পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় ভবনের আসবাবপত্র ও বালিশ ক্রয়সহ অন্যান্য কাজের অস্বাভাবিক ব্যয়ের অভিযোগে প্রত্যাহার হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ছেলে মাসুদুল আলম এক সময় বুয়েট ছাত্রদলের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন।
সোমবার (১৭ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পক্ষে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ তথ্য জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন বালিশ তত্ত্ব নিয়ে এসেছেন। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওই ঘটনায় যিনি দায়িত্বে ছিলেন তার কিছু পরিচয় আমরা পেয়েছি। এক সময় তিনি বুয়েটে ছাত্রদলের নির্বাচিত ভিপিও নাকি ছিলেন। তাকে সেখান থেকে সরানো হয়েছে। যখনই তথ্য পেয়েছি সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। যে দলেরই হোক আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে (বিএনপিতে) এমন এমন লোক রয়ে গেছেন, জন্ম থেকেই তাদের চরিত্র দুর্নীতির। তার কারণও আছে। এই দলটি (বিএনপি) যিনি করেছিলেন, তিনি সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় সংবিধান ও সামরিক আইন লঙ্ঘন করে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিদের ইনডেমনিটি অর্ডারটাকে ভোটারবিহীন পার্লামেন্টে আইন হিসেবে পাস করিয়ে দিয়েছেন তিনি। অস্ত্রের মুখে সায়েম সাহেবকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দিয়ে নিজেকে নিজে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতায় এসেছিলেন জিয়া। ক্ষমতা দখল করার পর তাদের হাতে যে দল গড়ে ওঠে, তাদের চরিত্রটা জানা উচিত। তাদের উৎসটাই হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতির মধ্যে থেকে উঠে আসা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর থেকে দুর্নীতিটাকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে যারা দীর্ঘদিন রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, সব জায়গায় এই ঝঞ্ঝাট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে গেছে।’
পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্নীতি প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বালিশতত্ত্ব নিয়ে আমারও একটা প্রশ্ন আছে। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র সেখানে গড়ে উঠছে। সেখানে আর কিছু না পেয়ে পেলো বালিশ। এটা কোন বালিশ। কী বালিশ, সেটাও একটা প্রশ্ন? এটা কী তুলার বালিশ? কোন তুলা? কার্পাস তুলা না শিমুল তুলা; নাকি সিনথেটিক তুলা। নাকি জুটের তুলা। আর বালিশ নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করতে দেখলাম। এত মানুষ, এত বালিশ একদিনে কিনে ফেললো কীভাবে? এই বালিশ কেনার টাকার জোগানদারটা কে? সেটা আর বলতে চাই না।’
প্রসঙ্গত প্রকৌশলী মাসুদুল আলমের বাবা সিদ্ধিরগঞ্জ ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মৃত আব্দুল খালেক। তিনি চাকরির সুবাদে সিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার হাউজে দীর্ঘকাল বসবাস করেছেন। আব্দুল খালেকের বড় সন্তান প্রকৌশলী মাসুদুল আলম। সিদ্ধিরগঞ্জেই তার বেড়ে ওঠা।
জানা গেছে, প্রকৌশলী মাসুদুল আলম সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৯০ সালে এসএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা কলেজে পড়াশুনা করেন এবং পরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি লাভ করেন।
মাসুদুল আলম প্রথমে কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পর গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। পরে সরকারের মেগা উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে এই দুর্নীতির ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন তিনি।