নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা-কুড়িল-ভুলতা সড়কের শীতলক্ষ্যা নদীর নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের কাঞ্চন সেতুতে নিয়ম বর্হিভূতভাবে টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। দু’টি করে চারটি টোল কালেকশন বুথের একটি করে দু’টি অধিকাংশ সময়ই থাকে বন্ধ। নেই ডিজিটাল টোল নির্ধারণী বোর্ড। কোন কোন সময় ম্যানুয়ালি টাকা আদায় করা হয়। এশিয়ান সড়ক নামে পরিচিত ঢাকা-বাইপাস সড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ আর টোল আদায়ের ধীরগতির কারণে কাঞ্চন সেতুর দুই পাশে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। সড়ক ও জনপথের(সওজ) ভাঙাচোরা ও নির্মাণাধীন এই সড়কের কারণে প্রতিনিয়ত যানজটের সূত্রপাত ঘটছে। অফিস বন্ধের দিন ছাড়া অধিকাংশ সময়ই সেতুর উভয় দিকে ৫/৬কিলোমিটার জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। তাতে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ে। তাই কাঞ্চন সেতুর টোল আদায় বন্ধের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা, পরিবহন চালক ও এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ২০০৬ সালের অক্টোবরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া শীতলক্ষ্যা নদীর কাঞ্চনে চারলেন বিশিষ্ট প্রথম সেতু উদ্বোধন করেন। কাঞ্চনের প্রথম সেতুটি এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় ধুঁকছে। সে কারনে আরো চারলেন বিশিষ্ট দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় পরিবহন মালিকরা টোল আদায়কারীদের সঙ্গে অনৈতিক অর্থের বিনিময়ে তাদের পরিবহন সেতু পারাপার চুক্তি করে নেয়। কর্তৃপক্ষকে বাইপাস করে এসব টাকা ভাগ-ভাটোয়ারা হয়।
কাঞ্চন সলিমউদ্দিন চৌধুরী কলেজের ছাত্র ফরহাদ হোসেন বলেন, কাঞ্চন সেতুর টোল আদায় বন্ধ করে দেওয়া উচিত। গত ৬আগষ্ট ছাত্র জনতা টোলপ্লাজায় হামলা চালিয়ে অগ্নি সংযোগ করে টোল আদায় বন্ধ করে দেয়। গত ৮সেপ্টেম্বর আবারো কাঞ্চন সেতুতে টোল নেওয়া হচ্ছে। তাতে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
মুড়াপাড়া কলেজের ছাত্র জয় মন্ডল বলেন, কাঞ্চন সেতু উদ্বোধনের ১০বছর পর্যন্ত টোল নেওয়ার কথা ছিলো। টোল আদায় ব্যবসা সফল বলে ১৮বছরেও তা বন্ধ হয়নি। চলছে তো চলছেই।
গ্রীন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নিপা রহমান বলেন, কাঞ্চন সেতুতে ধীরগতিতে টোল আদায়ের কারনে সেখানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আর তা কাঞ্চন সেতুর আশপাশের এলাকা জুড়ে যানজটে পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। তখন পায়ে হাঁটাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।
গাজীপুরগামী পণ্যবাহী ট্রাকচালক আব্দুর রহমান বলেন, প্রতিদিন এই টোলপ্লাজায় কয়েক ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। পণ্য নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে সময় ও খরচ বেশি লাগছে।
ঢাকা বাইপাস সড়কের প্রজেক্ট ম্যানেজার মৌসুমি আক্তার বলেন, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সড়কের আওতাধীন ছিল। বাইপাস সড়কের আওতাধীন পিপিপি প্রজেক্টের আওতায় চলে আসে। এখন তাদের আওতাধীন ইউডিসি জেবি প্রতিষ্ঠান টোল আদায় করে রাজস্ব খাতে টাকা জমা দিচ্ছে। কাঞ্চন সেতুর সব পরিবহন থেকেই টোল আদায় করার নিয়ম। কিন্তু স্থানীয় মালিকদের পরিবহন থেকে টোল আদায় হচ্ছে না এমন অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কাঞ্চন সেতু এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) নাজমুল হোসেন বলেন, এখানে পর্যাপ্ত জনবল নেই। জনবলের অভাবে যানজট নিরসনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। সড়কের প্রসস্তকরণ কাজ চলছে। এছাড়া চালকদের অসচেতনতায় যানজট মুক্ত করা যাচ্ছে না।
কাঞ্চন সেতু প্রকল্প ও টোল প্লাজার পরিচালক মোহাম্মদ কারিবুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বাইপাস সড়কটি এক্সপ্রেসওয়ে হবে। তাই পুরো ৪৮কিলোমিটার সড়ক নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হবে। এক্সপ্রেসওয়ে সড়ক উদ্বোধনের পর থেকে ২৫ বছরের জন্য টোল রোড হবে ।
রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মেহমুদ মুরশেদ উল-আল-আমিন বলেন, কাঞ্চন সেতু এলাকায় পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) আওতায় চারলেনে উন্নীত করার কাজ চলমান। দ্রুত কাজ চলছে। কাজ শেষ হলেই যানজট থাকবে না।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, সেতুর টোল আদায় সরকারের রাজস্ব বিভাগের একটা খাত। সরকার চাইলে কাঞ্চন সেতুর টোল আদায় বন্ধ করতে পারে, আবার চালুও রাখতে পারে। তবে কাঞ্চন সেতু কিছু দিন আগে ঢাকা বাইপাস সড়ক পিপিপি প্রজেক্টের আওতায় চলে গেছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, কাঞ্চন সেতু এলাকাসহ রূপগঞ্জের সকল সড়ক যানজট মুক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে। শিগগিরিই ওই সড়কের যানজট নিরসন করা সম্ভব হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আহসানুজ্জামান বলেন, ঢাকা-কুড়িল-ভুলতা সড়কের ৩শ’ ফুট সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ অংশের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। ২/৩মাসের মধ্যেই কাঞ্চন সেতু থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হলেই যানজট নিরসন হবে।