আজ বুধবার, ৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রূপগঞ্জে কমেছে পূজা মন্ডপ, নিরাপত্তা জোরদার

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

রূপগঞ্জ উপজেলার মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমা রাঙাতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। গতকাল ৯অক্টোবর বুধবার শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। প্রায় সব মন্ডপে প্রতিমা প্রস্তুত হয়ে গেছে। মন্ডপ সাজানোর কাজও চলছে পুরু দমে। এ উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন আকার ও সৌন্দর্য অনুযায়ী ৪০হাজার টাকা থেকে ৯০হাজার টাকা মূল্যের প্রতিমা তৈরি হয়েছে।
এবারের দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করে তুলতে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে পূজা উদযাপন পরিষদ। প্রতিটি মন্দিরে প্রতিমা স্থাপন, আলোকসজ্জা, ঢাক-ঢোল, প্যান্ডেল, মিউজিকসহ খরচ হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যেরাও প্রস্তুত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মন্ডপ সাজানো কাজ চলছে। কেউ কেউ কর্কশিটে নকশা আঁকছেন। ২/১জন আবার দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। কেউ আলোকসজ্জার কাজে ব্যস্ত। আবার কেউবা প্রতিমায় রং দেয়ার কাজ করছেন। রাঙানো হয়েছে দেবী দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশকে। বাহারি ডিজাইন কৃত্রিম গহনায় প্রতিমা আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। এখন উপজেলার মুড়াপাড়া এলাকার প্রতিমার কারিগররা ব্যস্ত। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। খড়, কাঠ, সুতা আর মাটি দিয়ে নিপুণ হাতে তৈরি করছেন প্রতিমা। দেবী দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিকসহ নানা ধরণের প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন কারিগররা। আবার কোনো কোনো বাড়িতে অনেক প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে রঙের কাজ। কাজের চাপ থাকায় পুরুষ কারিগরদের এ কাজে সহায়তা করছে গৃহবধূরা।
মুড়াপাড়া নগরের প্রতিমা তৈরির কারিগর তপন আচার্য্য জানান, প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম ও চাহিদা বাড়লেও বাড়েনি মুজুরি। তবে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যবহৃত মাটি, বাঁশ, কাঠ, খড়, রংসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় খুব একটা লাভ হয় না। দীর্ঘ ৩৪বছর ধরে এই মন্দিরে প্রতিমা তৈরি করে আসছেন তপন আচার্য্য(৬০)। তিনি তার বড় ভাই গোপী আচার্য্যে কাছ থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শিখেন।
প্রতিমার কারিগর জগদীশ আচার্য্য বলেন, আগের মতো মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার না করায় আমাদের প্রায় সারা বছরই অলস সময় কাটাতে হয়। তবে দুর্গাপূজা চলাকালীন প্রতিমা তৈরি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনো মতে সারা বছর সংসার চালাই। আবার চলতি বছর প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা প্রতিমার দাম বাড়াচ্ছে না। এতে আমাদের যে টাকা আয় হওয়ার কথা তা আর হচ্ছে না।

রূপগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গণেশ চন্দ্র পাল বলেন, এ বছর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ৪১টি মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হচ্ছে। গতবছর ৫৪টি মন্ডপে দূর্গা পূজা উদযাপন করা হয়েছিলো। আজ ৯অক্টোবর বুধবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রমা কান্ত সরকার বলেন, আজ ৯অক্টোবর বুধবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব। এ বছর ১২অক্টোবর নবমী। ১৩অক্টোবর বিজয়া দশমী অনুষ্ঠিত হবে। এবার দেবী দুর্গা আসছেন দোলায় চড়ে ফিরবেন ঘটকে করে।
রূপগঞ্জ ইসকন মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিগেন বিশ্বাস বলেন, দেবীর আগমনে বিশ্ব হবে শান্তিময়, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে উদয় হবে শুভ শক্তির এমনটাই প্রত্যাশা ।
জয় বলেন, মুরুব্বিরা সাহস পায়নি এবার পূজা করার। অর্থেরও অভাব আছে। সারা রূপগঞ্জে এবার ১৩ থেকে ১৫ টা মন্ডপ কম।
রূপগঞ্জ থানা ওসি লিয়াকত আলী বলেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরও রূপগঞ্জের সকল মন্ডপে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন করতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, দুর্গাপূজা সুরক্ষার দায়িত্ব প্রশাসনের। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবাবের দুর্গোৎসব আনন্দমুখর ও নির্বিঘ্ন করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।