আজ শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সরকারের ঘটনাবহুল চার বছর

ঘটনাবহুল

সরকারের ঘটনাবহুল চার বছরঘটনাবহুলটি.আই.আরিফ:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০১৪ সাল হতে ২০১৮ পর্যন্ত ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্বদরবারে তার নেতৃত্বের গুণাবলির পরিচয় দিয়েছেন । অর্জন করেছেন বিভিন্ন খেতাব।

মিয়ানমার থেকে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়ায় বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রোহিঙ্গাদের প্রতি মমত্ববোধ ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ‘মানবতার মা’ বলে অভিনন্দিত হয়েছেন।

এ বছরের শেষের দিকে  জাতীয় সংসদের নির্বাচন। স্বভাবতই সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার নানামাত্রিক বিশ্নেষণ চলছে। বিশ্নেষকদের দৃষ্টিতে, সরকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেও টানাপড়েন দুর্নিরীক্ষ নয়, পথ চলতে হোঁচটও খেতে হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দুর্বল হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার সক্ষমতা হারিয়ে এখন ‘গণবিস্ম্ফোরণে’র অপেক্ষায়।

নির্বাচন, গণতন্ত্র ও সুশাসন নিয়ে মতভেদ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক জোটে সমর্থন দেওয়ায় সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফর ছিল সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হয়েছে। সার্বিকভাবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় হয়েছে।

চার বছরে সাফল্যের পাল্লা ভারী হলেও ব্যর্থতাও তুচ্ছ করে দেখার মতো নয়। আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর কিছু নেতাকর্মীর অপকর্মের কারণে সরকারের সাফল্য অনেকটা নিষ্প্রভ-বিবর্ণ হয়েছে। তাদের বেপরোয়া সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতির ঘটনা সরকার এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। অনেকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এ সময়ে সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন ধারা বেগবানই থেকেছে। নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ ও মেট্রোরেলের কাজ শুরুসহ একাধিক বড় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন হয়েছে। রাজধানীর দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে। আগুন সন্ত্রাস, বিদেশি নাগরিক ও ব্লগার হত্যার মতো বৈরী বাস্তবতা আপাতত নেই। এ সময়ে নারী ও যুবশক্তির নব অভ্যুদয় ঘটেছে।

রাজনীতিতে অস্থিরতা না থাকলেও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্টাচার ও সহিষ্ণুতা প্রায় অনুপস্থিত ছিল। আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে শোক জানাতে গেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান ফটক থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। ফেনীতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। এ ধরনের অনেক ঘটনাই ঘটেছে বিদায়ী বছরে।

এ সময়ে কয়েকজন মন্ত্রী ও এমপি নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। এ নিয়ে গণমাধ্যমে দারুণ তোলপাড় হয়েছে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার অঙ্গীকার থাকলেও দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি। জ্বালাও-পোড়াও যারা করে, তাদের সঙ্গে সংলাপ নয়- এই যুক্তিতে সরকার সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিচ্ছে। সরকার ও সরকারবিরোধী নেতাদের বেসামাল ও অশোভন কথাবার্তায় মানুষ বীতশ্রদ্ধ। কে কত খারাপ ভাষায় কথা বলবেন যেন তারই প্রতিযোগিতা চলেছে। বিএনপি দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এলে বেশ স্বস্তিতে থাকে সরকার।

এ সময়ে দল গোছাতে উদ্যোগী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অনেক নতুন মুখ এসেছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন হওয়ায় তৃণমূলে নতুন নেতৃত্বের ছড়াছড়ি। এই নেতৃত্বের মাধ্যমেই দল গুছিয়ে আনছেন শেখ হাসিনা। তিনি এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ জন্য ২৬ জানুয়ারি থেকে সাংগঠনিক সফরে বেরোচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

সরকারের চতুর্থ বছরেও সংসদ নিষ্প্রাণ থেকেছে। মন্ত্রিসভায় থেকে জাতীয় পার্টির প্রধান বিরোধী দল হওয়াটা অনেকের কাছেই কৌতুককর মনে হয়েছে। শরিক দলের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের। মন্ত্রিসভায় দপ্তর রদবদল নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে ১৪ দলে।

প্রধানমন্ত্রী সঠিক সময়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন। তার নির্দেশে সরকার দিনবদলের সনদ রূপকল্প-২০২১ এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ করছে। জাতি এখন ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বসভায় উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

সর্বোচ্চ আদালতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে সরকারের টানাপড়েনের পর প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ ছিল এ সময়ের সাড়া-জাগানো প্রসঙ্গ।

চার বছরে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী পলাতক খুনিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাটি বিচারিক আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর্যায়ে রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলার রায়ে ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায় হয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

চার বছরে সরকারের গর্ব করার মতো সাফল্যের মধ্যে রয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির রায় কার্যকর। এ সময়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

মাথাপিছু আয় ১৪৫ মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে এক হাজার ৬১০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এটি বড় অর্জন। রফতানি আয় ৩৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মূল্যস্ম্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। করদাতাকে উদ্বুদ্ধ করতে ইনকাম ট্যাক্স আইডি কার্ড প্রবর্তন ও পরিবারের সদস্যদের কর প্রদানে উৎসাহিত করার জন্য কর বাহাদুর খেতাব দেওয়া হচ্ছে। আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বৈদেশিক সহায়তায় অর্জিত প্রতিশ্রুতি ১৭ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।

এ সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নেতৃত্বের অবদানের জন্য জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনপি) সর্বোচ্চ পরিবেশবিষয়ক সম্মান ‘চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ’ এবং ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ অর্জন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আরও এগিয়ে যাবে- এ প্রত্যাশা সকল পেশার মানুষের। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে দিনবদলের অঙ্গীকারে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির কলুষমুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সুন্দর এবং উন্নয়নের পথে দ্রুত অগ্রসরমান আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে উঠবে- এটিও সবার প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশা পূরণে সরকারের সামনে আরও একটি বছর রয়েছে। নির্বাচনের বছরটিতে পথের কাঁটা সরিয়ে এগোতে হবে সরকারকে। জাতির সামনে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দরজা খুলে দিতে হবে। সেইসঙ্গে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার, আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়ন করতে হবে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