সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জ নগরীর প্রাণকেন্দ্র চাষাড়া আসলেই চোখে পরে রাস্তার আশে পাশে বিভিন্ন খাবারের পশরা সাঁজিয়ে বসে আছে হকার বা বিক্রেতারা। বিভিন্ন অলি গলি, ফুটপাতসহ বিশেষ করে স্কুল- কলেজের সামনে অসংখ্য খোলা খাবার বিক্রি হচ্ছে। উচ্চ শ্রেণীর মানুষ এসব খাবার কম খেলেও স্বল্প আয়ের মানুষরা প্রায়ই ফুটপাতের খাবার খেয়ে থাকেন।
আর স্কুলের শিক্ষার্থীদের পছন্দের ১ম তালিকায় রয়েছে এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার। অভিভাবকের শত বাধা থাকা স্বত্ত্বও তারা এসব খাবার খাচ্ছে। ফুটপাতে এমন কিছু মুখরোচক খাবার রয়েছে যা দেখলে লোভ সামলানো অনেকের পক্ষেই কঠিন। কিন্তু খুব কম মানুষই জানে এসব খাবার কতটা ভয়ঙ্কর।
নগরীর প্রাণকেন্দ্র চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিদিনই দেখা যায় বিভিন্ন ফুচকার দোকানীরা ফুচকার পসরা সাজিয়ে বসেছেন। দেদারসে এসব ফুচকা গিলছেন বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্রীরা। সাধারনত ফুচকার ক্রেতা বেশি মেয়েরাই হয়ে থাকে। এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন যায়গায় দেখা যায়, ঝাল মুড়ি, গরুর বট ভাজা, হালিম, বিভিন্ন ধরনের পানীয় সাধারন মানুষ সারাদিনই খাচ্ছেন।
তবে নিশ্চিন্তে যারা বাইরের এসব মুখরোচক খাবার গলাধঃকরণ করছে প্রতিদিন, তাদের জন্য খারাপ খবর আছে। এ খবর দিয়েছে খাবারের মান পরীক্ষায় রাষ্ট্রের একমাত্র রেফারেন্স প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি (এনএফএসএল)।
গত এক বছর ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার ৪৬টি স্কুলের সামনে থেকে তারা ঝালমুড়ি, ফুচকা, ভেলপুড়ি ও আচারের নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলোতে কৃত্রিম রং, ইস্ট, ই-কোলাই, কলিফর্ম, মাইকোটক্সিন, সালমোলিনার মতো শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সব উপাদান পেয়েছে।
খাবারের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ভয়াবহ শঙ্কার কারণ আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। খোলা খাবারের জীবাণুতে খুব সহজেই শিশুরা ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিসে আক্রান্ত হতে পারে।
গবেষণার জন্য ৪৬টি ঝালমুড়ি, ৩০টি ফুচকা, ১৬টি ভেলপুড়ি ও ৪২টি আচারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ৪৬ ঝালমুড়ির সব কটিতেই মাত্রাতিরিক্ত কলিফর্ম এবং ৩টিতে সালমোনিলা পাওয়া যায়। ৩০ ফুচকার সব কটিতে মেলে কলিফর্ম, ইস্ট মোল্ড, ২৭টিতে ই-কোলাই, সব ভেলপুরিতে ই-কোলাই পাওয়া যায়। তবে আপনি বলতে পারেন এতো ঢাকার খাবার পরিক্ষা করে পাওয়া গেছে এসব
তথ্য। তবে আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, ঢাকার রাস্তার খাবার যে স্টাইলে তৈরি হয় বা যে উপাদানে তৈরি তার সকল উপাদানই নারায়ণগঞ্জের রাস্তার খাবারগুলোতে পাওয়া যায়।
নারায়ণগঞ্জ শহরে খোলা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন খাবার। সাধারন মানুষ, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও শিশুরা না জেনেই খাচ্ছে। এসব খাবার খেয়ে পেটের পিড়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। নিয়মিত মনিটরিং করা হলেও সকলের সচেতন হওয়া দরকার বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন।
নারায়ণগঞ্জ শহরের জেনারেল হাসপাতাল, চাষাড়া মোড়, ডন চেম্বার, রেল স্টেশন সহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে অবাদে বিক্রি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর খাবার। আচার, শশা, হরেক রকম শরবত, রুটি-ভাজি, পুরি, সিঙ্গারা, পিঠা ও ভাত-তরকারি সহ অনেক প্রকার খাদ্য মানুষ জেনে এবং না জেনেই খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এদিকে জেলার সিভিল সার্জন থেকে জানানো হয় ফুড ইন্সপেক্টর নিয়মিত মাঠ কায্যক্রম করছে। এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের পরামর্শ প্রদান করা হয়, যেমন পরিস্কার রাখা, কাঁচা ও রান্না করা খাদ্য আলাদা করা, ভালভাবে এবং সম্পূর্ণভাবে রান্না করা বা সম্পূর্ণ সেদ্ব করা, নিরাপদ তাপমাত্রায় খাদ্য সংরক্ষণ করা ও নিরাপদ পানি এবং উপকরণের ব্যবহার করা প্রয়োজন বলে জানান জেলার সিভিল সার্জন।
এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ১ শ’ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা: আসাদুজ্জামান জানান,
প্রতিদিন প্রায় ১০০ জন রোগি ডায়রিয়া ওয়ার্ডে আসছেন। খাবারের প্রতি অসচেতন হওয়াই এর প্রধান কারন। সকলের উচিৎ ভাল ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করা।
এবিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এহসানুল হক জানান, এ বিষয়ে নিয়মিত ফুড ইন্সপেক্টর মাঠ কার্যক্রম করছে। এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের পরামর্শ প্রদান করা হয়, যেমন পরিস্কার রাখা, কাঁচা ও রান্না করা খাদ্য আলাদা করা, ভালভাবে এবং সম্পূর্ণভাবে রান্না করা বা সম্পূর্ণ সেদ্ব করা, নিরাপদ তাপমাত্রায় খাদ্য সংরক্ষণ করা ও নিরাপদ পানি এবং উপকরণের ব্যবহার করা প্রয়োজন।