে সাবেক এমপি সারাহ বেগম কবরী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানিয়েছিলেন। এবং তিনি কবরী পন্থী আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। পরবর্তীতে শামীম ওসমান এমপি নির্বাচিত হলে তিনি তার বলয়ে এসে ঢুকে যান। লূৎফর রহমান স্বপনের ভাই, ভাগিনা বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।
এছাড়াও এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন মিছির আলীও। তিনি ফতুল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। একসময় তিনি রাজনীতি সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও এখন আর আগের মত তেমন সক্রিয় নন বলেই শোনা যাচ্ছে। তবে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার তিনিও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। চাইছেন দলীয় মনোনয়নও।

যদিও মিছির আলী বলেছেন, তারা শামীম ওসমানের কর্মী। গঠনতন্ত্র অনুসারে তারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা চূড়ান্ত করেছেন। তা থানা কমিটির কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যাচাই বাছাই শেষে জেলা কমিটির হাত ঘুরে কেন্দ্রে যাবে তালিকা। কেন্দ্র থেকে যাকেই মনোনীতি করবে তারা সকলেই তার পক্ষে কাজ করবেন।

তবে, বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হতে দীর্ঘদিন ধরেই মুখিয়ে আছেন তিনজন। তারা হচ্ছেন, মীর সোহেল আলী, ফরিদ আহম্মেদ লিটন এবং ফাইজুল ইসলাম। এদের মধ্যে সোহেল ও লিটন চেয়ারম্যান নির্বাচন করবেন বলে দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয়ভাবে সামাজিক কাজকর্মও করে যাচ্ছিলেন। এমনকী তারা নির্বাচন করবেন সে ঘোষণাও ইতোপূর্বে তারা দিয়েছেন। ফলে নির্বাচনে তারা যদি মনোনয়ন না পান, সে ক্ষেত্রে দলীয়ভাবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কারো কারো মতে, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে সাংসদ শামীম ওসমান বলয়ে কিছুটা হলেও ফাঁটল সৃষ্টি হতে পারে। তবে, প্রত্যেকেই সাংসদের অনুগামি। সে হিসেবে সাংসদের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ না-ও যেতে পারেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তবে, এখন দেখার বিষয় শেষতক ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে কী হয়।

তবে, কারো কারো মতে, যোগ্যতা, সক্রিয়তার প্রশ্নকে যদি পাশ কাটিয়ে অর্থের কাছে দলীয় মনোনয়ন তুলে দেওয়া হয়, তাহলে কোন্দলটা ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে।