আজ সোমবার, ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

একজন ব্যতিক্রমি চেয়ারম্যান আসাদ

স্টাফ রিপোর্টার :
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি ইউপি চেয়ারম্যানরা গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে, ব্যতিক্রম রয়েছেন কেবল ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি প্রতি কর্মদিবসেই নিয়মিত পরিষদে উপস্থিত থেকে সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। ফলে অন্যান্য ইউনিয়নে নাগরিক সেবা ব্যাহত হলেও এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদে সেই অভিযোগ নেই স্থানীয়দের।

এদিকে, চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামানের পাশাপাশি এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত ইউপি সদস্যরাও নিজ নিজ ওয়ার্ডের মানুষের নাগরিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তারা নিয়মিত পরিষদেও হাজির হচ্ছেন নাগরিক সেবা সংবলিত বিভিন্ন কাজ নিয়ে।

এনায়েতনগরের বাসিন্দা মোসা. সেলিনা বেগম নামে এক নারী দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘আমার শিশু সন্তানের জন্মনিবন্ধনের জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যের সাথে যোগাযোগ করি। প্রথমে ভেবেছিলাম যে, অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদের মত হয়তো এনায়েতনগরের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান সাহেবও অনুপস্থিত রয়েছেন। কিন্তু পরে দেখলাম আমার ধারণা ভুল। তিনি নিয়মিতই ইউনিয়ন পরিষদে বসছেন এবং আমার জন্মনিবন্ধনের কাজও দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমি আমার নাগরিক সেবা শতভাগ পেয়েছি।’

এনায়েতনগরের ধর্মগঞ্জ এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার ওয়ারিশ সার্টিফিকেটের প্রয়োজন ছিলো। ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান সাহেবকে তার কার্যালয়ে উপস্থিত পেয়েছি। তিনি আন্তরিকতার সাথে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ওয়ারিশ সার্টিফিকেটের সেবা প্রদান করেছেন। যেখানে নারায়ণগঞ্জ তো বটেই, দেশের অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতেও চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত রয়েছেন, সেখানে এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়রাম্যান আসাদুজ্জামান সাহেব নির্বিঘ্নে নাগরিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এটা সত্যিই প্রশংসনীয়।’

জানা গেছে, এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান দল-মতের উর্ধ্বে গিয়ে এলাকায় একজন মানবিক ও সদালাপি চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন বহু আগেই। জনসম্পৃক্ততা থাকায় তার জনপ্রিয়তাও রয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা যেখানে দলবাজিতে মত্ত ছিলেন, সেখানে আসাদুজ্জামান চেয়ারম্যান ছিলেন ভিন্ন ধাঁচের একজন জনপ্রতিনিধি। তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে চলেননি এবং জনবিচ্ছিন্নও হননি কখনোই। ফলে, দেশের পট পরিবর্তনের পর অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা তাদের বিতর্কিত কৃতকর্মের কারণে যখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তখন এলাকাবাসীর ভালোবাসা নিয়ে এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রয়েছেন সেবায় নিয়োজিত। কারণ, বিগত সরকারের আমলে তাকে কোনো বিতর্কে জড়াতে দেখা যায়নি।

এদিকে, ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তের গুঞ্জন নিয়ে অনেকের মাঝে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এনায়েতনগর ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দারা সাথে কথা বলে জানা গেছে, যেসকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত রয়েছে, তাদের বিষয়েই সিদ্ধান্ত নেয়া হলে আপত্তি নেই। কিন্তু যারা নিয়মিত নাগরিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে, তাদের অপসারণ করা হলে এলাকার ভোটাররাই বিপত্তিতে পড়বে। ফলে এনায়েতনগরে নাগরিক সেবা বহাল রাখতে পরিষদের নির্বাচিত চেয়ার‌্যমান আসাদুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট ইউপি মেম্বারদের বিকল্প নেই বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।’

এদিকে, এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘আমি মানুষের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। তাই কখনই দলবাজী করিনি। আমার দ্বারা রাজনৈতিক ভাবে হয়রানীর শিকার হয়েছে বলে বুকে হাত দিয়ে কেউ বলতে পারবে না। আমি মানুষের খাদেম হিসেবে নিয়মিত কাজ করে গেছি। ফলে সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছি। এই জন্য আমাকে এলাকা ছেড়ে কোথাও যেতে হয়নি। মানুষের জন্য আগেও যেভাবে কাজ করেছি, এখনো করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতেও করে যাবো। আমার ইউনিয়নের মেম্বাররাও মানুষের নাগরিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এখানে পরিষদের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।’