আজ শনিবার, ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৬ দিনে কোটি টাকার বেশি ভ্যাট আদায়

এম.এ মোমেনঃ

বাণিজ্য মেলায় ২৬ দিনে এবার ১ কোটি ৭ লক্ষ ৭৮২ টাকার ভ্যাট আদায় হয়েছে। করোনার প্রকোপে ও নতুন জায়গায় আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় গত বছরের চেয়ে বিক্রি বেড়েছে। বেড়েছে রাজস্ব প্রবৃদ্ধিও। প্রতিদিনের ভ্যাট পরেরদিন এবার ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৬দিনেভ্যাট আদায় হয়েছে ৬৫লক্ষ ৭২ হাজার ৮শত ৯৭ টাকা। । ২০২১ সালে করোনায় মেলা বসেনি। ২০২০ সালে মেলায় দেশি বিদেশি ৫০২ স্টল ছিল। এবার ২০২২সালে দেশি ২১৫ ও বিদেশি ১০স্টল রয়েছে। এবার স্টলের পরিমাণ কম থাকলেও ভ্যাট আদায় কমেনি। মেলার প্রথম দিকে কেনা বেচার কমের আশঙ্কা ছিল। মেলার শেষের দিকে ক্রেতা ও দর্শনার্থীর সমাগম ও বিক্রি বেড়েছে। মেলার শেষ মূহুর্তে চলতি সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে অভাবনীয় । ফলে ভ্যাট প্রদানও বেড়েছে।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় গতকাল ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৬ দিনে  এবার ১ কোটি ৭ লক্ষ  ৭৮২ টাকা ভ্যাট আদায় করেছে রাজস্ব বোর্ড । ভ্যাট আদায় চলমান রয়েছে। ঢাকা (পূর্ব) কমিশনার অব কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 
গত ১ জানুয়ারি এনবিআর মেলায় অংশগ্রহণকারী সকল প্যাভিলিয়ন ও স্টল দেওয়া ব্যবসায়ীকে ভ্যাট নিবন্ধন করা হয়েছে। 

স্থায়ী অবকাঠামোতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলার মূল্যসংযোজন কর মূসক আদায় সংক্রান্ত কার্যক্রম ঢাকার কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

স্টল স্থাপনকারী চালানপত্র ফ্রম মূসক ছয় পয়েন্ট তিন এর মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হয়েছে। মেলার স্টলের অনুকুলে ইস্যুকৃত সাময়িক নিবন্ধন নম্বরের বিপরীতে ব্যবসায়ী পর্যায়ে ঢাকা পূর্ব কাস্টমস ও ভ্যাট অফিসের কোডে ট্রেজারি চালানোর মাধ্যমে জমা প্রদান করছে। 

ছুটির দিনে কেনা বেচা হচ্ছে বেশি। তাতে ভ্যাট আদায়ও বাড়ছে। তবে চলতি সপ্তাহে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে আশাতীত। সব স্টল এখনও ভ্যাট হিসাব দেয়নি। মেলা শেষ হলে দেড় কোটি টাকা ভ্যাট আদায়ে ছাড়িয়ে যাবে বলে কর্র্মকর্তারা মনে করছেন। মেলা উদ্ধোধনের কয়েকদিন পর থেকেই ভ্যাট আদায়ের প্রবৃদ্ধিও ইতিবাচক। 

মেলায় এবার ভ্যাট প্রদানে শীর্ষে রয়েছে ইলেক্টনিকস,ফার্নিচার ও এলুমিনিয়াম স্টল। মেলার শেষের দিকে  গতকাল বৃহস্পতিবার ক্রেতাদের কেনা কাটার ধুম পড়ে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরের নির্দেশে মেলায় অংশগ্রহণকারী দেশি বিদেশি সকল প্রতিষ্ঠানকে ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেট থেকে সাময়িক মূসক নিবন্ধন নিতে হয়েছে। 

