বিশেষ প্রতিবেদক
করোনাভাইরাসে থমকে আছে পুরো দেশ। সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আগামী ১৬ জুন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে স্কুল খোলার পূর্বেই নারায়ণগঞ্জের অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টিউশন ফি আদায়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ উঠেছে। যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে দেয়া নির্দেশনায় টিউশন ফি ও বেতন আদায়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের চাপ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে টিউশন ফি আদায়ে অভিভাবকদের মুঠোফোনে বার বার তাগাদা দেয়া হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে পাঠানো হচ্ছে বিকাশ নম্বরও। একদিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন ভাতা নিয়ে টানাপোড়েন অন্যদিকে স্কুল থেকে টিউশন ফিসের চাপ। সব মিলিয়ে এক অসহায় পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন অভিভাবকরা।।
নাম গোপন রাখার শর্তে একজন অভিভাবক বলেন, আমার সন্তান আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থী। তাকে একপ্রকার আল্টিমেটাম দিয়েই তার বেতন আদায় করেছে স্কুল কতৃপক্ষ। অথচ আমার ভাতিজা বিদ্যানিকেতনে পড়াশুনা করে। সেখানে তাদের কোন চাপ দেয়া হয় না। বার বার মোবাইল ফোনে কল আর মেসেজ পেয়ে বাধ্য হয়ে টিউশন ফি পরিশোধ করেছি। এই স্কুলটি নিয়ে একই অভিযোগ করেছেন আরও কয়েকজন অভিভাবক।
কেবল আইডিয়াল নয়, নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল নিয়ে একই অভিযোগ করছেন অভিভাবকরা। করোনার সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম না থাকলেও বেতন আদায় করতে নিয়মিত ‘বিরক্ত’ করা হচ্ছে। কখনো কখনো শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিল কিংবা পরীক্ষা দিতে দেয়া হবে না এমন ‘হুমকি’ও দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিদ্যানিকেতন স্কুলের পরিচালনা পরিষদের এক সদস্য বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের কাছে টিউশন ফি চাওয়া অমানবিক। কারণ অনেকেই লকডাউনের কারণে বেকার হয়ে ঘরে বসে আছেন। অনেক অভিভাবকেরই আয় বন্ধ। এই অবস্থায় স্কুলের বেতন অভিভাবকরা কিভাবে দিবে? অধিকাংশ স্কুলগুলো সারাবছর মুনাফায় থাকে। করোনা পরিস্থিতিতে বিদ্যানিকেতনের মত বেতন মওকুফ না করলেও এ নিয়ে চাপ দেয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের কথা ভাবতে হবে। এধরনের মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
তবে স্কুল গুলোর সাথে যোগাযোগ করলে তারা এসকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোন চাপ নয়, মূলত বেতন একসাথে অনেক জমে গেলে অভিভাবকদের সমস্যা হবে সেই বিবেচনায় আমরা অনেককেই পরিশোধ করতে বলেছি। যারা পারবে তারা দিয়ে যাবে। কোন চাপ দেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া শিক্ষকদের বেতনও তো আমাদের এখান থেকেই দিতে হয়। .
উল্লেখ্য, গত ২৩ এপ্রিল এক জরুরি নির্দেশনায় চাপ দিয়ে টিউশন ফি আদায় না করার আহ্বান জানায় ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এতে বলা হয়, দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বিরাজমান থাকায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন এবং অন্যান্য খাতে গৃহীত ফি আদায়ে এই মুহূর্তে চাপ প্রয়োগ না করার জন্য অনুরোধ করা হলো। পরবর্তী সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে বা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলে বকেয়াসহ মাসিক বেতন ও অন্যান্য ফি আদায়ে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।