নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাসিম ওসমান নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এক উজ্জল নক্ষত্রের নাম। তাঁর প্রয়ানে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন নেতৃত্ব শুণ্যতা তৈরি হয়েছে তার চেয়ে বেশি শুণ্যতা তৈরি হয়েছে তার দল জাতীয় পার্টিতে। নাসিম ওসমান প্রয়াত হওয়ার পর তার দল জাতীয় পার্টি নারায়ণগঞ্জ থেকে এক প্রকার গত হয়ে গেছে বলে আক্ষেপ করে জাতীয় পার্টিল এক প্রবীন নেতা বলেন, আমাদের নেতা প্রয়াত এমপি নাসিম ভাই সংগঠনের একেবারে টপ লেভেলের নেতা থেকে একজন কর্মী পর্যন্ত সবাইকে চিনতেন, সবার খোঁজ খবর নিতেন। তাঁর প্রয়ানের পরও দলের দুইজন এমপি নারায়ণগঞ্জে। তারা দলকে তেমন সংগঠিত করার কাজ করেননি।
মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টির হাল ধরে ছিলেন, চার বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য একেএম নাসিম ওসমান। কাগজে-কলমে জেলা ও শহর জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে থাকলেও নেপথ্যে দলটির প্রধান শক্তি ছিলেন তিনিই।
সাধারণ কর্মীদের অভিমত, নাসিম ওসমানের অবর্তমানে এই দলটিকে পরিচালনা করার মতো বলিষ্ঠ কোনো নেতৃত্ব এখনও তৈরি হয়নি এ জেলায়। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর জেলা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে বাতি দেয়ার লোকও ছিল না। ২০০৩ সালে নাসিম ওসমান বেনাপোল সীমান্তে গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর মুক্তির দাবিতে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করে নেতাকর্মীরা তাক লাগিয়ে দেন। এর কিছুদিন পরই জেলা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা হানা দিয়ে জাতীয় পার্টির অফিস দখল করে সেখানে সাইনবোর্ড থেকে জাতীয় পার্টির নাম মুছে দিয়ে সেখানে জিয়া পরিষদের নাম লিখে দেয়। বিএনপি-জামায়াত জোটের এমন নিপীড়নের কারণে জাতীয় পার্টি নারায়ণগঞ্জের রাজপথে প্রকাশ্যে না থাকলেও পরোক্ষভাবে তাদের সংগঠনের কাজ চালিয়ে যায়। ৫ বছরের অনুপস্থিতির পর ২০০৬ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাসিম ওসমান হাজার হাজার কর্মী নিয়ে মাঠে নামেন এবং জাতীয় পার্টির বিশাল সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করেন। কিন্তু ১/১১-এর কারণে আবারও কার্যক্রমে ভাটা পড়ে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট থেকে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর ও বন্দর) আসনে মনোনয়ন পান নাসিম ওসমান। প্রায় ৪৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে তিনি বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করেন।
এরপর ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাসিম ওসমান পূনরায় নারায়ণগঞ্জ সদর আসনে এমপি নির্বাচিত হন এবং একই সঙ্গে লিয়াকত হোসেন খোকা সোনারগাঁ আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। জেলার ৫টি আসনের মধ্যে দুটি আসনে জাতীয় পার্টির এমপি পাওয়ায় সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য ফিরে আসে। পরবর্তীতে নাসিম ওসমানের মৃত্যুতে জাতীয় পার্টির উদিত সূর্য অস্তমিত হয়ে পরে। যা আজও বিদ্যমান।
নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দর এলাকার জাতীয় পার্টির কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, এ জেলায় শহর ও বন্দর এলাকায় জাতীয় পার্টির অবস্থান বেশ মজবুত ছিল, যার ফলে নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টি থেকে এককভাবে নির্বাচন করেও ২০০১ সালে প্রায় ৩৫ হাজার ভোট পেয়েছিলেন।
কর্মীদের অভিযোগ, বর্তমানে জেলার শীর্ষ নেতাদের সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে নারায়ণগঞ্জে নিস্ক্রিয় প্রায় জাতীয় পার্টি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ একেএম নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর অভিভাবকহীন হয়ে পরা নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন জাতীয়পার্টির দুই প্রভাবশালী এমপি সেলিম ওসমান ও লিয়াকত হোসেন খোকা। যার ফলশ্রুতিতে নারায়ণগঞ্জে অস্তিত্বহীন অবস্থায় একসময়ের প্রভাবশালী ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি। বিশেষ বিশেষ দিবসে ব্যানার ফেষ্টুন আর ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ থাকে নেতাকর্মীদের কার্যক্রম।
বন্দরের নেতাকর্মীরা অভিযোগের সুরে বলেন, নাসিম ওসমান ছিলেন বন্দরবাসীর প্রাণের মানুষ। তিনি বন্দরের সর্বস্তরের মানুষের আপনজন ছিলেন। গণমানুষের এই নেতার অকাল মৃত্যুর শোক আজও ভুলতে পারেনি নেতা-কর্মীরা। তেমনি নাসিম ওসমানের অভাব পূরণ করতে পারেনি কেউ। অবমুল্যায়নের শিকার হয়ে নেতা-কর্মীরা এখন দিশেহারা। দলে নেতৃত্ব দেয়ার মতোও কেউ নেই। এমতাবস্থায় নাসিম ওসমান পতœীকে দলের হাল ধরার অনুরোধ করেন নেতা-কর্মীরা।
এদিকে জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে উপনির্বাচনে বিভিন্ন এলাকায় কর্মী সভায় পারভীন ওসমান এবং মেয়ে আফরিন ওসমানের কান্না এবং আবেগাপ্লুত বক্তব্য আজও ভুলতে পারেনি কেউ। গণমানুষের নেতা নাসিম ওসমানের জানাযা-ই প্রামাণ করে তিনি কতটা জননন্দিত ছিলেন। সেই নাসিম ওসমানের কর্মীরা এখন ভালো নেই। দলের কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ। নেতা-কর্মীদের দাড়ানোর মতো জায়গা নেই। যারা শীর্ষ পদে আছেন তাদের দু একজন ছাড়া বাকী সবাই অবহেলিত। নিজেদের যেখানে কোন অবস্থান নেই, কর্মীদের জন্য কি করবে নেতারা? এমতাবস্থায় দলের হাল ধরতে অধিকাংশই পথ চেয়ে আছে। নেতার অভাব পূরণে তাকিয়ে আছে সেই নাসিম পরিবারের দিকেই।