সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি
কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোড এলাকায় হালিমা টাওয়ারে অবস্থিত গিঞ্জি পরিবেশে সুগন্ধা হাসপাতালে রোগী মারা ফাঁদ। ছলেবলে কৌশলে রোগীদের উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা দেয়ার নামে অসহায় মানুষের কাছ থেকে ইচ্ছে মত টাকা আদায় করলেও বারবার অভিযোগেও কোন প্রকার পদক্ষেপ নিচ্ছে না জেলা সিভিল সার্জেন। প্রশাসনের এ ধরনের কর্মকান্ডে হতাশায় রয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি হাসপাতালটির অনিয়ম তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে।
সোমবার সকালে হাসপাতালটিতে ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার হিরিক জমেছে। হাসপাতালটির ম্যানাজার এক সময়ের মিনারমসজিদ সংলগ্ন ফার্মেসীর মালিক আফির উদ্দিন যারতার কাছ থেকে সুচিকিৎসার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। মালিকদের বোকা বানিয়ে আফির উদ্দিনের অনৈতিক অর্থ গ্রহনের অভিযোগ থাকলেও কোন এক অদৃশ্য ইশারায় সে থাকছে বহাল তবিয়তে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, এক সময়ের জামাত শিবিরের নেতা আফির উদ্দিন, ৫ই মে চিটাগাংরোড এলাকায় হেফাজত ইসলামের আন্দোলনকে পুজিকরে জামাত শিবিরের ক্যাডার আফির উদ্দিন বিজিপি ও পুলিশ হত্যার ইন্ধনতদাতা ছিলেন। রহস্যজনক কারনে সে এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে।
একটি উন্নত মানের হাসপাতালে রোগীদের যে ধরনের সেবা প্রদান করা প্রয়োজন সে ধরনের কোন সেবার ছিটেফটাও নেই সুগন্ধা হাসপাতালটিতে। সেতসেতে রুমের মেজে, আর বেডে দুর্গন্ধ দেখায় হতাশ গণমাধ্যমকর্মীরাও। নার্সদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, শুধুমাত্র হাতেকলমে কাজ শিখেই হাসপাতালের মালিকের সাথে সখ্যতা করে মাসে মাসে বেতন গুনছেন তারা। সার্বক্ষনিক চিকিৎসা সেবার কথা থাকলেও সেদিকেও তেমনকোন কর্ণপাত নেই কতৃপক্ষের।
সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকা থেকে আগত রহিমা আক্তার নামের একজন রোগীর পরিবারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, হাসপাতালটির ভালোমানের সেবার কথাশুনে এসেছিলাম তবে ভিতরের পরিবেশ দেখে পাশের সাজেদা হাসপাতলে রোগীকে ভর্তি করেছি ডেলিভারীর জন্য। তিনি বলেন, জীবন মরণ নিয়েতো আর ছেলেখেলা করা যায়না বাপু।
সংশ্লিষ্টসুত্র জানায়, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা সুগন্ধা হাসপাতালটি নিয়ে খেলছে হাসপাতালটির কতৃপক্ষ নিজেরাই। নামসর্বস্ব মেশিনারীজ দিয়ে হাসপাতালটি চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। বছরের পর বছর চললেও তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই তাদের। মানসম্মত সেবার কথা থাকলেও পকেট ভারীতে ব্যতিব্যস্ত হাসপাতাল কতৃপক্ষ। হাসপাতালটির ম্যানাজার আফির উদ্দিনের হাতের ইশারায় অনেক রোগীরই মৃত্যু ঘটেছে। চিটগাংরোড মার্কেটের এক ব্যবসায়ী চিকিৎসার জন্য আসলে পরীক্ষা ছাড়াই তাকে ইনজেকশন পুশ করলে সাথে সাথেই ব্যবসায়ীর জীবন প্রদীপ নিভে যায়। কিছুদিন আগে লাভলী হলের মালিকের মৃত্যুও হয়েছে হাসপাতালটিতে। আউলিয়া বেগম নামে আরেক রোগী পেটের চর্বির সমস্যার জন্য আসলে তাকে ভুল চিকিৎসা মেরে ফেলে সুগন্ধা হাসপাতাল কতৃপক্ষ। বিষয়টি মোটা অংকের টাকা দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছে সুগন্ধা হাসপাতালের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা।
হাসপাতালটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মাহমুদা পারভিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের নার্স হওয়ার সুযোগে সরকারি প্রভাব খাটিয়ে হাসপাতালটিতে অনিয়ম করছে বলেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদা পারভিনের সাথে হাসপাতালটির উপদেষ্টা সিদ্ধিরগঞ্জের শিল্পপতি হাবিবুল্লাহ হবুলের সাথে বিশেষ সম্পর্ক থাকায় দিনের পর দিন হাসপাতালটি অনিয়ম করলেও কেউ কোন কর্নপাত করছেন না। হবিবুল্লাহর প্রভাব খাটিয়ে যারতার সাথে খারাপ আচরন করেন হাসপাতাল কতৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে হাবিবুল্লাহ হবুলের মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এনিয়ে সিভিল সার্জেনের সিনিয়ার স্বাস্থ্য অফিসার আমিনুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সুগন্ধা হাসপাতালে অনিয়মের বিষয় প্রকাশিত পত্রপত্রিকায় সংবাদ আমাদের নজর কেড়েছে। সুগন্ধা হসপিটালের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে শিঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।