নিজস্ব প্রতিবেদক
“ভোটার কার্ড ফেরত নেন আর নাইলে থাকনের জাগা দেন। মাইয়া লইয়া এই জায়গায় থাকতাম । ভাঙ্গোনের আগে মাইয়া মইরা গেছে। ওহন মরনের আশায় আছি কিন্তু সেলিম ওসমানের লগে দেহা না কইরা আমার যেন মরন না হয়। হেড়ে ভোট দিসি হেয় আইবো। আমি নির্বাচনের পর থাইকা হেল লেইগা অপেক্ষা করি। কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর এই বৃদ্ধা কান্না কন্ঠে আরো বলেন “ঘরডা ভেকু গাড়ি দিয়া ডইলা দিছে। যে আমারে গাছ তলায় নামাইছে আল্লাহ্য় ওর পোলা পাইনের উপর গজব হালাউবো। গতকাল বিকেলে জিমখানা এলাকায় শিতুল গাছের নিচে বসে উচ্ছেদকৃত বস্তির বাসিন্দা ১০০ বছরের বৃদ্ধা মদিনা বেগম এসব কথা বলেন।
এই বৃদ্ধা আরো বলেন, “মরনের অনেক কাছে আইয়া পরছি। সবাইরে আমার একটাই শেষ কথা আমি মরার আগে আমার কাছ থেইকা কেউ এই ছবিটা নিবি না। এইডা আমি কাছ দিয়া বান্দামু। যুবতী আইছি বুড়ি হইছি। এসময় প্রতিবেদকে বৃদ্ধা মিনতী করে বলেন, যানঘা বাবা ওরা দেখলে আমারে উঠায় দিব।
রাষ্টের গঠনতন্ত্র অনুসারে, খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান মানুষের মৌলিক অধিকার। অথচ এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে দায়িত্বে থাকা ক্ষমতাসীনদের প্রতিষ্ঠানের দোহায় দিয়ে জনপ্রতিনিধিরা। ঘর থেকে রাস্তায় নামিয়ে গরিবের কল্যান? যে কল্যানের শিকার হয়েছে ব্রাক স্কুলে পড়–য়া দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। যারা এখন স্কুলে যেতে পারে না যেতে হয় কল করখানার কাজে।
নারায়ণগঞ্জের সচেতন নাগরিকরা জানতে চায়, এখন কি মানবাধিকারের বিবেক লোহার খাচায় বন্ধি? জনপ্রতিনিধিরা জনগনের কল্যানের ও জনগনের উন্নয়নের চিত্র প্রর্দশন করেন এক রকম। আর বাস্তবায়ন করেন আরেক রকম।
তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছক) কর্মকর্তা জানান, রেলওয়ের জায়গায় যে সকল গাছ ছিল তা অবৈধ ভাবে উচ্ছেদ করে দখল করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে মামলা রয়েছে। ট্রেন ডাবল লাইন করা হলে এই খানে ইঞ্চিনের ওয়ার্কশপ করা হবে ইঞ্চিন মেরামত করার জন্য জানান এই কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই নারায়ণগগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদকর্মী ও স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আফসানা আফরোজ বিভার দলবদ্ধ লোকজনের সাথে বস্তিবাসীর দফায় দফায় সংর্ঘসের পর উচ্ছেদ করা হয় পুরাতন জিমখানা বস্তি।
এ ঘটনার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান জিমখানা বস্তিবাসীকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই প্রতিশ্রুতি ঘিরে বস্তির প্রায় ১শতাধিকের অধিক অবহেলিত পরিবারের শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত সকলেই অপেক্ষায় আছেন বলে জানা গেছে স্থানীয় ও গণমাধ্যম সূত্রে।
প্রসঙ্গত,২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর সকালে বস্তির পূর্ণবাসনের দাবীতে বই খাতা নিয়ে মানব বন্ধন করেছিল শিক্ষার্থী ও বস্তিবাসীরা। পুরাতন জিমখানা বস্তিতে প্রায় ৩শ’ পরিবারের ৪ হাজার মানুষের বসবাস ছিল।