আজ বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘মাদক ব্যবসায়ী হত্যার ​বুদ্ধি দেয় ’

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রূপগঞ্জে ক্লু- লেস হত্যাকান্ডের প্রধান আসামিসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সোমবার (১১ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২ টায় সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র‌্যাব-১১দর সদর দফতরে অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর পাশা এ তথ্য জানান।

এর আগে গত ১০ অক্টোবর তাদেরকে গাজীপুরের কালীগঞ্জ ও রূপগঞ্জের ব্রাক্ষণখালী এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। প্রধান আসামি মো. আশিক মিয়া (১৯) রূপগঞ্জের দরিগুতিয়াবো এলাকার মনির হোসেনের ছেলে ও অপর আসামি মো. রমজান মিয়া (৩৫) একই উপজেলার মালখান গ্রামের মৃত আক্তারুজ্জামানের ছেলে।

লে. কর্নেল তানভীর পাশা জানান, গত ৮ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানাধীন পূর্বাচল নতুন শহরের ৭নং সেক্টরের ২১৯ নং রোড়ে ১৪২/এ বাড়ীর উত্তর পাশে ফাঁকা রাস্তার উপর অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনার খবর পাওয়ার পর একই দিনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মো. দুখাই মিয়া নামক এক ব্যক্তি গলাকাটা ও রক্তাক্ত লাশটি দেখে তার ছেলে হৃদয় মিয়া বলে শনাক্ত করে। পরে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে নিহতের বাবা মো. দুখাই মিয়া বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তিনি আরো জানান, প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহসহ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন ও ঘটনায় জড়িত আসামীদের গ্রেফতারে র‌্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১১ এর একটি চৌকস আভিযানিক তাদেরকে গ্রেফতার করে এবং ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করে।

প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, হত্যাকারী আশিক জনৈক মাদক ব্যবসায়ী মো. সবুজ (৪৪) নিকট থেকে নিয়মিত মাদক ক্রয় ও সেবন করত। একপর্যায়ে মাদক সেবন ও অন্যান্য কাজে আশিক এর অর্থের প্রয়োজন হলে সে সবুজ এর নিকট টাকা ধার চায়। তখন সবুজ ইজিবাইক চালককে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাই করার বুদ্ধি দেয় এবং বলে যে পেছন থেকে গলায় গামছা পেচিয়ে অথবা গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করলে চালক কোনভাবেই প্রতিহত করতে পারবে না। এছাড়াও সবুজ আশিককে রমজানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং বলে যে ছিনতাইকৃত ইজিবাইক রমজানের কাছে নিয়ে আসলে সে বিক্রি করে টাকার ব্যবস্থা করে দেবে।

অতঃপর আশিক ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে গত ৭ অক্টোবর রূপগঞ্জ থানাধীন ডাঙ্গা বাজার থেকে ২০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি ক্রয় করে। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী একই বাজার থেকে একই দিন আনুমানিক বিকাল ৪ টায় হৃদয় মিয়ার ইজিবাইক ভাড়া করে। এরপর আশিক কৌশলে হৃদয় মিয়ার ইজিবাইক নিয়ে আনুমানিক সন্ধ্যা ৭ টায় রূপগঞ্জ থানাধীন পূর্বাচল এলাকায় যায় এবং পিছন থেকে আশিক তার সাথে থাকা গামছা দিয়ে ইজিবাইক চালক হৃদয় মিয়ার গলায় পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। এসময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আশিক হত্যার উদ্দেশ্যে তার সাথে থাকা ছুরি দিয়ে হৃদয় মিয়ার গলায় আঘাত করে এবং গলা কেঁটে হত্যা নিশ্চিত করে। এরপর আশিক ভিকটিমের ইজিবাইক চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ী মো. সবুজ এর নির্দেশনা অনুযায়ী বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থানাধীন পাগুরা এলাকায় যায় এবং সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য রমজানের নিকট ইজিবাইকটি রেখে আসে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকারী আশিক আরো জানায় যে, মো. সবুজ ও রমজান মিয়া আন্তঃজেলা ইজিবাইক চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য।

তানভীর পাশা বলেন, এই হত্যাকান্ডের প্ররোচনাকারী ও চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য সবুজ গ্রেফতার এড়ানোর জন্য আত্মগোপন করে আছে। তাকে গ্রেফতার করার জন্য র‌্যাব-১১ এর অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তানভীর পাশা।