রূপগঞ্জ প্রতিনিধি: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে শিল্পাঞ্চল খ্যাত নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে দলীয় মনোয়ন পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে চলছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লড়াই। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতিমধ্যে সভা, সমাবেশ ও শোডাউন করে নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছেন। দলের নেতাকর্মীদের নিজের দিকে টেনে আনার চেষ্টা করছেন। তবে এবার নেতা দিয়ে নয়, কর্মী দিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছেন। ইতিমধ্যে রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন ৩ জন ও বিএনপিতে ৩ জন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক, মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক এমপি মেজর জেনারেল (অব.) কেএম সফিউল্লাহ বীর উত্তম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহজাহান ভুঁইয়া। এছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন বলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রূপগঞ্জের সন্তান আব্দুল হাই ভুঁইয়া।
অন্যদিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং করছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।
স্থানীয়রা আওয়ামী লীগে গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক ও বিএনপিতে মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপুকে এগিয়ে রেখেছেন।
ভিআইপি আসন হিসেবে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ আসনকেই চিহ্নিত করা হয়েছে এবারও। এ আসন থেকে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হন, সেই দলই সরকার গঠন করেন। এটা বাংলাদেশ স্বাধীনের পর থেকেই শুরু হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের পদ-পদবী অধিকাংশ নেতারা রয়েছেন এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর সাথে। আবার বিএনপিতে পদ বহনকারী নেতারা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে আছেন। তুলনামূলকভাবে পদ পাওয়া নেতার সংখ্যা কাজী মনিরুজ্জামানের সাথে বেশি থাকলেও তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকেরা রয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপুর সাথে। আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থীর সঙ্গে এখানে লড়াই করতে একমাত্র যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপুকেই মনে করছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন গঠিত। এখানে নির্মাণাধীন শীতলক্ষ্যা সেতু ও ভুলতা ফ্লাইওভার সহ রাস্তাঘাট এবং শিক্ষা বিস্তারে বর্তমান এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর রয়েছে ব্যাপক ভুমিকা।
এ আসনে বর্তমান এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক) কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন তার নির্বাচনী ওয়াদা। একইভাবে এ আসনের সাবেক এমপি মেজর জেনারেল (অব.) কেএম সফিউল্লাহ বীর উত্তম অতীতের ভুলত্রুটি হিসাব ও নিকাশ করে জনসংযোগ করলেও গতবার ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়ায় এবার আর তার উপর জনগণ ভরসা করতে পারছে না। অপরদিকে মাঠ চষে বেড়ানোর চেষ্টা করছেন রূপগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শাহজাহান ভুঁইয়া। কিন্তু গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকা থাকার কারণে তৃণমূল নেতাকর্মী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. মোঃ শওকত আলীর একটি বিশাল গ্রুপ তার থেকে বিচ্ছিন্ন।
সাবেক এমপি মেজর জেনারেল (অব.) কেএম সফিউল্লাহ বীর উত্তম জানান, এ আসনে ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানেও জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এলাকায় দুর্যোগাক্রান্ত মানুষের পাশে রয়েছেন। সরকারের ত্রাণ তৎপরতার মনিটরিং করছেন। তিনি আরো জানান, সময় বলে দেবে কখন কি করতে হবে।
সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক জানান, রূপগঞ্জবাসীর স্বপ্নের কাঙ্খিত ভুলতা ফ্লাইওভার ও শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণের দাবি বাস্তবায়নের পথে। ২০১৮ সালের মধ্যে ভুলতা ফ্লাইওভার ও শীতলক্ষ্যা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। এছাড়াও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসার উন্নয়নে কাজ করে চলেছি। জনগণের কাছে দেয়া সকল দাবি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি দুইবার রূপগঞ্জ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগামীতেও তাকেই দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হবে বলে তিনি আশাবাদী।
রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভুঁইয়া জানান, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে ও দলের দুঃসময়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে আসছি। এমনকি দুইবার রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে রয়েছি। মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু জানান, তিনি সবার চেয়ে তরুণ। কর্মক্ষমতা প্রবীণদের চেয়ে বেশি। তার মালিকানাধীন গাউছিয়া মাকের্টে ৫ হাজার দোকানে রূপগঞ্জেরই ১০ হাজার পরিবারের লোকজন ব্যবসা করে আসছেন। এছাড়াও ভুলতা, মুড়াপাড়া, গোলাকান্দাইল, কাঞ্চন ও ভোলাব ইউনিয়নে রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক। বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেলে দলের বাইরেও নিরপেক্ষ লোকজন দিপু ভুঁইয়াকে সর্মথন দেবেন বলে দাবি তার।
তৈমূর আলম খন্দকার এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশায় ছোট ছোট উঠোন বৈঠক ও সভা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানান, বর্তমানে রূপগঞ্জসহ জেলা বিএনপিতে কোন্দল অনেকটা প্রকাশ্য। তবে তিনি মাঠে কাজ করতে গিয়ে জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন।
কাজী মনিরুজ্জামান জানান, যুবদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। মাঝপর্যায়ে কিছুটা দলের বাইরে থাকলেও ১/১১ এ দলের দুঃসময়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করেছি। কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকেও মূল্যায়ন পেয়েছি। জনগণের ভালবাসা নিয়ে জেলা বিএনপির দায়িত্ব পালন করে আসছি। এখন এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।