নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ এ কে এম সেলিম ওসমান বলেছেন, আমি ৭৫ সালের আগ পর্যন্ত শহর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলাম। একটা কথা মনে রাখবেন ওই সময় আমাদের স্লোগান ছিল এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আর এখন আপনাদের বলতে হবে এক নেতা এক দেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে কেবল ঝগড়া ও অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য এমন মন্তব্য করে সেলিম ওসমান আরও বলেন, পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার জন্য অনেকেই আসবে। এই শহীদ মিনারে বসেও অনেকে উস্কানিমূলক কথা বলবে। যদি সত্যিকারেই শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবাসেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মানেন তাহলে ঝগড়া করবেন না। ঝগড়া করার জন্য ফুটপাতের দোকান উঠিয়ে দেয়া হয়। ঝগড়া করার জন্য রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার দেয়া হয়। ঝগড়া করার জন্য, অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য তারা আসবেই। কারণ আমাদের মধ্যে মীর জাফর, খন্দকার মোশতাক রয়েই গেছে।
শুক্রবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা, দোয়া ও নেওয়াজ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এই নারায়ণগঞ্জ একসময় পাট রপ্তানীতে এক নম্বর ছিল। আদমজী জুট মিল ছিল, শীতলক্ষ্যায় গোডাউনের পর গোডাউন ছিল। কিন্তু এই জুট এসোসিয়েশনের ডানদিকের, বামদিকের জায়গা কে, কোন কুলাঙ্গার বিক্রি করে দিল? কিন্তু আমরা কোন মামলা করলাম না। অথচ দেখা গেলো, আমরা বিকেএমইএ’র থেকে একটা পনেরো তলা বিল্ডিং করার জন্য কাজ শুরু করলাম। তখন কোন একজন নেত্রী সেই জায়গার উপরে মামলা করে দিলেন। তারপর সেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলো। কিন্তু আদেশটা ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনার। এই নারায়ণগঞ্জ থেকেই বিকেএমই’র সকল কার্যক্রম হবার কথা ছিল।
সেলিম ওসমান আরও বলেন, এই শহীদ মিনারে আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে বোমা হামলা করা হয়েছিল নারায়ণগঞ্জের ক্ষতি করার জন্য। তখন আমি সাদা পতাকার মিছিল করেছিলাম যাতে নারায়ণগঞ্জে হরতাল না হয়। আমি তো রাজনীতিবিদ ছিলাম না। আমি বঙ্গবন্ধুর কথায় সেই ৭৪ সালে রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর কথায় অস্ত্র ছেড়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে লেগেছিলাম। হরতাল তখন নারায়ণগঞ্জে হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় হোসিয়ারি থেকে চলে গেলাম নীটওয়্যারে। আজ নীটওয়্যার পণ্যতে সারা বিশ্বে দ্বিতীয়।
নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যা হাসপাতাল ৫০০ শয্যা করা হচ্ছে। এইটা ইনশাল্লাহ মেডিকেল করা হবে। চাষাড়ায় আরেকটা নতুন ৪০০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। আপনারা কেবল দোয়া করবেন যাতে আরো উন্নয়ন করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, আমি একজন সংসদ সদস্যের প্রক্সি দিচ্ছি। নাসিম ওসমানের প্রক্সি দিচ্ছি আমি। নাসিম ওসমানকে মানুষ ভালোবাসে। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, নাসিম ওসমানের স্বপ্নের মধ্যে যে যে জিনিস করার দরকার ছিল আমি প্রতিটি বাস্তব করে দিয়েছি। আমার ৭টা ইউনিয়নে স্কুল করার ইচ্ছা ছিল। স্কুলের নামকরণ উনি করেন নাই, আমি করে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু স্কুলে বঙ্গবন্ধু ভবন করে দিয়েছি। কুড়েরপাড়ে শেখ রাসেল ভবন করেছি। ধামগড় ইউনিয়নে শেখ জামাল স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।
নারায়ণগঞ্জ সারা বাংলাদেশের চালিকা শক্তি উল্লেখ করে সেলিম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে লোক না গেলে পল্টনে মাঠ পূর্ন হতো না। তাই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির প্রথম টার্গেট এই নারায়ণগঞ্জ। অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ভাবে তারা নারায়ণগঞ্জকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। এতো কিছুর পরেও যখন নারায়ণগঞ্জকে ধ্বংস করতে পারে নাই তখনই ২০০১ সালে ১৬ জুন চাষাড়ায় আওয়ামীলীগ অফিসে বোমা মেরে নারায়ণগঞ্জের ২১জন কৃতি সন্তানকে হত্যা করেছে। আজকে যেখানে আপনারা বসে আছেন এখানেই ২১জন মানুষের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়ে ছিল।
