সংবাদচর্চা ডেস্ক ঃ গত আটমাসে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
মি: এরদোয়ান সরাসরি বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে।
মি: এরদোয়ানের মতো এতোটা জোরালো অভিযোগ অন্য কোন রাষ্ট্র প্রধান করেননি।
গত মঙ্গলবার মি এরদোয়ান সরাসরি ফোন করেছেন মিয়ানমারের সবচেয়ে ক্ষমতাবান রাজনৈতিক নেত্রী অং সান সু চি-কে।রোহিঙ্গা মুসলমানদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে মিস সু চি’র কাছে উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্দশা সচক্ষে দেখতে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি আমিনে এরদোয়ান আজ ভোরে ঢাকায় এসেছেন।
তার সাথে আছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। আজই তাদের টেকনাফে রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যাওয়ার কথা।
প্রশ্ন হচ্ছে, রোহিঙ্গা ইস্যুকে তুরস্ক কেন এতটা গুরুত্ব দিচ্ছে?
যুক্তরাষ্ট্রের অস্টিন পি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক ড. তাজ হাশমি মনে করেন এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে।
তুরস্ক একসময় মুসলিম বিশ্বে নামকরা একটি দেশ ছিল। ইরান ছাড়া পুরো মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা তুরস্কের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
মি: হাশমি বলেন, “অনেকে এরদোয়ানকে বলছেন নিউ সুলতান। উনি তুরস্কের সে পুরনো রোলে (ভূমিকায়) ফিরে যেতে চাচ্ছেন। তুরস্কের পুরনো শৌর্য পুনরুত্থান করতে হবে।”
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সোচ্চার হবার পেছনে মি: এরদোয়ানের ব্যক্তিগত বিষয় জড়িত আছে বলে মনে করেন মি: হাশমি।
তিনি মনে করেন, ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত মি: এরদোয়ান মুসলিম বিশ্বের প্রধান প্রতিনিধি হতে চাইছেন।
মি: এরদোয়ান চাইছেন, মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরব এবং পাকিস্তানের পরিবর্তে তুরস্ককে নেতৃত্বের আসনে নিয়ে আসতে।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মি: এরদোয়ান সোচ্চার হলেও মিয়ানমারের উপর তিনি কতটা চাপ তৈরি করতে পারবেন?
তাজ হাশমি মনে করেন, সে সম্ভাবনা খুবই কম। ভারত এবং চীন প্রত্যক্ষভাবে এবং আমেরিকা পরোক্ষভাবে মিয়ানমারের শাসক গোষ্ঠীকে সহায়তা করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
” নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তিনি রোহিঙ্গা রিফিউজিদের ফিরিয়ে দেবেন। চীন সিকিউরিটি কাউন্সিলে ভেটো দিয়েছে। তার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোন ধরনের অ্যাকশন নেয়ার ঘোর বিরোধী। এছাড়া মুসলমানদের ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে পলিসি তাতে মনে হচ্ছে না যে আমেরিকা এগিয়ে আসবে। আমেরিকার মিডিয়াতে রোহিঙ্গাদের ব্যাপার নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য হচ্ছে না,” বলছিলেন তাজ হাশমি।
তাঁর ধারনা বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি নতুন ফ্রন্ট দাঁড় করানো যায় কিনা সে চেষ্টা তুরস্ক করছে।
যদি মিয়ানমারের উপর কোন চাপ তৈরি করা সম্ভব না হয়, তাহলে মি: এরদোয়ানের তাতে কী লাভ হবে?
তাজ হাশমি মনে করেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সোচ্চার হয়ে মি: এরদোয়ান দেশের মধ্যে এবং মুসলিম বিশ্বে এক ধরনের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন।
তিনি বলেন, “মুসলিম বিশ্বে তাঁর একটা ইমেজ সৃষ্টি হবে যে উনি ইসলামের একজন চ্যাম্পিয়ন, উনি মুসলিম বিশ্বের ঐক্য সাধনে প্রচেষ্টা করছেন।”
তাজ হাশমির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তুরস্ক চাইছে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ইরান ও বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে একটি ফ্রন্ট করার চিন্তা-ভাবনা মি: এরদোয়ানের রয়েছে।
সৌদি আরবের নেতৃত্বে রিয়াদ-ভিত্তিক ৫৫টি মুসলিম দেশের যে জোট গঠন করা হয়েছে সেখান থেকে বাংলাদেশকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করছে তুরস্ক।
সে প্রচেষ্টায় তুরস্ক সফল হলে সৌদি আরবের উপর চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি সে অঞ্চলে তুরস্কের প্রভাব বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন মি: হাশমি।