আজ মঙ্গলবার, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রূপগঞ্জে মমতাজসহ ৫ কর্মকর্তাকে বিদায়ী সংবর্ধণা

সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম (মম) সহ ৫ জন কর্মকর্তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিয়েছে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। সোমবার (১৩ জুলাই) উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। জানা গেছে অনুষ্ঠানে ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক। অন্য আরো যাদের বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তরিকুল ইসলাম (পদোন্নতি) , উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন , রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহজাহান ভূইয়া, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলা, ভাইস চেয়ারম্যান শাহরিয়ার পান্না সোহেল , সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফিফা খান, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার সাইদ আল মামুন, রূপগঞ্জ থানার ওসি মাহমুদুল হাসান, আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান হাবিব, কাঞ্চন পৌরসভা মেয়র রফিকুল ইসলাম রফিক, রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া, দাউদপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাস্টার, ভোলাবো ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন টিটু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আল আমিন দুলাল, লায়ন মোজাম্মেল হক ভুঁইয়া,রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি লায়ন মীর আব্দুল আলীম, ঠিকাদার জাকির হোসেন, মনির হোসেনসহ অনেকে।

প্রসঙ্গত রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম (মম) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। পেশাগত দক্ষতাসহ বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতি অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে জেলা পর্যায়ে শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০১৯-২০ পেয়েছেন তিনি । এর আগে বিভাগীয় বিভিন্ন পুরস্কার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পেশাগত জ্ঞান, দক্ষতা, সততা, উদ্ভাবন, ই-ফাইলিং, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, অভিযোগ প্রতীকারে সহযোগিতাসহ শুদ্ধাচার চর্চা বিষয়ক বিভিন্ন সূচকে সন্তোষজনক অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি এ পুরস্কার পেয়েছেন । রবিবার ( ১২ জুলাই) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে মমতাজ বেগম সম্মাননা (পুরস্কার) ও সনদ গ্রহণ করেন।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগমব বলেন, আমি কখনো দায়িত্ব অবহেলা করি নাই। দুনীতির উধ্বে থেকে কাজ করার চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রীর নিদেশ বাস্তবায়নের জন্য মাঠে থেকে কাজ করেছি। কি কাজ করেছি সেটা রূপগঞ্জবাসী বলতে পারবে।

এদিকে করোনা দুর্যোগে তিনি গোটা এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে এখন অনুকরণীয় মানবিক কর্মকর্তা। রূপগঞ্জে যোগদানের পর থেকেই তিনি জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় সাধারণ মানুষের সেবায় কাজ করেছেন। ঘরে দেড় বছরের সন্তান রেখে লকডাউনে খেটে খাওয়া মানুষের বাড়িতে ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাতের আধারে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছেন। তার এ কাজে মুগ্ধ রূপগঞ্জবাসী। রূপগঞ্জের ইতিহাসে তিনিই রূপগঞ্জের সফল ইউএনও । তার কর্মই তাকে রূপগঞ্জবাসীর হৃদয়ে বাঁচিয়ে রাখবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপগঞ্জের ইউএনও হিসেবে গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি যোগদান করেন মমতাজ বেগম। আর দায়িত্ব নিয়েই তিনি উপজেলার মানুষের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেন। বাল্যবিয়ে ও যৌতুকপ্রথা বন্ধ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, সরকারি জমি উদ্ধার, চাঁদাবাজি বন্ধ এবং মাদক নির্মূলে একের পর এক অভিযান চালাচ্ছেন। আর জনহিতকর এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে তিনি এলাকার মানুষের অতি কাছের মানুষ হয়ে উঠেছেন।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, ইউএনও মমতাজ বেগম উপজেলা প্রাঙ্গণের সামনে তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, যা উপজেলা পর্যায়ে রূপগঞ্জেই প্রথম। মানবিক এই ইউএনও উপজেলাজুড়ে নানা সেবাধর্মী উদ্যোগ নিয়েছেন। সদর ইউনিয়নে প্রতিবন্ধীদের জন্য তিনি গড়ে তুলেছেন সুবর্ণ নাগরিক সেবা কেন্দ্র। প্রায় সাড়ে ৩০০ প্রতিবন্ধী শিশুকে এখানে চিকিৎসাসেবা, খাবার দেওয়াসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।
ইতিহাস বিকৃতি রোধে বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ এক হাজার ২০০ ছবি নিয়ে উপজেলা চত্বর থেকে দীর্ঘ চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গ্যালারি স্থাপন করেন এই কর্মকর্তা। দীর্ঘ এক মাস এই গ্যালারি প্রদর্শিত হয়। মাদক থেকে দূরে রাখতে তরুণ ও যুবসমাজের জন্য ইউএনও গোল্ডকাপের আয়োজন করেন। প্রতিবন্ধী মেয়েদের জন্য নিজস্ব অর্থায়নে স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করেন। তিনি গত এক বছরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন। তাঁর মধ্যস্থতায় ৩০টির মতো সংসার বিচ্ছেদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মেধাবী শিক্ষার্থী তাসলিমাসহ বেশ কয়েকজনকে ঘর উপহার দেয় এই ইউএনও।
মমতাজ বেগম চলমান করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। করোনা আক্রান্তদের জন্য নিজের এক মাসের বেতন ও বোনাসের টাকা তুলে দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের হাতে। সহায়তার হাত নিয়ে কর্মহীন, হতদরিদ্র-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এরই মধ্যে দেড় লক্ষাধিক মানুষের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে। তা এখনো চলছে।
জানা গেছে, ইউএনও মমতাজ বেগম উপজেলায় বিভিন্ন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছেন। তিনি গাউছিয়া মার্কেটের ফুটপাতে দোকানপাট উচ্ছেদ করেছেন। সেখানে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের নামে বৃক্ষরোপন করেছেন। তিনি রূপগঞ্জ ইউনিয়নে সরকারি জমিতে প্রভাবশালীর বহুতল ভবন গুঁড়িয়ে দিতেও পিছপা হননি। পূর্বাচল উপশহরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামের জায়গায় গড়ে তোলা নীলা মার্কেট উচ্ছেদ করা হয় তাঁর নেতৃত্বে।
রূপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজি কঠোর হাতে বন্ধ করেছেন মমতাজ । করোনাকালে ব্যবসায়ীরা যাতে পণ্যের দাম বেশি নিতে না পারেন সে জন্য তিনি নিয়মিত বাজার মনিটরিং করেছেন। ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করেছেন। তার নেতৃত্বে রূপগঞ্জ ইউনিয়নের লকডাউন সফল হয়েছে। করোনা সংক্রমন কমে এসেছে। লাশ দাফন, করোনা আক্রান্ত চিকিৎসার পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষার দিকেও নজর রাখছেন। তিনি লাশ দাফন কমিটিও করেছিলেন।