আজ রবিবার, ৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কর্তৃত্ব নিয়ে চাচা-ভাতিজার দ্বৈরথ

স্টাফ রিপোর্টার :

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে বিএনপি নেতারা একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একটি অংশ মূল ধারার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও বাকি অংশগুলো কর্তৃত্ব ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রীতিমত দ্বৈরথ চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৫ আগস্টের পর এই দ্বৈরথে সামিল হয়েছে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুল ও একই পদে থাকা তার ভাতিজা সাবেক এমপি পুত্র আবুল কাউসার আশা। সম্পর্কে চাচা ভাতিজা হলেও স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিয়ে বন্দরের মূল ধারার রাজনীতির বাহিরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের একাংশ তাদেরকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

বিএনপির মূল ধারার নেতাকর্মীরা বলছেন, গত ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালিন সময়ে তারা উভয়েই ছিলেন নিষ্ক্রিয়। রাজনীতির মাঠের যতটুকুই পা রেখেছেন, ততটুকুই ছিলো লোক দেখানো এবং দায় সারা। মুখে বিএনপির কথা বললেও ভিতরে ভিতরে তারা আওয়ামী লীগ সমর্থিত এমপি সেলিম ওসমান সাথে সখ্যতা ও আঁতাত করে চলতেন। সেলিম ওসমানের নানা সভাতেও তাদেরকে দেখা গেছে। এমনকি সেলিম ওসমান এমপি হলে আতাউর রহমান মুকুল ১১টি গরু জবাই করে গণভোজ করাবেন বলে জনসভায় প্রকাশ্যে প্রচার করেছিলেন সেলিম ওসমান।

এদিকে, আওয়ামী লীগের সময়কালে সিটি করপোরেশনের ২৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হওয়া আবুল কাউসার আশার বিরুদ্ধেও ওসমান পরিবার ও আওয়ামী ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ ছিলো বিএনপি নেতাদের মুখে মুখে।

মহানগর বিএনপির মূল ধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নেতারা বলছেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন হলে আশা বন্দরের নিয়ন্ত্রন নিতে ত্যাগী বিএনপি নেতার লেবাস ধারণ করেন। বন্দরে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ফেলে যাওয়া সাম্রাজ্য তালুবন্দি করতে নিজস্ব বলয় তৈরী করেছেন তিনি। এতে আশার রাজনৈতিক ভূমিকা এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। তিনি একদিকে দলীয় সভা-সমাবেশে উপস্থিত থাকেন, আবার অন্যদিকে বন্দরের আওয়ামী সন্ত্রাসীবাহিনী আজমেরী ওসমান, খান মাসুদদের অনুসারীসহ তাঁদের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক ও যোগাযোগ রাখছেন। বিতর্কিতদের ছায়া দিচ্ছেন।

এদিকে, বন্দরে একক আধিপত্য বিস্তার করতে মরিয়া হয়ে উঠা আবুল কাউসার আশা তার চাচা আতাউর রহমান মুকুলের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। মুকুলকে একেবারে কোণঠাসা করতে যারপরনাই চেষ্টা চালাচ্ছেন। মুকুল এখন অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তবে প্রবীন রাজনীতিবীদ হওয়ায় মুকুল বহিস্কৃত হলেও তার সাথে বন্দরের বিএনপির একটি অংশ রয়েছে। যারা মুকুলের আয়োজিত সভাগুলোতে অংশ নিচ্ছেন। তবে ভাতিজার দাপটে কোণঠাসা হয়ে থাকা মুকুল এখন সেক্টর দখলের পেছনে না ছুটে তার উপর বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য দৌড়ঝাপ চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, এক সময়ে মহানগর বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ছিলেন আতাউর রহমান মুকুল। সাবেক এমপি আবুল কালামের চাচাতো ভাই হওয়ায় সদর-বন্দরে তার প্রভাব ছিলো অপরিসীম। সেসব এখন কেবলই অতীত। ক্ষমতার পিছনে ছুটে চলা মুকুল বিগত সময়ে সেলিম ওসমানের সাথে আঁতাত করে এবং মহানগর বিএনপিতে ভাঙ্গণ ধরিয়ে দল থেকে বহিস্কার হন। সেই আদেশ এখনো বহাল থাকলেও বিএনপির সুদিনের হাতছানি দেখে গত ৫ আগস্টের পর আবারও সরব হয়ে উঠেন তিনি।

এতে তার অন্যতম প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে তার ভাতিজা ও সাবেক এমপি আবুল কালামের পুত্র আবুল কাউসার আশা। তবে চাচাসহ অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে দমাতে গিয়ে বন্দরে আধিপত্য বিস্তার করে চলা আশা সন্ত্রাসী ও বিতর্কিতদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন। সম্প্রতি বন্দরে ঘটে যাওয়া জোড়া খুনের ঘটনায় আশার নাম চাউর হয়েছিলো। কেননা, একটি পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন আশা। কিন্তু দুটি খুনের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হলেও এজাহারে আশার নাম দেখা যায়নি। এনিয়ে একটি পক্ষের মধ্যে ক্ষোভ ও মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।