সেলিম ওসমান বলেন, সেদিন মৃত্যু শয্যায় থেকেও শামীম ওসমান নিজেকে বাচাঁনোর কথা না বলে বলেছিলো শেখ হাসিনাকে বাঁচান। এরপর ঢাকায় ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বোমা হামলা চালানো হয়। অতএব আপনারা বুঝতেই পারছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারো প্রধানমন্ত্রী বানাতে না পারলে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় এসে দেশের কি অবস্থা করবে। আবারো শহীদের রক্তের বিনিময় অর্জিত লাল সবুজের পতাকা রাজাকারের গাড়িতে তুলে দিবে। ২০০১ সালের পর যা আপনারা নিজের চোখেই দেখেছেন। তাই এ অবস্থা যেন দেশে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করে শেখ হাসিনাকে আবারো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানাতে হবে। তাহলে আগামী ৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২৫ বছর এগিয়ে যাবে। আর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের অবস্থা কি হবে সেটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের উদ্দেশ্যে সেলিম ওসমান বলেন, আপনারা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে করবেন চেঞ্জ অর ডাই। পরিবর্তন করো নয় তো মরো। আমি সেলিম ওসমান আমার কি হবে না হবে সেটি বড় কথা নয়। আমাকে দলে নেন বা না নেন আপনাদের দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানাতে হবে এই প্রত্যয় নিয়ে আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে।
আমি ৭৫ সালের আগ পর্যন্ত শহর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলাম। একটা কথা মনে রাখবেন ওই সময় আমাদের স্লোগান ছিল এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আর এখন আপনাদের বলতে হবে এক নেতা এক দেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।
উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে সেলিম ওসমান প্রশ্ন রেখে বলেন, কি আপনারা পারবেন তো সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানাতে? পারবেন তো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও শেখ হাসিনার ভিশন-২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনার সৈনিক হতে? এ সময় উপস্থিত সকলে দুই হাত তুলে শেখ হাসিনাকে আবারো প্রধানমন্ত্রী বানাতে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সেলিম ওসমান বলেন, আপনাদের সবাইকে অনেক সর্তক থেকে কাজ করতে হবে। অনেকেই পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া করতে চাইবে। অনেক উস্কানি দিবে। যাতে করে আপনারা ধৈর্য্য হারিয়ে কোন বিশৃঙ্খলা করে বসেন। মনে রাখবেন আপনারা যদি উত্তেজিত হয়ে নারায়ণগঞ্জে বিশৃঙ্খল কোন কিছু করে বসেন তাহলে আমরা প্রধানমন্ত্রী হারাবো। কারণ এই নারায়ণগঞ্জ সারা বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেয়, সারা দেশের চালিকা শক্তি এই নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জের উপরই নির্ভরশীল সারা বাংলাদেশ। যার ফলে আমরা নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছি। নারায়ণগঞ্জকে গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে বার বার।
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, কেন নারায়ণগঞ্জকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে জানেন আপনারা? এই নারায়ণগঞ্জ থেকেই ৬ দফা, ১১দফা, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৭১’র মুক্তিযোদ্ধের সূত্রপাত হয়েছে। এসব আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ থেকেই শুরু হয়েছে। এমনকি ৭৫’র বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর ওই রাতেই সর্বপ্রথম নারায়ণগঞ্জ থেকেই আপনাদের প্রিয় নেতা প্রয়াত নাসিম ওসমান এবং বিকেএমইএ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মঞ্জুরুল হক বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে দ্বিতীয়বারে মত যুদ্ধে অংশ নিয়ে ছিল।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও জেলা ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি চন্দন শীল, যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ধসঢ়; নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূইয়া সাজনু, নাসিক ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, মহানগর শ্রমিকলীগের সভাপতি কাজিমউদ্দিন কাজিম, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোপীনাথ দাস প্রমুখ।