স্টাফ রিপোর্টার :
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইন শৃংখলা কমিটির উপদেষ্টা পদে আছেন এই জেলার পাঁচ সংসদ সদস্য। পদাধিকার বলে উপদেষ্টা হলেও আইন শৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় তাদের সম্মিলিত অংশগ্রহণ দেখা যায় কালেভদ্রে। কেবল পাঁচ এমপিই নয়; বরং সিটি করপোরেশনের মেয়রকেও হরহামেশা দেখা যায় না। মাসিক সভায় পাঁচ এমপির পাশাপাশি মেয়রও অংশ নিয়েছেন- এমন ঘটনা বেশ বিরল। গত ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত মাসিক সভাতেও ছিলেন না মেয়র এবং এমপিরা। তাদের অংশগ্রহণ না থাকায় উঠেছে প্রশ্ন। সভার আয়োজক বা ব্যবস্থাপকদের পক্ষ থেকে মেয়র এবং এমপিদের সাথে যোগাযোগের গ্যাপ- নাকি ব্যস্ততার বাধায় অংশ নিতে পারেন না তারা- তা নিয়েই চলছে আলোচনা।
সর্বশেষ মাসিক সভায় এই বিষয়টি উত্থাপন করেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন। তিনি বলেন, ‘জেলার পাঁচ জন এমপি, সিটি মেয়র, র্যাবের সিইও সহ এই কমিটির সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত সভাগুলোতে নিয়মিত উপস্থিত হওয়া। এতে অধিকতর আলোচনা করা সহ বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে দ্রুত সমাধান সম্ভব বলে আমি মনে করি।’
জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় চলমান সমস্যা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি তা সমাধানের লক্ষ্যে পথ বের করেন দায়িত্বশীলরা। সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি তথা মেয়র এবং এমপিদের অংশগ্রহন থাকলে এই সমাধানের পথ আরও সুগম হয়ে উঠে। তবে প্রতিমাসে নিয়মিত সভা হলেও মেয়র এবং এমপিদের নিয়মিত অংশগ্রহণ না থাকায় এর কাঙ্খিত সুফল মিলছে না বলে কথিত আছে।
নারায়ণগঞ্জের পাঁচ এমপির মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক), নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সেলিম ওসমান রয়েছেন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের অনেকাংশ সিটি করপোরেশনের মধ্যে থাকায় সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর সাথে ওই দুই আসনের এমপিদ্বয়ের সমন্বয় থাকাটা জরুরী বলে মনে করছেন বোদ্ধা মহল। যদিও মেরুগত নানা কারণেই তাদের মাঝে দূরত্ব দেখা যায় সর্বদা।
জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে মেয়র এবং এমপিদের এক টেবিলে বসাতে না পারলেও নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব তা করে দেখিয়েছে। মেয়র আইভী এবং এমপি সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান সহ ডিসি এসপিকে একটেবিলে বসিয়ে নগরীর নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এর সুফলও দেখা গিয়েছিল নগরীতে।
বোদ্ধা মহল বলছেন, আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভাতেও যদি আয়োজকরা সেই ভূমিকা রাখতে পারতেন- তাহলে শহরের পাশাপাশি শহরতলীতেও শৃঙ্খলা ফিরে আসার সমূহ সম্ভাবনা দেখা যেত।
এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘এমপিরা হলেন আইনশৃঙ্খলা কমিটির উপদেষ্টা। তাদের এই মিটিংয়ে নিয়মিত অংশগ্রহণ করা উচিৎ। আমি এটা গত মিটিংয়ের মধ্যেই বলেছি। এমপিদের ব্যস্ততা থাকবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে পাচজনের একজনও অংশ নিবে না! তাহলে আলোচ্য বিষয়ের সমাধান হবে কিভাবে। এখানে নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয় এবং সমস্যার সমাধানের পথটাও এই আলোচনার মাধ্যমে উঠে আসে। এই সভাগুলোতে এমপিদের থাকা উচিৎ। সকলের সমন্বয় থাকা উচিৎ। উপজেলার চেয়ারম্যানদের সাথে এমপিদের সমন্বয় না থাকলে তারা কাজ করবে কিভাবে।’
