সংবাদচর্চা রিপোর্ট
শহীদ মিনারে এক জুটির আপত্তিকর একটি ছবি নিয়ে জেলা জুড়ে বেশ সমালোচনা হয়েছে। দিনের বেলায় লোকজনের সামনে এমন বেহায়াপনা নিয়ে অনেকেই নানা প্রশ্ন তুলেছেন। প্রবীণরা বলছেন, আগে প্রেম করলেও তা হতো লুকিয়ে। আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে নতুন প্রজন্মের অনেকে লাজলজ্জা হারিয়ে ফেলেছে। কেউ বলছেন, আগে পারিবারে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক ছিলো। এখন অপসংস্কৃতি পরিবারেও চেপে বসেছে। তবে সুশীল সমাজের মতে, এসব রোধে মূল দায়িত্ব পালন করতে পারে পুলিশ।
শহরে ব্যস্ততম চাষাঢ়া এলাকায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। সাহিত্য-সাংস্কৃতি ও রাজনীতি অঙ্গনের মানুষজন শহীদ মিনার প্রাঙ্গন সুকর্মে ব্যবহার করছেন। শহুরে মানুষ একটু শান্তির নিশ্বাস নিতে এ খোলা প্রাঙ্গনে আসেন। কেউ বন্ধু নিয়ে কেউ আবার পরিবার নিয়ে সময় কাটান এখানে। এ নিয়ে কারও কোন আপত্তি নেই। তবে শহীদ মিনারে কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষের আনাগোনাও হয় প্রতিদিন। দিনের বেলায়ও কিছু নারী-পুরুষ এখানে বেহায়াপনা দেখায়। অনেক দিন ধরে অভিযোগ রয়েছে, ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটান শহীদ মিনারে। সন্ধ্যার পর এই শহীদ মিনারে চলে আরও ঘৃণ্য কান্ড। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহীদ বেদীর পেছনে হিজড়া-মাদক বিক্রেতারা নানা অনৈতিক কর্ম করে। সচেতন মহলের মতে, শহীদ মিনারের ভেতর সব সময়ই একদল পুলিশ বসে থাকেন। তারা ইচ্ছা করলে এসব ঘটনা রোধ করতে পারে।
কেন এই প্রকাশ্য বেহাপনা। এমন প্রশ্নের খোঁজে আলাপ হয় বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে। কেউ কেউ কেউ বলেছেন, আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে নিজেদের সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছে মানুষ। নতুন প্রজন্মের অনেকে ইন্টারনেটে ডুবে থেকে ভিনদেশী চালচল আয়ত্ব করছে। তাদের যারা বাধা দিবেন অনেক ক্ষেত্রে তারাও বদলে গেছেন। শিবু মার্কেট এলাকার রফিকুল ইসলাম নামের এক প্রবীণ ব্যক্তি আক্ষেপ করে বলেন, এখন বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে মাদক সেবন ও ডিজে পার্টির মতো অপসংস্কৃতি জায়গা করে নিয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বিভিন্ন উপায়ে অনেক অশিক্ষিত মানুষ অঢেল টাকা কামান। তারা নিজেরা অপরাধের সাথে জড়িত থাকায় সন্তান বা পৌষ্যদের নৈতিকতা শিক্ষা দিতে ভয় পান। তাই নতুন প্রজন্মের অনেকে বিপথে যাচ্ছে। শহরের এক মার্কেটের দোকান অনীল দাস বলেন, ছোটদের কি দোষ বড়রাও এখন বিপথে যাচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, ঘুষ-দূর্নীতি কারা করে। বড়রা যদি এসব না করতো তবে সমাজে কোন অপরাধই ঘটতো না। অনীল আরও বলেন, বাড়িতে বড়রা টিভি পর্দায় বিদেশী সিরিয়াল নিয়ে ব্যস্ত থাকে আর ছোটরা ইন্টারনেট নিয়ে।
তবে নাগরিক সমাজের নেতা ও সাংস্কৃতি জগনের নেতৃত্ব বলছে ভিন্ন কথা। তাদের মতে, রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন হলে আর প্রশাসনের সদস্যরা যদি সজাগ না থাকে তবেই সব অন্যায় সমাজে চেপে বসে। নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান সংবাদচর্চাকে বলেন, আমাদের সময়ে পরিবার ও স্কুল থেকে শিক্ষা দেয়া হতো শহীদ মিনার একটি পবিত্র জায়গা। অতীতে আমরা দেখিনি কেউ শহীদ মিনারে বেয়াদবি করে। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের এই তুখোড় রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা রহমান বলেন, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন সমাজকে সচেতন করতে পারেনা। তার মতে, পারিবারিক সু-শিক্ষার অভাবও রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল সংবাদচর্চাকে বলেন, আকাশ সংস্কৃতি, রাজনৈতিক প্রভাব, পর্ণগ্রাফিসহ অনেক কিছু মিলিয়ে সমাজে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, স্কুল ফাঁকি দিয়ে শহীদ মিনারে এসে আড্ডা দেয়া কোন মতেই মানা যায় না। তার মতে, সেখানে সব সময় পুলিশ থাকে। তারা যদি খেয়াল রাখেন তবে এসব অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যেতো।