    কাস্টমস ও ভ্যাট এক্সাইজের সহকারী কমিশনার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, এবছর মেলায়  শুরু থেকে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা ও দর্শনার্থী মেলায় আসে। কয়েকদিন যেন ছবি তোলা আর ঘুরাঘুরিই ছিল দর্শনার্থীদের কর্ম। চার পাঁচদিন পর থেকেই শুরু হয় কেনাবেচা। মেলার শেষ দশদিন ধুম পড়েছে কেনাকাটার। এখনো চলছে। করোনায় যে কোন সময় মেলা বন্ধ হয়েছে যাবে এমন আশংকায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় মেলা প্রাঙ্গন। 

মেলার স্টলগুলো প্রতিদিন নিয়মতান্ত্রিকভাবে আগের দিনের ভ্যাট প্রদান করছে। ফার্নিচার শিল্পে এ বছর সাড়ে সাত ভাগ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। তাতে ফার্নিচার শিল্পে ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি ও সন্তোষজনক। ছোট ছোট স্টল বিক্রির পাঁচ ভাগ ও বাকিরা সাড়ে সাত ভাগ টাকা ভ্যাট প্রদান করছে। গত বছর মেলার ২৭তম দিন পর্যন্ত ভ্যাট আদায় হয়েছিল ৬৫লক্ষ ৭২ হাজার ৮শত ৯৭ টাকা। 

বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া ছোট ও মাঝারি মানের স্টলগুলো বিক্রির উপর ক্রেতাদের কাছ থেকে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভ্যাট আদায় করছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর তাগিদ দেওয়ার সত্ত্বেও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভ্যাট আদায় করায় এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ইসিআর ম্যাশিন ও সফটওয়্যার বা পস পদ্ধতিতে ভ্যাট আদায় করছে। তাতে ভ্যাট আদায় ও প্রদানে স্বচ্ছতা রয়েছে বলে মেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত রাজস্ব কর্মকর্তারা মনে করছেন।

ভ্যাট বা মূল্যসংযোজন কর আদায়কারী জনতা ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার মোঃ কামরুল হোসেন বলেন, মেলার শুরুতে ক্রেতা দর্শনার্থীদের উপস্থিতি এবং কেনা বেচাও ছিল কম। কয়েকদিন পর থেকেই কেনা বেচায় স্থিতিশীলতা আসে। বেচা বিক্রিও ভালো হয়েছে। তাতে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন ৩০-৩৫টি স্টল জনতা ব্যাংকের প্যাভিলিয়নে ভ্যাট পরিশোধ করছে। তাতে দিল্লি এলুমিনিয়াম একদিনে সর্বোচ্চ ৪৯ হাজার ৬৯৫ টাকা ভ্যাট প্রদান করেছে। এছাড়া ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ৬০-৭০টি স্টল ভ্যাট প্রদান করেছে। এখানে আখতার ফার্নিচার ও গুইভাড়া বেকারী একদিনে ৩০ হাজার  থেকে ৪০ হাজার টাকা ভ্যাট প্রদান করেছে। 

দেশিয় পণ্যের প্রতি ক্রেতা দর্শনার্থীদের আগ্রহ ছিল বেশি। ইলেক্ট্রনিকস পণ্যের স্টলে ভিড় ছিল প্রচুর। ক্রেতারা পছন্দমত পণ্য ক্রয় করেছেন। এলইডি টিভি, ফ্রিজ ও গৃহস্থালির পণ্য বিক্রি হয়েছে বেশি। 
গত বছরের তুলনায় এবছর মেলায়  স্টল কম হলেও তারা তাদের দক্ষতায় ভ্যাট আদায়ে সক্ষম হচ্ছেন। ভ্যাট প্রদানে ব্যবসায়ীদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উৎসাহিত করায় এবার কাঙ্খিত মাত্রায় ভ্যাট আদায় হচ্ছে। 

দ’ুটি শিফটে ৩২ জন ভ্যাট কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক ভ্যাট আদায়ে দায়িত্ব পালন করছেন। জনতা ব্যাংক ও ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড মেলার সময় অনুযায়ী ভ্যাট গ্রহণ করছে।

কাস্টমস ও ভ্যাট এক্সাইজের সূত্রে জানাগেছে, সেরা ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করা হবে। রাজস্ব ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।