আব্দুল হাই বলেন, ‘এমপিদেরকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মিটিংয়ের বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়। আমাকে চিঠি দিলে তাদের কেন দিবে না। এমপিরা উপদেষ্টা। অফিসিয়ালি চিঠি পেয়েও তারা যদি না আসে এটা দুঃখজনক। আমাদের মেয়র মহোদয়কেও দেখা যায় না। তিনি সিটি করপোরেশনের একজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে দেন, আবার কখনো পাঠান না। সিটি করপোরেশনের মধ্যে কী কোনো সমস্যা নেই? অনেক আছে। তাই মিটিংয়ে মেয়রের অংশগ্রহণ করা উচিৎ। জেলা প্রশাসকের অধিনে অনেকগুলো কমিটি রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হলো এই আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটি। এই মিটিং তো সারাদিন হয় না। ১১টার দিকে শুরু হলে সাড়ে ১২টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। আমি আশা করি, মানুষের কল্যাণের জন্য জনপ্রতিনিধিরা আরও বেশি দায়িত্বশীল হবেন এবং মিটিংয়ে নিয়মিত অংশগ্রহণ করবেন।’
জানতে চাইলে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. নূরউদ্দিন দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, আমাদের মনে হয় বিষয়টা এমন যে, অভিভাবক থেকেও আমরা অভিভাবকহীন অবস্থায় আছি। ধরুন, আমার মাথায় তাজ আছে, কিন্তু সেই তাজ কোনো কাজে আসে না। অথবা হাতে ছাতা আছে, কিন্তু সেই ছাতা আমরা রোদ-বৃষ্টিতে কাজে লাগাতে পারি না। এটা একটা তামাশার মতো হয়ে যাচ্ছে। আমাদের নির্বাচিত পাঁচজন এমপির মধ্যে ব্যস্ততার কারণে হয়তো এক-দুইজন এমপি না-ও থাকতে পারে, কিন্তু জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে পাঁচজনই যদি অনুপস্থিত থাকে, তাহলে বাকি যারা উপস্থিত থাকছেন, তারা সমাধানের কাজটা কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।’
নূর উদ্দিন বলেন, ‘নাগরিক ও সামাজিক সমস্যা দূর করণে কোথায় বাধা রয়েছে, কোথায় কমতি দেখা দিচ্ছে, এসকল সমস্যা সমাধানের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় সেই আলোচনাটা হয়ে থাকে। কিন্তু যাদের মূল ভূমিকা রাখার কথা তারাই অনুপস্থিত, ফলে ঘাতটি পূরণে কিংবা সমস্যা সমাধানে অন্যান্যরাও হয়তো সক্রিয় হচ্ছে না অথবা তারা সাহস পাচ্ছে না। আমরা প্রত্যাশা রাখি যে, নির্বাচিত এমপি, মেয়র এবং সংশ্লিষ্ট সকল জনপ্রতিনিধিগণ আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার বিষয়ে আরো বেশি দায়িত্ববান হবেন এবং গুরুত্ব সহকারে সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখবেন।’
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলার উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) ও ভারপ্রাপ্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মৌরীন করিম দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘মেয়র এবং এমপি মহোদয়দের সাথে আমাদের সমন্বয়ের কোনো গ্যাপ নেই। এমপিরা আমাদের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির সভার উপদেষ্টা। সভায় তাদের যেধরনের মতামত প্রয়োজন- তা আমরা পেয়ে থাকি। তারা অংশগ্রহণ করে থাকেন। হয়তো ব্যস্ততার কারণে দুই একটা সভায় অনেকে আসতে পারেন না। তবে এটা গ্যাপ নয়। ওনাদের জায়গা থেকে আমাদেরকে পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করে থাকেন, যেন আমাদের মিটিংগুলো আরো বেশি ফলপ্রসু হয়। আসলে তারা যেহেতু আইন প্রণেতা- সেহেতু সেই সংক্রান্ত ব্যস্ততা তাদের থাকে। এই কারণে হয়তো অনেক সময় মিটিংয়ে অংশ নেয়ার সুযোগ হয় না। তবে এটাকে গ্যাপ বলা যাবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মৌরীন করিম বলেন, ‘তারা অংশগ্রহণ করতে না পারলেও তাদের সাথে আমাদের সর্বদা যোগাযোগ থাকে। আমাদের জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং পুলিশ সুপার- তাদের মাধ্যমে ওনাদের ম্যাসেজটা পৌছে দেয়া হয়। তো যোগাযোগ এবং তাদের অংশগ্রহণ দুটোই আমরা পেয়ে থাকি।’