স্টাফ রিপোর্টার :
এই তো ক’দিন আগের কথা, মামলার বোঝা কাঁধে নিয়ে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে ছিলো নারায়ণগঞ্জের বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন এলাকা ছাড়া। সময়ের পরিবর্তনে এখন পালিয়ে বেড়ানো সেই বিএনপি নেতারাই মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অংশ নিচ্ছেন সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জখন জনতার আন্দোলনে রূপ নিয়েছে, তখন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য সোচ্চার হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীরা ঝাপিয়ে পরেছিলেন রাজপথে। সাধারণ মানুষের ভাষায় ‘স্বৈরাচারি সরকারের পতন ঘটেছে।’ এতে মুক্ত বাতাসে যেন প্রাণ ভরে শ^াস নিচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
প্রবীন ব্যক্তিরা বলছেন, যেই দলের নেতাকর্মীরা পুলিশের কারণে তটস্থ ছিলেন, সেই তারাই এখন পুলিশকে অভয় দিয়ে যাচ্ছেন। থানায় গিয়ে বড় কর্তাদের ফুল দিয়ে বরণ করছেন। পুলিশকে ন্যায় সঙ্গত কাজে সার্বিক সহযোগিতারও আশ^াস দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি নিজ দলের নেতাকর্মীদেরও বিশেষ নির্দেশনা দিচ্ছেন, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে।
এদিকে, দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর মামলা, গ্রেফতার এবং কারা-বরণের মধ্যদিয়ে নাভিশ^াস উঠা বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন নির্ভয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন; সময় দিচ্ছেন পরিবারের সাথে, অংশ নিচ্ছেন সামাজিক কার্যক্রমে। এতে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
কেন্দ্রীয় বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, স্বৈরাচারি হাসিনা সরকার বিএনপিকে দমন-পীড়ন করে গেছে। পুলিশ দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর নিমর্ম জুলুম অত্যাচার চালিয়েছে। ওই স্বৈরাচারি সরকারের পতনের মধ্যদিয়ে শুধু বিএনপি নয় বরং এই দেশের আপামর জনতার মুক্তি হয়েছে। এই দেশের মানুষ এখন স্বাধীনতা উপভোগ করছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য এটা আরও বড় পাওয়া, কারণ আমরা প্রায় দেড় যুগ ধরে ভয়াবহ জুলুমের শিকার হয়েছিলাম। আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের বাড়িতে ঘুমাতেও পারেনি। এখন নির্ভয়ে পরিবারকে সময় দিতে পারছে। এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে আরও বেশি জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে যাচ্ছে। নির্ভয়ে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার মত গণতান্ত্রিক অধিকার পাচ্ছে, এটাই বড় পাওয়া আমাদের জন্য।
এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, বিগত স্বৈরাচারি সরকার অবৈধ ভাবে ক্ষমতায় দিকে থাকতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে অপ-ব্যবহার করেছে। তেমনই অবৈধ সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কিছু কিছু কর্মকর্তা তাদের ফর্মায়েশ মেনে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে মামলায় জর্জরিত করে আদালতের বারান্দায় ঘুরিয়েছে, কারাবরণ করিয়েছে এবং পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। এত কিছুর পরও বিএনপির নেতাকর্মীরা হাল ছাড়েনি, কারণ তারা ন্যায়ের পক্ষে ছিল এবং মানুষের মৌলিক অধিকারের জন্য নিস্বার্থে আন্দোলন করে গেছে। ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলনের মধ্যদিয়ে সৈরাচারি সরকারের জুলুমের অধ্যায় শেষ হয়েছে। বিএনপি নেতারা এখন মুক্ত বাতাসে রয়েছে। সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে। সাংগঠনিক গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন নেতাকর্মীরাও আরো বেশি উৎফুল্ল এবং আত্মবিশ^াসী হয়ে উঠেছে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ও রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘স্বৈারাচারি সরকারের কাছ থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমাদের পূর্ন সমর্থন ছিলো। আমরাও এই সরকারের পতনের জন্য রাজপথে ছিলাম। এই সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মুক্তি মিলেছে। আমরা এখন মুক্ত বাতাস গ্রহণ করতে পারছি। দলীয় কর্মসূচি এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে বিনাবাধায় নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারছি। এতে আমাদের নেতাকর্মীরা উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে। যা আমাদের জন্য বড় পাওয়া।’