নবকুমার:
করোনাভাইরাস নারায়ণগঞ্জে মহামারী রূপ নিয়েছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ করছে সরকার। করোনা দুর্যোগে সরকারে নির্দেশনা বাস্তবায়ন , ঘরে ঘরে খাদ্য পৌছে দেওয়া, বাজার মনিটরিং , জনগণকে সচেতন, করোনা আক্রান্ত রোগীর বাড়ীর লকডাউন করা সহ যাবতীয় কাজ নারায়ণগঞ্জ প্রশাসন নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছে। আর করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অদৃশ্য দানব করোনায় ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সরকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। ২৩ এপ্রিল উপসচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ স্বাক্ষরিত এক পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
তাতে উল্লেখ রয়েছে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ এ সংক্রান্ত সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারী দায়িত্ব পালনকালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বা মৃত্যুবরণ করলে সরকার ক্ষতিপূরণ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বেতনের গ্রেড অনুযায়ী সবাই পুরস্কার পাবে। যাদের বেতনের গ্রেড ১-৯ তাদের করোনাভাইরাস পজেটিভ হলে পাবে ১০.০০ লাখ টাকা। মারা গেলে পাবে ৫০.০০ লাখ টাকা। যাদের বেতন গ্রেড ১০-১৪ তাদের করোনাভাইরাস পজেটিভ হলে পাবে ৭.৫০ লাখ টাকা। মৃত্যুবরণ করলে পাবে ৩৭.৫০ লাখ টাকা। যাদের বেতন গ্রেড ১৫-২০ তাদের করোনাভাইরাস পজেটিভ হলে পাবে ৫.০০ লাখ টাকা। মৃত্যুবরণ করলে পাবে ২৫.০০ লাখ টাকা। ক্ষতি পূরণ প্রাপ্তির জন্য করোনাভাইরাস পজেটিভের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ,নার্স ,স্বাস্থ্যসেবাকর্মী সহ মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা -বাহিনী , সশস্ত্রবাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তা -কর্মচারী করোনা ভাইরাস পজেটিভের প্রমাণ / মেডিকেল রিপোর্টসহ স্ব স্ব নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের নিকট সংযুক্তি “ক” ফরমে ক্ষতিপূরণের দাবিনামা পেশ করবে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে সংযুক্তি “খ” ফরমে মৃত্যুবরণকারী কর্মকর্তা/ কর্মচারীর স্ত্রী /স্বামী/ সন্তান এবং অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে বাবা-মা ক্ষতিপূরণের দাবি সংবলিত আবেদন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করবে।
দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ , নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (জেলা করোনা ফোকাল পার্সন) ডা.জাহিদুল ইসলাম , নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (জেলা ই- সেবা কেন্দ্র) তানিয়া তাবাসসুম, সহকারী কমিশনার (গোপনীয় শাখা, সাধারণ শাখা, ব্যবসা বানিজ্য শাখা, লাইব্রেরী শাখা) আব্দুল মতিন খান, সহকারী কমিশনার ফারজানা আক্তার , সহকারী কমিশনার মারুফ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়েছেন। তানিয়া তাবাসসুমের স্বামী ও তার পরিবারের আরো একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একজন কর্মচারী করোনায় মৃত্যুবরণ করেছে। পুলিশ সুপারের গাড়ি চালকসহ র্যাব পুলিশের ১৮ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তারা সুস্থ্য আছেন। তারা সবাই ক্ষতিপূরণ পাবে।
এদিকে করোনাভাইরাসের হটজোন নারায়ণগঞ্জ । নারায়ণগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। প্রতিদিন করোনা রোগী আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তারপরও থেমে নেই নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন ,ডাক্তার ,নার্স ও জনপ্রতিনিধিনবৃন্দ। রূপগঞ্জ ,আড়াইহাজার, সোনারগাঁ, বন্দরসহ প্রত্যেকটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় খুবই তৎপর রয়েছে। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অদৃশ্য দানবের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য পৌছে দিচ্ছে। করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহে ডাক্তারদের সহযোগিতা করছে। করোনায় মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির দাফনের ব্যবস্থা করছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সামগ্রী সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজের বিত্তবানদের ত্রাণ সামগ্রী সুষ্ঠুভাবে বন্টন হচ্ছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে ঘরে থাকতে অনুরোধ করেছে জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন।
এছাড়া সরকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সেবার মানবাড়বে বলে মনে করছে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। এটা তার সময় উপযোগী এবং সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে তারা ।